১৯২২ সালের ৪ই নভেম্বর। সকাল বেলা। ফারাও
রাজা চতুর্থ রামেশিসের সমাধির কাছেই
প্রত্নতাত্তিক
কার্টার দেখতে পেলেন একটি পাথুরে সিড়ির ধাপ।
১৬
টি ধাপ পরিস্কার করে দেখতে পেলেন একটি পাথরের
ফলক। তাতে লেখা ‘তুতেনখামেন’। কার্টার
দেরি না করে ইংল্যান্ডে লর্ড কনারভনের
কাছে বার্তা পাঠালেন। বার্তা পেয়ে দ্রুত
কার্নারভন
হাজির হলেন মিশরে। ২৫ নভেম্বর হাওয়ার্ড
কার্টার ও
লর্ড কানারভন বালক রাজা ফারাও তুতেনখামেনের
সমাধিগুহার দরজা খুললেন। তারা উঁকি দিয়ে দেখলেন
তাল তাল সোনার স্তুপ, আসবাব, থালা বাসনের
মাঝে মমি করা তুতেনখামেনের দেহ। বিশ্ব
ইতিহাসে এটাই ছিলো কোন মিশরীয় ফারাও এর
সম্পুর্ন
সমাধি আবিস্কারের প্রথম ঘটনা।কিন্তু আমার
আজকের লেখা তুতেন খামুন বা তার মমি নিয়ে নয়,
এটি নিয়ে আমার আগের কয়েকটি বিস্তারিত
আর্টিকেল আছে।আজকের
আলোচনা হলো মমি কি এবং কিভাবে তৈরি হয়
সেটা নিয়ে।
সারা বিশ্বে মিশরের মমি সৃষ্টি করেছে এক রহস্য
এক
বিস্ময়। কিন্তু মজার ব্যপার মমি শব্দটি কিন্তু
মিশরীয়
নয়। নামটা দিয়েছে ইরানের মানুষেরা। ধারনা করা
হয়
ফারসি মামিয়া শব্দ থেকে মমি শব্দটি এসেছে যার
অর্থ
আলকাতরা। খ্রিস্টের জন্মের ৪০০ বছর আগে
মমির
দেহে কালো রঙের এক ধরনের পদার্থ ব্যবহার
করা হতো। সে থেকেই
অনেকে ভাবতে লাগলো যে মমিগুলো সম্ভবত

বিটুমিনে চুবানো হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে এই
বিটুমিন
বা আলকাতরার ফারসি নাম মমি মৃত মানুষের
নামে পরিচিত হতে লাগলো। আবার কেউ কেউ
বলে ফারসি মুম শব্দ থেকেই নেয়া হয়েছে মমি
শব্দটি।
যার অর্থ মোম।
চলুন এবার জানি মমি করা হত কিভাবে?
খ্রিস্টপূর্ব
৪৬০ সালের দিকে ঐতিহাসিক হেরোডোটাস মিশর
গিয়েছিলেন। তার মতে ৩টি পদ্ধতিতে মমি করা
হত।
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি হলো মৃতের শরীর
থেকে অবাঞ্চিত সবকিছু বের করে দেহটি শোধন
করা।
৭০দিন পর আত্নীয় স্বজনদের
কাছে ফিরিয়ে দেয়া হতো। ২য় পদ্ধতিটা হলো মৃতের
পেটের ভিতর দেবদারু গাছের তেল সিরিঞ্জ
দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া। এর ফলে শরীরের
অন্যপথগুলো বন্ধ হয়ে যেত। এরপর কয়েকদিন
ঐভাবে রেখে দেয়া হতো। তেলের সাথে শরীরের
ভিতর
পচে যাওয়া পাকস্থলি এবং অনান্য বস্তু বের
করে আনা হতো। এরপর মৃতদেহটি আত্নীয়
স্বজনকে ফিরিয়ে দেয়া হতো। ৩য় পদ্ধতিটি ছিল
জটিল
ও খরচ সাপেক্ষ। মৃতের
নাকে আলাদা ফুটো করে লোহার হুকের সাহায্যে
ঔষধ
ঢুকিয়ে মগজ তরল করে বের করে আনা হতো।
এরপর
তলপেটের একপাশ ছুরি দিয়ে চিরে নাড়িভুড়ি বের
করে আনা হতো। শরীরের ভিতর কেবল হৃদপিন্ড
এবং কিডনিটা রেখে দেয়া হতো। এদিকে বের
করে আনা নাড়িভুড়ি তাড়ির রসে অন্যান্য
মশলা মিশিয়ে ধোয়া হতো। তারপর ন্যাট্রন দিয়ে
সেই
নাড়িভুড়ি সংরক্ষন করে রাখা হতো। ন্যাট্রন হলো
এক
ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান, সোডিয়াম বাই
কার্বনেট ও
সোডিয়াম ক্লোরাইডের মিশ্রন। পরে ঐ
নাড়িভুড়ি বোতল বা ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে শরীরের
কোন অংশে ঢুকিয়ে দেয়া হতো। এবার তাড়ি দিয়ে
শরীর
ভালো করে মুছে ধুনোর গুড়া মাখিয়ে দেয়া হতো।
এরপর
ন্যাট্রনে ভিজিয়ে ৭০ দিন রেখে দেবার পর
মমিটিকে সূক্ষ লিলেন
কাপড়ে আঠা দিয়ে পেঁচিয়ে দেয়া হতো। এভাবে শেষ
হতো মমিকরন।
১৪০০ সালে লেখা দা ইজিপ্টশিয়ান বুক অব ডেথ
বইতে বলা হয়েছে। আত্নার ২টি রূপ। একটি বা
আর
একটি কা। মৃত্যুর পর বা পাখি হয়ে উড়ে যায়
আকাশে আর কা শরীরের ভেতর অবস্থান করে।
কা অপেক্ষায় থাকে অসিরিস
দেবতা এসে করুনা করে মৃতের আত্নার সাথে
মিলবেন।
মিশরীয়রা ধারনা করত মৃত্যুর পরও মানুষের জীবন
আছে। আত্না এসে দেহ খুঁজে না পেয়ে ফিরে গেলে সেই
মৃতদেহ আর জীবত হবেনা। এ ধারনা থেকেই
মিশরীয়রা মৃতদেহকে মমি করতে শুরু করে।
এবার বলি কয়েকজন বিখ্যাত মানুষের মমির কথা।
আরজেন্টিনার ফাস্ট লেডি ইভা পেরনের বিশেষ
পদ্ধতিতে মমি করে সংরক্ষন করা হয়েছে। কমরেড
লেলিনের মৃতদেহ রেড স্কয়ারে মমি করে সংরক্ষন
করা হয়েছে। ওদিকে মাও সে তুং এর মমি সংরক্ষিত
আছে মাও সে তুং মিউজিয়ামে।
নীলনদের তীর ঘেষা মিশরের হাজার রহস্যের
মাঝে মমির রহস্য যেন এক অনবদ্য কিংবদন্তি।

আশা করি, ভালো লাগলে এরকম আরো অজানা রহস্য জানতে আমার সাইট একবার ঘুরে আসবেন।

One thought on "রহস্য ভান্ডার (পর্ব – ২) ~ মমি কি? তুতেন খামেন এর মমি রহস্য"

Leave a Reply