আমাদের জিবনের একটি অপরিহার্য
জিনিস হল স্মার্টফোন।
আর এই স্মর্টফোন চালিত হয় ব্যাটারির
দ্বারাই।

তো আপনার ব্যাটারীর ইতিহাস ও ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে জানা উচিৎ

ব্যাটারীর আবিষ্কার
গত ৪০০বছরের সবচেয়ে অভিনব ও
লক্ষ্যণীয় আবিষ্কার হল বিদ্যুৎ ।
মানুষের আয়ত্তে আসার মধ্যবর্তী সময়ের
পর থেকে ১৮০০ শতাব্দী পর্যন্ত খুবই
সীমিত আকারে বিদ্যুতের বাস্তব ব্যবহার
ছিল।

১৮৯৩ সালে শিকাগো তে বিশ্ব কলম্বিয়া
প্রদর্শনীতে ২,৫০,০০০ টি বাল্ব প্রজ্জ্বলন
এবং ১৯০০ সালে প্যারিসে আন্তর্জাতিক
মেলায় সেইন নদীর সেতু আলোকিত
করার মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহার মানুষের
দৃষ্টিগোচর হয়।

পূর্বের কোন এক সময় হয়ত বিদ্যুতের
বহুল ব্যবহার ছিল। ১৯৩৬ সালে বাগদাদে
রেলওয়ে নির্মান কাজের সময় কর্মীরা
এক প্রাগৈতিহাসিক ব্যাটারী আবিষ্কার
করে, যার নাম ছিল “পার্থিয়ান ব্যাটারী” ।
এই ব্যাটারী ছিল ২০০০ বছরের পূরানো
পার্থিয়ান বা পার্শিয়ান যুগের।
কাদামাটির পাত্রে ভিনেগার দ্রবনে তামার
সিলিন্ডারের মধ্যে লৌহ দন্ড বসিয়ে এই
ব্যাটারী বানানো হত। এটি 1.1V থেকে 2.0V
পর্যন্ত উৎপাদন করত।

সকল বিজ্ঞানী পার্শিয়ান ব্যাটারীকে
শক্তির উৎস হিসেবে মানেন না।
অনেকেই মনে করেন খ্রীষ্টপূর্ব ২৫০বছর
আগে পার্শিয়ানরা বাগদাদ শাসনকালে
এই ব্যাটারী ইলেক্ট্রোপ্লেটিং এর জন্য
ব্যবহৃত হত।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন
বেবিলনীয়রাই প্রথম এক ধরনের
গ্যালভানিক কৌশল আবিষ্কার
করে, এতে আঙ্গুরের রস ইলেক্ট্রোলাইট
হিসেবে ব্যবহারকরে জুয়েলারীতে স্বর্নের
প্রলেপ দেয়া হত।

ব্যাটারীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


বিজ্ঞানী আলেসান্দ্রো ভোল্টা ১৮০০ সালে সর্বপ্রথম কার্যকরী ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক (তড়িৎচৌম্বকীয়) ব্যাটারী উদ্ভাবন করেন।
তিনি খুব উদ্ভট একটা ব্যাটারী আবিষ্কার করেন। যেখানে কপার (তামা) এবং জিংকের (দস্তা) কিছু
প্লেট একটার উপরে আরেকটা স্তুপিকৃত করে
রাখা হয়। তারপর ভিন্ন ধাতুর সেই প্লেটগুলোকে
ব্রাইন (সোডিয়াম ক্লোরাইডের সম্পৃক্ত জলীয় দ্রবণ) সিক্ত পেপার ডিস্ক দ্বারা পৃথক করে রাখা হয়। খুব আশ্চর্যজনক ভাবে এখান থেকেই সর্বপ্রথম
ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়।

এই কপার ও জিংকের স্তুপকেই (Pile) তখন নামকরণ করা হয় ভোল্টেইক পাইল (Voltaic Pile) হিসাবে। যেটি এখনো পর্যন্ত ব্যাটারীর আদিম রূপ হিসাবে বিজ্ঞান মনষ্ক ব্যক্তিদের হৃদয়ে স্থান করে আছে। তার মানে আজ আমাদের এই ব্যাটারী জগত ভোল্টেইক পাইল এরই অত্যাধুনিক রূপ।

ভোল্টেইক পাইল (Voltaic Pile ) :: প্রথম আবিষ্কৃত ব্যাটারী

১৮৩৬ সালে বিজ্ঞানী ফ্রিডরিক ডেনিয়েল
ব্যাটারীর ডিজাইনকে আরও একটু স্ট্যান্ডার্ডাইজ করেন। তিনি দুটি পাত্রের একটাতে কপার
সালফেট দ্রবণ এবং অপর পাত্রে জিংক সালফেট দ্রবণ নেন। তারপর কপার সালফেট দ্রবণে
কপার ইলেক্ট্রোড (তড়িৎদ্বার) এবং জিংক সালফেট দ্রবণে জিংক ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে তাদেরকে
একটা তার দ্বারা সংযুক্ত করেন এবং লক্ষ্য করেন যে সেখান থেকে অবিশ্বাস্যভাবে তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে অনেক বড় আকারের তড়িৎকোষগুলো মূলত এই ডেনিয়েল সেল।
বিজ্ঞানীর নাম অনুসারেই যার নামকরণ
করা হয়েছে।

ব্যাটারী আবিষ্কারের প্রায় পৌণে
দুইশত বছর পরে অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে ব্যাটারী ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে।
কারন এই সালেই প্রথম রিচার্জেবল
ব্যটারি তৈরী হয়।

এর আগে যে ব্যাটারীগুলো তৈরী হতো
সেগুলো একবারের বেশি ব্যবহার

করা যেতো না। কিন্তু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
দুজন কৃতি বিজ্ঞানী John Goodenough এবং Koichi Mizushima লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড (পজিটিভ)
এবং লিথিয়াম ধাতু (নেগেটিভ) দিয়ে ৪ ভোল্ট
রেঞ্জের একটি রিচার্জেবল ব্যাটারী তৈরী করেন। এরপর বহু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ১৯৯১ সালে বানিজ্যিকভাবে Sony এবং Asahi Kasei কোম্পানি
এই বহনযোগ্য ব্যাটারীকে সর্বসাধারনের ব্যবহারের জন্য উন্মোক্ত করে দেয়।

আধুনিক ব্যাটারী কী

?

ব্যাটারী হলো এমন একটি তড়িৎ রাসায়নিক
কোষ যেটা তার ভেতরে রাসায়নিক
কার্যবলীকে তড়িৎ শক্তিতে পরিবর্তনের
মাধ্যমে বর্তমান সময়ে আধুনিক পোর্টেবল ডিভাইসগুলোতে শক্তি সরবরাহ করে থাকে।

ব্যাটারীকে অনেক ভাবে শ্রেণীবিন্যস্ত করা গেলেও মূলত আমাদের পরিচত সিস্টেমে আমরা এটাকে দুইভাবে আলাদা করি। তাদের একটা হলো সিঙ্গল ইউজেবল ব্যটারী (যেটাকে একবার ব্যবহার করা যায়) আর একটা হলো রিচার্জেবল ব্যাটারী (যাকে বারবার চার্জ করে পূণব্যবহার করা যায়)।

আধুনিক বিশ্বে অধিকাংশ ব্যাটারীগুলো লিথিয়াম ভিত্তিক ব্যাটারী যেগুলো বারবার চার্জ করার মাধ্যমে পূণ পূণ ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্য লিথিয়াম পলিমার ব্যাটারীও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর দাম একটু বেশি হলেও এনার্জি একটু কমই পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো লিথিয়াম আয়ন (Li-ion) ব্যাটারীগুলোতে ওভার হিটিং এবং ওভার ইউজ সেন্সর লাগানো থাকে। যেটা ব্যাটারীকে ওভার চার্জ এবং অন্যন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

ব্যাটারী কীভাবে চার্জিত হয়

?

আমি আগেই বলেছি
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীগুলো পোর্টেবল
ডিভাইসের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়। কারন
এতে রয়েছে রিচার্জেবল কোয়ালিটি এবং অনেক বেশি এনার্জি ডেনসিটি।

একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারী প্রায়
৩.৭ ভোল্ট বিদ্যুৎ তৈরী করতে সক্ষম
যেখানে একটি সাধারন ব্যাটারী সর্বোচ্চ ১.৫ ভোল্ট তড়িৎ সর্বাবরাহ করে।

যখন একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীকে
চার্জ করা হয় তখন লিথিয়াম আয়নগুলো
লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড ইলেক্ট্রোড
থেকে ইলেক্ট্রোলাইট (যে দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে) দ্বারা পরিবাহীত হয়ে গ্রাফাইট ইলেক্ট্রোডে পৌছায়.
যখন ডিসচার্জ (ব্যবহার) করা হয় তখন শুধু চার্জ এর প্রবাহটা বিপরীতমুখী হয়ে যায়।

লিথিয়াম বেইজড ব্যাটারীগুলো কিন্তু
ব্যাটারী-প্যাক হিসাবেও বাজারজাত করা হয়।
যেমন ল্যাপটপের ব্যাটারীগুলো হলো ব্যাটারী-প্যাক। ব্যাটারী-প্যাক হলো অনেকগুলো লিথিয়াম
ব্যাটারীর একটি সমন্বিত রূপ। যেখানে
একের অধিক ব্যাটারী পাশাপাশি সাজিয়ে একটি বড় ব্যাটারী তৈরী করা হয়।

তাছাড়া এরকম বড় ব্যাটারী-প্যাক তৈরী
করা হলে সেটা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ থাকে।
তাই সেখানে কিছু যন্ত্রাংশ অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়ে থাকে। সেই যন্ত্রাংশগুলো সম্পর্কে একটু ধারনা নেওয়া যাক।

তাপমাত্রা সেন্সর:
ব্যাটারী সেলগুলোর তাপমাত্রা যাতে বেশি না হয় সে কারনে
তাপমাত্রা সেন্সর লাগানো হয়। যা ব্যাটারী সেলগুলোকে জ্বলে যাওয়া কিংবা
বিস্ফোরণের কবল থেকে রক্ষা
করে।

ভোল্টেজ রেগুলেটর:
এটা মূলত ব্যাটারী
প্যাকে থাকা সার্কিটে ভোল্টেজ
রেগুলেট করে থাকে। এর মাধ্যমে
ইনপুট এবং আউটপুটগুলোতে তড়িৎপ্রবাহ
নিয়ন্ত্রন করা হয়।

ব্যাটারী চার্জ সেন্সর:
একটা ব্যাটারী
কতো পার্সেন্ট ব্যবহার করা হলো আর
কতো পার্সেন্ট খালি থাকলো সেই
পরিসংখ্যান অপারেটিং সিস্টেমকে
প্রোভাইড করা ব্যাটারী চার্জ সেন্সসের
কাজ।
অপারেটিং সিস্টেম সেই অনুযায়ী
তথ্য (উদা. 47% Full) ডিসপ্লেতে
প্রদর্শন করে থাকে। যে কারনে ব্যাটারী
নষ্ট হলে উল্টাপাল্টা পরিসংখ্যান
দেখা যায়।

কানেকটর:
শুধুমাত্র ল্যাপটপ কম্পিউটারের
ব্যাটারী-প্যাক কানেকটর থাকে। তবে
ব্র্যান্ড অনুযায়ী ভিন্নতা থাকতে পারে।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারীগুলো দীর্ঘদিন
পর্যন্ত সচল থাকতে পারে অর্থাৎ
দীর্ঘদিন পর্যন্ত চার্জ/ডিসচার্জ চক্র
চালাতে পারে।
এগুলো এতো সহজেই নষ্ট হয় না।

কিন্তু কিছু কিছু কারনে ব্যাটারী খুব
তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় x চলুন তাহলে
সেই কারনগুলো সম্পর্কে এখন জেনে নেই


ব্যাটারী রক্ষাণাবেক্ষণ


যে কারনে ব্যাটারী নষ্ট হয়
লিথিয়াম
আয়ন ব্যাটারীগুলো
যেমন উপকারী তেমনি এটারও
অপকারীতাও ব্যাপক
ব্যাটারীর মূল উপাদান লিথিয়াম কোবাল্ট
অক্সাইড খুব দাহ্য পদার্থ। যদি কোন
কারনে ব্যাটারী খুব বেশি উত্তপ্ত হয়
তাহলে এটা যেকোন মূহুর্তে আপনার
পোর্টেবল ডিভাইস সহযোগে বিস্ফারিত
করতে পারে। এ কারনে ব্যাটারীকে নিরাপদ
রাখার জন্য ব্যাটারী কী কী কারনে
দ্বারা নষ্ট হয়ে যায় সেগুলো জানতে হবে।
ক্ষতিকারক প্রভাবগুলো জানলেই কেবল
সুরক্ষিত থাকা যাবে। যাহোক, চলুন
জেনে নেই কী কী কারনে ব্যাটারী নষ্ট
হয়ে যায়।

অত্যাধিক উচ্চ তাপমাত্রা


প্রত্যেকটি ব্যাটারীর যন্ত্রাংশ এবং রাসায়নিক উপাদানগুলোর একটি নির্দিষ্ট মাত্রা
পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা থাকে।
এর বেশি উত্তপ্ত হলে ব্যাটারী তার
কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে।
এমনকি কোন কোন পর্যায়ে ব্যাটারী
বিস্ফোরণও ঘটাতে পারে।


ব্যাটারী চার্জ শূন্য করে চার্জ করা


অনেকেই মনে করেন ব্যাটারীকে চার্জ
শূন্য করে পূনরায় চার্জ করলে
ব্যাটারীর স্থায়িত্ব বাড়ে।
এটা ভয়াবহ রকমের একটি ভুল ধারনা।
এরকম করে চার্জ করলে ব্যাটারী তার
চার্জ গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
ব্যাটারী স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়ার পেছনে
এটা অন্যতম একটি কারন।

চার্জ/ ডিসচার্জ চক্রের ওভারফ্লো


একটি ব্যাটারীর একটি নির্দিষ্ট চার্জ ডিসচার্জ
সাইকেল আছে। মানে একটি ব্যাটারীকে
মোট কয়েক হাজার বার ফুল চার্জ করতে
পারবেন আবার সেটাকে ডিসচার্জ করতে
পারবেন সেটার হিসাব।
আপনি যদি অল্প অল্প করে বহুবার চার্জ
করে সাইকেল পূর্ণ করেন তাহলে সেটা
খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। তাই যখন
চার্জ করবেন একবারে ফুল চার্জ
করে ফেলবেন।

ব্যাটারী সম্পর্কিত আলোচনাটা এখানেই শেষ
করতে হচ্ছে।

টিউনটি লিখতে বিভিন্ন সাইটের সহযোগিতা
নিতে হয়েছে,যেমনঃ উইকিপিডিয়া, গুগল ইত্যাদি।

তাহলে ভুল ধারনামুক্ত জীবন যাপন করুন।

লেখাটি পড়ে যদি আপনারা একটুও উপকৃত
হয়ে থাকেন,তাহলে কমেন্ট করে জানাবেন

আমার লেখা আরেকটি টিউন যারা অনলাইনে আয় করতে চান,শুধু তারাই ক্লিক্ করবেন

. “ধন্যবাদ সবাইকে”

Leave a Reply