বহুদিন আগে বিয়ের অন্ধকারতম দিকগুলোকে নিয়ে অসামান্য এক রচনা লিখেছিলেন কালপেঁচা ওরফে সমাজতাত্ত্বিক বিনয় ঘোষ। অধুনালুপ্ত এক বাংলা দৈনিকে কয়েকটি এপিসোডে প্রকাশিত হয় সেই রচনা। তার পরে বাকিটা ইতিহাস। আজ যখন নেট-দুনিয়ায় ম্যারেজ-সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তোলপাড় কাউন্সেলিং ওয়েবসাইটগুলো তোলপাড়, তখন সেই লেখাটির কথা বার বার মনে পড়ে।

বিয়ে দিল্লির লাড্ডু, খেলেও পস্তাতে হয়, না-খেলেও। এহেন ক্লিশে কহাবতকে গায়ে লাগিয়ে ভারতবাসী ছাদনাতলাতেই শেষ পর্যন্ত নিজেকে নিয়ে যায়, এ কথা বার বার বলেছেন বুজুর্গবর্গ। তা সত্ত্বেও বিবাহ থেকে উঠে আসা গরলকে নিয়ে চর্চা বন্ধ হয়নি কখনও। সম্প্রতি বিয়ের ছায়াচ্ছন্ন দিকগুলোকে নিয়ে সরব হল এক সার্ভে-সাইট। খোলা মঞ্চে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরব হয়েছেন বিভিন্ন এথনিসিটির মানুষ। তাঁদের মন্তব্য, ব্যাখ্যা, টিপ্পনী থেকে যা উঠে এল, তা অনেকটা এই রকম—

• অ্যাডজাস্টমেন্ট। বিয়ে মানেই পারস্পরিক জমি ছাড়ার খেলা। কতটা জমি আপনি ছাড়তে প্রস্তুত, তা না বুঝে বারাত নিকলোবেন না।

• প্রথম কয়েক মাস দিব্যানন্দ, তার পরে অনুযোগ। তাও পরে অভিযোগ। এবং শেষমেশ দোষারোপ। এরই নাম বিবাহ।

• প্রথম থেকে খিটিমিটি বেধে রয়েছে। পাবলিক জ্ঞান দিচ্ছে, একটা বাচ্চা হলেই সব শুধরে যাবে। খবরদার! ওই ফাঁদে ভুলেও পা দেবেন না। সমস্যা তো মিটবেই না। উল্টে শিশুটির ভবিষ্যতে চামচিকে নাচবে।

• পুরুষরা বিয়ের আগে সব সময়ে ৪৯৮এ-কে মনে রাখবেন। ভেবে রাখবেন হাজতের ভিতরটা কেমন। বিয়ের ইচ্ছেটাই উবে যাবে।

• বিয়ের সবথেকে আঁধার দিকটা হল ডিভোর্স। না, বিচ্ছেদ বেদনা-সংক্রান্ত কোনও পিছুটান নয়। ডিভোর্স ব্যাপারটাই এত হ্যাপাময় যে, আগেভাগে ভাবতে বসলে পিঁড়ি-ফোবিয়া দেখা দেবেই।

• প্রেমজ হোক অথবা সম্বন্ধ করে, বিয়ে মাত্রেই সম্পর্ক নির্মাণের খেলা। তার জন্যে মিথ্যার উপরে মিথ্যার পাহাড় চড়বেই। সুতরাং সাধু সাবধান!

• ব্যাচেলরের একাকীত্ববোধ আর বিবাহিতের একাকীত্ববোধের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। প্রথমটা ইতিবাচক। কোথাও একটু হলেও আশা লেপটে থাকে। কিন্তু বিবাহিত যখন একা বোধ করতে থাকেন, সেটা একটা পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন।

• বিয়ের সবথেকে খারাপ দিকটা নাকি শ্বশুরবাড়ি। তাকে মহিলারে এক প্রকার নেতি-নজরে দেখেন, পুরুষরা আর এক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুটোই নেগেটিভ, সেটা মনে রাখা দরকার।

• বিয়ের আর এক অর্থ সবথেকে কাছের মানুষের কাছ থেকে সবথেকে বেশি আঘাত পাওয়া।

এর পরে যাঁরা বিয়ে করতে আগ্রহ হারালেন, তাঁরা কালপেঁচার রচনাটি সংগ্রহ করে পড়ে নিন। সেখানে সেই ভূয়োদর্শী মানুষটি কিন্তু শেষমেশ বিয়ে করতেই পারমর্শ দিয়েছিলেন। কারণ, বিয়ের আলোকিত দিকগুলির সংখ্যা নাকি এই আঁধারগুলোর চাইতে ঢের বেশি।

Leave a Reply