আমি যখন ঘরের বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ি বিছানায় তখন দেখি জোনাকি পোকারা ঘর আলোকিত করে দিয়েছে। তো আমার মনে প্রশ্ন উঠল জোনাকি পোকারা কিভাবে আলো জ্বালাই। ইন্টারনেট ও ম্যাগাজিন এর সাহায্যে আমি জানতে পারলাম কারনটা।


আমি যা জানি তা ট্রিকবিডির সবাইকে জানানোর জন্যই লিখতে বসলাম।

জোনাকি পোকার আলোর উৎস কী?



আমারা জানি একটি সাধারন বৈদ্যুতিক বাতি ৯০ শতাংশ এনার্জি খরচ করে মাত্র ১০ শতাংশ আলো উৎপন্ন করতে পারে। এজন্য একটি বৈদ্যুতিক ১০ ভাগ হয় আলোক শক্তি আর বাকি ৯০ ভাগই রুপান্তরিত হয় তাপ শক্তিতে। কিন্তু জোনাকি পোকারা তাদের শরীরের যোগ্যতা অনুসারে এবং তাদের শরীরের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে তাদের শক্তির শত ভাগই আলোয় পরিনত করতে পারে। এজন্যই জোনাকি পোকার আলোতে কোন তাপ উৎপন্ন হয়না এবং এদের আলো এতটা স্নিগ্ধ হয়। জোনাকি পোকার পিছনে বা তলপেটের শেষ দিকে Luminescent Organ থাকে, আর এই Luminescent Organ এর মধ্যে দুটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যার একটির নাম লুসিফেরাজ (Luciferase) এবং অন্য রাসায়নিক পদার্থটির নাম লুসিফেরিন (Luciferin)। লুসিফেরাজ একটি এনজাইম যা আলো ছড়ানোর কাজে সাহার্য্য করে।

সাধারন ভাবে বলতে গেলে “জোনাকি লুসিফেরিন (Firefly Luciferin) বলে এক রকমের যৌগ আছে, যা লুসিফেরাজ (Luciferase) বলে এক উৎসেচকের সাহার্য্যে এটিপি (ATP=Adinosine Triphosphate) এবং অক্সিজেনের উপস্থিতিতে ডাই অক্সিটেন (Dioxetane) গোত্রের যৌগ তৈরি করে। তারপর স্বতঃস্ফুর্তভাবে কার্বন-ডাই অক্সাইড তৈরি করে এবং সেই সঙ্গে তৈরি করে অক্সিলুসিফেরিন (Oxyluciferin) নামক জারন যৌগ। আর এই জারন যৌগটি জৈব অনুঘটক বা এনজাইমের সহায়তায় উত্তেজিত অবস্থায় সবুজে নীল আলো বিকিরন করে তারপর শান্ত হয়”। আর এভাবেই একটি জোনাকি পোকা তার আলো তৈরি করে। তবে মজার বিষয় হলো, জোনাকি পোকারা আলো জ্বালানোর জন্য কখনো কখনো তাদের শরীর কে এক বেশি উত্তপ্ত করে ফেলে যে, মাঝে-মাঝে সেই উত্তাপে নিজের শরীরই ভস্মীভূত হয়ে যায়।


এটা তো জানা হলো জোনাকি পোকা কি করে আলো জ্বালাই। কিন্তু কেনো আলো জ্বালাই? তারা কি আমার ঘর আলোকিত করার জন্য আলো জ্বালাই? না তাদের আলো জ্বালানোর কারনটি অন্যকিছু যা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে।

জোনাকি আলো জ্বালাই কেনো?

জোনাকি পোকাদের এই আলো জ্বালানোর অন্যতম প্রধান কারন হলো তাদের বিপরিত লিঙ্গকে আকর্ষন করা। অথ্যাৎ এই আলো তার ব্যবহার করে তাদের বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষন করতে। জোনাকি পোকারা মিলনের সময় তাদের শরীরের আলোর সঙ্কেত দ্বারা তারা একে অপরকে আকৃষ্ট করে থাকে। পুরূষ জোনাকি পোকা স্ত্রী জোনাকিদের কাছে আলোর সঙ্কেত দিয়ে তার মনের কথা গুলো প্রকাশ করে। আগ্রহী নারী জোনাকিটিও আলোর সংকেতের সাহার্য্যে তার ইতিবাচক উত্তর জানিয়ে দেয়। এরপর তার কম গাছ-পালা বেষ্টিত কোন যায়গায় একত্রে মিলিত হয়। তবে এই আকর্ষনের ব্যাপারটা প্রজাতি ভেদে ভিন্নও হতে পারে। যেমন, আমেরিকায় এক প্রকারের জোনাকি আছে, যাদের পুরুষ গুলো পাঁচ সেকেন্ড অন্তর-অন্তর জ্বলে ওঠে। এবং তার প্রতিক্রিয়ায় মাটিতে অপেক্ষ্যমান স্ত্রী জোনাকিটি দুই সেকেন্ড পরপর জ্বলে ওঠে। এভাবেই তার মিলন সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে। আর এজন্য জোনাকি পোকাদেরকে চলমান বাতিও বলা হয়ে থকে।

পৃথিবীতে অনেক প্রজাতির জোনাকি পোকা আছে। কিন্তু এক প্রজাতির পোকার সাথে অন্য প্রজাতির পোকার আলোক সংকেত কখনো মেলে না। তাই নিদ্রিষ্ট প্রজাতির জোনাকি পোকারাই সে সব আলোক সংকেত চেনে, এবং তার স্বজাতীয় পুরুষ পোকাদেরকে বন্ধূ হিসাবে গ্রহন করে তাদের সাথে মিলিত হয়। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চার্য হলেও সত্যিযে, তাদের এই সংকেত অন্য কোন জোনাকি চিনতে না পারলেই ভীষন বিপদ। কেননা এক প্রজাতি র মেয়ে জোনাকি পোকা কখনো অন্য প্রজতির পুরুষ পোকাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারে না। এটা ওদের সমাজের চোখে ভীষন অন্যায়। নেহায়েত এমন দুর্ঘটনা যদি কখনো ঘটে যায়, তাহলে মেয়ে পোকাটি ছেলে জোনাকিটির কাছে আসার সাথে সাথে কৌশলে ফাঁদে ফেলে মেরে ফেলে।


আমি পোস্ট টি লিখলাম ইন্টারনেট ও অনুরণন ম্যাগাজিনের সহায়তা নিয়ে। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

8 thoughts on "জোনাকি পোকার আলোর রহস্য।।"

  1. Sumon Contributor says:
    Good…post
  2. . Contributor says:
    ধন্যবাদ জানানোর জন্য।
  3. SA_Rabbi Contributor says:
    ধন্যবাদ ব্রো

Leave a Reply