আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আমাদের প্রায় সবার মধ্যেই “পারব না” বলার সমস্যাটা দেখা যায়। মূলত, যখন মানসিক শক্তির অভাব আমাদেরকে কোনো কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত সাহস দিতে ব্যর্থ হয় তখনি আমরা হুট করে “পারব না” বলে দেই। আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো এমন একজন মানুষকে নিয়ে, যার মানসিক শক্তি ও সাহস তাকে অনেক উপরে নিয়ে গেছে, যদিও তার ব্যাপক শারীরিক সীমাবদ্ধতা ছিলো।
নিক ভুজিসিক নামের এই ব্যাক্তির সম্পর্কে আমি প্রথম শুনেছিলাম ক্লাস সেভেনে থাকাকালে আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে, যদিও তখন উনার সম্পর্কে আমি অতটা যানতাম না। কিছুদিন আগে আমি ইউটিউবে উনার একটি সাক্ষাতকার দেখি। তারপরে গুগল করে উনার সম্পর্কে বেশ কিছু অবাক করা তথ্য জানতে পারি। আজ আমি আপনাদের সাথে সেই সব চমকপ্রদ তথ্যগুলোই শেয়ার করার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন শুরু করি।
১৯৮২ সালের ডিসেম্বরের ৪ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে নিকের জন্ম। জন্মের পর তার মা তাকে কোলে নিতে অস্বীকার করেন। স্কুলজীবনে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে জীবন থেকে পালানো যাবে না। জীবনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে এর সঙ্গে লড়াই করতে হবে।
১৭ বছর বয়সে নিকের স্কুলের একজন সিকিউরিটি গার্ড তাকে জনসমক্ষে বক্তৃতা দিতে উৎসাহিত করেন। ৫৩ বার তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এরপরে যখন তিনি স্টেজে উঠলেন, তখনও তাকে দেখে প্রায় সকল দর্শক-শ্রোতাই চলে যায়।
কিন্তু এর পিছনের কারণটা কি? কারণ একটাই, নিক ভুজিসিক জন্মেছিলেন হাত পা ছাড়াই। “টেট্রা এনিমেলিয়া সিনড্রোম” এর কারণে নিক হাত পা ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। WNT3 নামক জিনের কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। যদিও নিকের হাত-পা ছিলো না, তবুও শরীরের বাকি সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো।
এসবের পরেও কিন্তু তিনি থেমে যাননি, অবিরত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। অভাবনীয়ভাবে তিনি জনসাধারণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পেতে থাকেন।
তিনি তার পায়ের মাত্র ২ টি আঙুল দিয়ে মিনিটে ৪৭ টি শব্দ টাইপ করতে পারেন!
নিক একবার নয়, দু-দুবার স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
এখন পর্যন্ত তিনি ৬০ এর অধিক দেশের ৩০ লক্ষাধিক মানুষের কাছে নিজের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য পৌছে দিয়েছেন। তার লেখে প্রথম বই Life Without Limits: Inspiration for a Ridiculously Good Life প্রকাশিত হওয়ার পর ৩০ টির মতো ভাষায় অনূদিত হয় এবং ইন্টারন্যাশনাল বেস্টসেলার স্বীকৃতি অর্জন করে।
এই নিক ভুজিসিকই প্রায় ৫ লক্ষ ডলার মূল্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সফল উদ্যোক্তা।
শেষ করবো নিক ভুজিসিকের অসাধারণ একটি কথা দিয়ে, যার মধ্যে আজকের লেখার মূলকথা লুকিয়ে আছে,
আমি উঠে দাঁড়ানোর জন্য শতবার চেষ্টা করবো, যদি শতবারই ব্যর্থ হই তবুও ব্যর্থতা মেনে নিয়ে আমি আবার চেষ্টা করবো এবং বলব, ‘এটাই শেষ নয়’।
6 thoughts on "নিক ভুজিসিক: মানসিক সাহস ও শক্তির অনন্য উদাহরণ!"