ফোন তো আপনার আমার সবারই প্রয়োজন। সবারই একটা সময়ে নতুন ফোন কিনার জন্য মার্কেটে প্রবেশ করতে হয়। শুধু তাই নয়। আমাদের অনেকের মাসের পর মাস জমানো টাকা নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করতে হয়।
অথবা সবসময় নতুন প্রযুক্তির সাথে নিজেকে আপডেট রাখার উদ্দেশ্যে নিয়মিত ফোন চেঞ্জ করে নতুন ফোন নিতে থাকেন। যারা হয়তো প্রযুক্তির প্রতি বেশি দুর্বল তারা হয়তো এমনটাই করবেন। তাছাড়া আমিও প্রযুক্তির প্রতি কিছুটা দুর্বল। আমার আজকের পোস্টটি থাকছে আপনারা কিভাবে প্রযুক্তির প্রতি দূর্বল হয়ে দিনের পর দিন প্ররিশ্রম করা টাকা জমাচ্ছেন এবং সেই টাকা মার্কেটে নিয়ে লোভে পরে ঠকে আসছেন সেটার উপর।
১. সকল ফোন আপনার জন্য নয়
আপনাকে এতটা পরিষ্কার ভাবেই মার্কেটিং করে আপনার থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে যে আপনি বুঝতেও পারতেছেন না ফোনটি আপনার চাহিদা অনুযায়ী হয়েছে নাকি হয়নি। জি, কোম্পানি হয়তো কোনো এক শ্রেণীর লোকের চাহিদা সঠিকভাবে মেটানোর জন্যই ফোনটি বানিয়েছে। কিন্ত আপনিই কী সেই শ্রেণীর লোক। হয়তো আপনার চাহিদা একরকম। কিন্ত আপনি মার্কেটিং এ পড়ে অন্য এক রকমের কিনে ব্যবহার করছেন। কিন্ত এতে আপনার চাহিদা মেটাতে কষ্ট হচ্ছে।
২. ইউটিউব রিভিউ দেখবেন না
আমার আজকের এই টিউন এ আমি ফোন কোম্পানী গুলোর কিছু সিক্রেট তথ্য শেয়ার করবো। যেগুলো এক একটা হয়তো এক এক রকমের মার্কেটিং এঁর ফাঁদ পেতে দেওয়া আছে। আপনি সেই ভুল গুলোতে পা না দিলেই আপনি নিজের জন্য সঠিক ফোনটি বেছে নিতে পারবেন। আপনি ফোন সম্পর্কে যতটুকু জানেন ততটুকু বুদ্ধি দিয়েই নিজেই নিজের জন্যে সেরা ফোনটি কিনে ব্যবহার করতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যায়।
আজকের টিউনের মতো কোনও ভিডিও আপনিই কোনো ইউটিউব চ্যানেল নাও পেতে পারেন। কারণ ইউটিউবের রিভিউ করা ভিডিও গুলোও হচ্ছে ফোন কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং এর একটা অংশ। ইউটিউব চ্যানেল এঁর মালিকরা সাধারণত যখন একটা রিভিউ ভিডিও করে তখন সেটার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার পরিমান একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনের কোম্পানি এর থেকে নিয়ে থাকে। তাছাড়া তারা রিভিউ এর ১৫-২০ দিন আগের থেকেই সেই ফ্রিতেই একটি কোম্পানীর থেকে পেয়ে যায়। এবং তারা সেটা কিছু দিন ব্যবহার করার পর রিভিউ করার জন্য ভিডিও তৈরি করে থাকে।
তাই তাদের পক্ষে আমার এই টিউনের মতো এমন একটা ভিডিও বা এমন একটি ব্লগ লিখতে গেলে তাদের নিজেদের বিবেকে আটকে যায়। যেহুতু আমি কখনো কোনো রিভিউ টিউন করিনি এমনকি কোনো রিভিউ করা টিউন তৈরি করার কোনও ইচ্ছাও নেই এজন্য আমার পক্ষে এমন টিউন পাবলিশ করাটা তেমন একটা যায় আসেনা। ফোন কোম্পানিগুলোর আগের সময়ে একটা বাজে দিক ছিল যে তাঁরা রিভিউ এঁর জন্য যখন যেই ইউ টু বার দের হায়ার করত তারা তখন সেই সকল ইউ টিউ বার দেরকে সমস্ত পজিটিভ রিভিউ চালিয়ে দিতে বলত। এবং সমস্ত নেগেটিভ দিক গুলো ইগনোর করা এবং সেগুলোকেও ভালো বলে চালিয়ে দেওয়ার জন্য সাজেস্ট করত।
তবে ইউ টিউ বাররা এমনটা করতে পারতো না। তারা তাদের চ্যানেলের ভবিষ্যত এবং ভিউয়ার দের জন্যে তাড়া মিথ্যা রিভিউ দিতে পারতো না। এতে করে ফোনটি ব্যবহার এর পর ভিউয়াররা উপুযুক্ত সুবিধা না পেলে ইউটিউব চ্যানেল এর ভিডিওতে বাজে টিউমেন্ট করবে, চ্যানেলের ভিডিও গুলো আর দেখবে না, এই ভয়ে যেটা যেমন সেটার তেমনই রিভিউ করতে চাইত। তবে কোম্পানিগুলোর মার্কেটিং এর জন্য করা রিভিউ তে ফোনের খারাপ দিকটি তেমন একটা ফুটে ওঠতো না।
ফলে ভিউয়াররা রিভিউ এর জন্য বড় বড় ইউ টিউ বার দেরকে বাদ দিয়ে পরে ছোট ছোট সমস্ত ইউ টিউ বার দের ভিডিও দেখা শুরু করল। মানে যারা টাকা দিয়ে একটি ফোন কিনে রিভিউ করত তাদের ভিডিও গুলো দেখা শুরু করে দিল। কিন্ত ভিউয়ার দের এই ছোটো ছোটো ইউ টিউ বার দের রিভিউ ফলো করার ব্যাপারটিও ফোন কোম্পানী গুলো বুঝতে পারল। ফলে এবার তাড়া গোপনে গোপনে বড় বড় ইউ টিউ বার দের পাশাপাশি ছোটো ছোটো ইউ টিউ বার দের কেও রিভিউ এর জন্য ফোন পাঠানো শুরু করে দিল।
ফলে ছোটো ছোটো ইউ টিউ বাররা এতো ছোট ইউটিউব চ্যানেল থেকেও ফোন পেয়ে তারা খুবই খুশি হল। তবে এমন কয়েকটা ভিডিও পাবলিশ করার পর দেখা যাচ্ছে যে ছোটো ইউ টিউ বার দের কাছে বড়ো ইউ টু বার দের মত কোনো ভালো মানের স্টুডিও নেই। তারা রিভিউ করতেছে ঠিকই কিন্তু বড় ইউ টিউ বার দের মত ভিডিও কোয়ালিটি, সাউন্ড কোয়ালিটি, ভিডিও ব্যাকগ্রাউন্ড, মিউজিক, এডিটিং, থাম্বনেইল, ডেসক্রিপশন কোনো কিছুরই কোয়ালিটি ভাল হয় না। এখন তারা আরো একটি বড় চাল চালালো। এখন তারা নিজেরাই স্টুডিও বানালো, নিজেদের ফোন, এডিটর, ব্যাকগ্রাউন্ড, সবকিছুর ব্যাবস্থা নিজেরাই করলো এবং প্রেজেন্টেশন ও নিজেরাই লিখলো।
এখন কাজ শুধু এক এক জন ইউ টিউ বার কে হায়ার করা স্টুডিও তে নিয়ে আসা প্রেজেন্টেশন দিয়ে তার নিজেরই ইউটিউব চ্যানেল এ পাবলিশ করে দেওয়া। তাছাড়া ভিডিওর, থাম্বনেইল, টাইটেল, ডেসক্রিপশন সবকিছুই কোম্পানীর লোকেরা করে দিত। এমনকি তারাই ভিডিওকে প্রমোট করে দিত। এখন আপনারাই বলেন একজন ইউ টিউ বার কিনে নিতে তাদের কি আর কিছু লাগে? মানে তাড়া এবার কিছু কিছু বড়ো সরো ইউ টু বার বানিয়ে নিয়েছে যারা একমাত্র তাদের কথাতেই চলবে এমনকি এসব ইউ টু বাররা তাদের কোনো কথায় না বলার সাহসই পাবে না।
আপনারা হয়তো ভাবছেন যে, ফোন কোম্পানী গুলো কয়টা ইউ টিউ বার এর জন্যে কেনো এত বেশি ইনভেস্ট করছে। খুবই সহজ প্রশ্ন। আগেরকার সময়ে সবচেয়ে এড দেখানো হতো টিভি মিডিয়াতে। যেগুলো অনেক বেশি ব্যায়বহুল ছিল। কিন্ত এখনকার সময়ে ইউ টিউব এর মাধ্যমে তাদের আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি মার্কেটিং হয় এমনকি এতে আগের কার চেয়ে তিন ভাগের এক ভাগ টাকাও খরচ হয় না।
কোনো অ্যাক্টর হায়ার করতে হয়না, ডিরেক্টর লাগেনা। তাছাড়া ক্যামেরা এখন তাদের তৈরি ফোনেই থাকে। এই কারণেই খরচ কম লাগে। তাছাড়া আরো একটা কথা জানাই। রিভিউ এর ব্যাপারে যখন কোনো ইউ টিউ বার এর সাথে যখন কোনও ফোন কোম্পানী কথা বলে তখন তারা হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করে কথা বলে যেনো ইউ টিউ বার তাদের কোনো কল রেকর্ড করতে না পারে।
৩. ইউরোপ আমেরিকান দেশে ইউটিউব রিভিউ থাকে না
কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন আমাদের দেশে এইরকম তাহলে কি ইউরোপ আমেরিকান কান্ট্রি গুলোতে ফোনের মার্কেটিং হয় না। তাদের মার্কেটিং হয়। তবে ইউ টিউবে কম হয়। ওইসব দেশের মানুষ সাধারণত বাজেট ফোন পছন্দ করেন না।
তারা বেশির ভাগই নতুন এবং যত বেশি দাম যেটার সেটাই পছন্দ করে। সেক্ষেত্রে তারা বেশিরভাগ লোকজন ইউটিউব রিভিউ করেন না। সেক্ষেত্রে নতুন কোনো ফোন রিলিজ করার প্রথম দিন বিশাল এক জায়গায় অনেক বড় সরো একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে দেশের সকল ফোন প্রেমিক যাদের আসা সম্ভব তারা উপস্থিত থাকেন।
সেখানে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোম্পানির খুবই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোম্পানীর মালিক নিজেই এসে সকলের সামনে বড় পর্দার স্কিনে ফোনের রিভিউ করে। এরপর ফোন রিলিজ হলে সকলে পাল্লা দিয়ে ফোন কেনা শুরু করে।
তবে আমাদের দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী এমনটা সম্ভব নয়। এদেশে ইউটিউব রিভিউ সিস্টেমটা ঠিক নয়। তবে কিছুটা ঠিক। কারণ আমরা শুধুমাত্র ইউটিউব রিভিউ দেখেই ফোন কিনতে চাই। যেটা আমাদের করা একদমই উচিত নয়।
ফোন কেনার জন্য কিছু টিপস
আমি নিজের মতামত হিসেবে আপনাদেরকে ফোন কেনার জন্য কিছু টিপস দিয়ে দিচ্ছি। তাহলে আমাদের কি দেখে ফোন কিনা উচিত? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
১. সর্বপ্রথম আপনি আপনার নতুন ফোনটি কেন কিনবেন সেই সঠিক কারণটা নির্ণয় করুন।
২. নতুন ফোন দিয়ে কী কী করবেন সেটা নির্ণয় করুন।
৩. যেই কাজ করবেন সেটার পরিপ্রেক্ষিতে- যদি গেমিং করেন গেমিং ফোন বাছুন। সব ফোনে ভালো গেম খেলা যায় না।
৪. বাজারে নতুন লঞ্চ হবার কারণে যদি নতুন ফোনটি কিনতে যান তাহলে কিনতে হবেনা। টাকা রেখে দিন জমা করে।
আপনাকে নতুন নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া দেখানো কোম্পানীর একটা মার্কেটিং যেন নিয়মিত টাকা খরচ করতে থাকেন।
৫. আপনার যেই বাজেট থাকে সেটার মধ্যেই কিনুন। “আর একটু বাজেট বারালেই হয়তো খুব ভালো একটা” এমন চিন্তা বাদ দেন। আপনার টাকা নেওয়ার জন্যে এটাও কোম্পানির একটা মার্কেটিং।
৬. কোনো ফোনই সব দিকে ভালো হবেনা। এক দিক ভালো তো এক দিক খারাপ হবেই।
৭. অফিসিয়াল আন অফিসিয়াল চেক করার কথা মনে থাকে যেন।
৮. ইউটিউব রিভিউ দেখবেন, আগে অন্য কোথাও থেকে চয়েজ করবেন তারপরে দেখবেন, ফোনটি কিসের জন্য সেরা সেটা দেখুন, আর ইউটিউ বার এর ব্যক্তিগত মতামত দেখুন।
শেষ কথা
আমি গত ৫ বছর যাবৎ প্রতি বছরই অন্তত একবার হলেও মোবাইল এর মার্কেট পরিদর্শন করি। প্রথমত আমি ইউটিউব এ রিভিউ দেখে ফোন কিনতাম। পরবর্তিতে এক সময় আমার মনে হচ্ছিল যে, আসলে এভাবে ইউটিউব এর রিভিউ দেখে ফোন কিনা আমার পক্ষে কি সঠিক হচ্ছে? আমি কি দোকানদারদের কাছে ঠোকে যাচ্ছি?
রিভিউ দেখে ফোন কিনা কতটা যুক্তিসংগত সেটা জানার চেষ্টা করলাম। এটা নিয়ে ইন্টারনেট এ গুগলে ইউটিউব এ বিভিন্ন জায়গায় রিসার্চ করা শুরু করলাম। এসব নিয়ে রিসার্চ করতে যেয়েই আমি ফোন কোম্পানী গুলোর এইসব গোপন তথ্য গুলো পেয়ে গেলাম। এখন আমি খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ইউটিউব এর রিভিউ ভিডিও দেখি না। পোস্ট তাহলে এখানেই শেষ করে দিলাম, ধন্যবাদ।
7 thoughts on "রিভিউ দেখে ফোন কেনা নিষেধ!"