হ্যালো বন্ধুরা আশা করি সকলে অনেক ভালো আছেন। আপনাকে আমাদের ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকের পোস্টে আমি আপনাদের সাথে ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং নিয়ে আলোচনা করবো। যা আপনার অনেক কাজে আসবে তো চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের পোস্ট টি শুরু করা যাক।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে কাজের চুক্তি করে সেই কাজ শেষ করে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লায়েন্টের কাছে পৌছানোর মাধ্যমে আয় করাকে সংক্ষেপে ফ্রিল্যান্সিং বলা হয়। আপনি হয়ত ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা এখনো পরিষ্কার হতে পারছেন না। আমি এ বিষয়কে আরো সহজভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।
সাধারণত একজন ব্যক্তি লেখাপড়া শেষ করার পর কোন কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার জন্য তার সিভি সাবমিট করে। সিভি দেখার পর এবং ইন্টারভিউ শেষে কোম্পানি তাকে যোগ্য মনে করলে চাকরিতে নিয়োগ করে। তখন সেই ব্যক্তি কোম্পানিতে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত বা অন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নিয়মিত রুটিন কাজকর্ম করার মাধ্যমে মাসিক হারে একটি নির্দিষ্ট বেতন পায়।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ঠিক একইভাবে একজন ব্যক্তির যে বিষয়ে অভীজ্ঞতা রয়েছে বা যে বিষয়ে সে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে কাজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট প্লেসগুলোতে কাজের জন্য আবেদন করে। তখন ক্লায়েন্ট তার কাজের যোগ্যতা যাচাই করে উপযুক্ত মনে করলে, তাকে কাজটি করে দেওয়ার জন্য নিয়োগ করে। এ জন্য ফ্রিল্যান্সিংকে এক ধরনের জব (চাকরি) বলা হয়ে থাকে।
তবে একটি নরমাল চাকরি আর ফ্রিল্যান্সিং জব এর মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। নরমাল যে কোন চাকরিতে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে কাজ করতে হয়। তা না হলে আপনার চাকরি ধরে রাখতে পারবেন না। সেই সাথে কাজ ঠিকমত করতে না পারলে মাঝে মধ্যে বসের বকুনি খেতে হয়।
কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার এর ক্ষেত্রে সে ধরনের কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। এখানে আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। আপনার যখন মন চাইবে তখন কাজ করতে পারেন, আবার মন না চাইলে কাজ থেকে বিরত থাকতে পারেন। এই জন্য মূলত ফ্রিল্যান্সিংকে মুক্ত পেশা বলা হয় এবং ফ্রিল্যান্সিং করতে বেশিভাগ লোক পছন্দ করে।
তবে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে সফল হতে হলে আপনি খুব বেশি মুক্তভাবে কাজ করতে পারবেন না। কারণ আপনি স্বাধীনভাবে বা যখন খুশি তখন কাজ করার মনোভাব নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করলে আপনি কখনো একজন ভালোমানের ফ্রিল্যান্সার হতে পারবেন না। আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে যত বেশি সময় ব্যয় করবেন এবং ক্লায়েন্টদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে তত বেশি আয় করতে পারবেন। সেই সাথে স্বাধীনভাবে কাজ না করে একটি সাধারণ চাকরির মত টাইম মেনটেইন করে কাজ করলে ক্লায়েন্ট আপনাকে দিয়ে কাজ করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করবে।
আউটসোর্সিং কি?
এক কথায় আউটসোর্সিং বলতে নিজের সোর্সের বাহিরে অন্যকোন সোর্স হতে কোন ব্যক্তির সাথে কন্টাকের মাধ্যমে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়াকে আউটসোর্সিং বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ ফ্রিল্যান্সারদের দ্বারা করিয়ে নেয়ার নাম হচ্ছে আউটসোর্সিং। আর যারা এই আউটসোর্সিং এর কাজ করে তাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার।
তবে আউটসোর্সিং এর কাজ শুধুমাত্র ইন্টারনেট ও ফ্রিল্যান্সরদের দিয়ে করানো হয়, এমনটা কিন্তু নয়। অনলাইন ছাড়া অফলাইনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে কোম্পানিতে নিয়োগ না দিয়ে কন্টাকের মাধ্যমে কোম্পানির কোন কাজ করিয়ে নেওয়াটাও আউটসোর্সিং আওতায় পড়ে।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর পার্থক্যঃ
মনে করুন আপনার একটি ঔষধের কোম্পানি আছে। আপনার কোম্পানিতে ঔষধ প্রস্তুত সহ মার্কেটিং এর যাবতী কাজ আপনার কোম্পানির সকল কর্মচারীদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনার ঔষধ তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাত করার জন্য কোম্পানির লোক ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
কিন্তু আপনার কোম্পানির প্রয়োজনে যদি কখনো একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়, তখন সেই কাজটি আপনার কোম্পানির কর্মচারী দিয়ে করিয়ে নিতে পারবেন না। কারণ ঔষধ কোম্পানিতে যারা চাকরি করে, তারা সাধারণত ওয়েবসাইট তৈরি করার কাজ জানে না। এ ক্ষেত্রে আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার এর সাথে কন্টাক করে ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে হবে।
এখন আপনি দুটি উপায়ে একজন ওয়েব ডেভেলপারের সাথে কন্টাক করে ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন। একটি হচ্ছে সরাসরি কথা বলে ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং অন্যটি হচ্ছে অনলাইনে কোন ফ্রিল্যান্সার এর সাথে কন্টাকের মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরি করে নেওয়া। আপনি অনলাইনে করুন বা অফলাইনে করুন, উভয় ক্ষেত্রে আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপারের সাথে কন্টাকের মাধ্যমে কাজটি করিয়ে নিতে পারবেন।
এখানে আপনি বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন, যেহেতু আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপারকে আপনার কোম্পানিতে নিয়োগ না দিয়ে কাজটি কন্টাকের মাধ্যমে করে নিলেন, সেহেতু এখানে আপনার অনেক খরছ বেচে যাবে। একজন ওয়েব ডেভেলপারকে কোম্পানিতে নিয়োগ করে ওয়েবসাইট তৈরি করতে গেলে ওয়েব ডেভেলপারকে মাসে মাসে অনেক টাকা দিতে হত। অথচ কন্টাকের মাধ্যমে কাজটি করার কারনে আপনার খরছ অনেকাংশে কমে যাবে।
এখন মূল কথায় আসা যাক। এখানে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে দুটি পক্ষ রয়েছে। একটি পক্ষ হচ্ছে আপনি এবং অপর পক্ষ হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপার। এখানে আপনি ওয়েব ডেভেলপারকে আপনার কোম্পানিতে নিয়োগ না দিয়ে বাহিরের সোর্স থেকে ওয়েব ডেভেলপারকে দিয়ে যে কাজটি করিয়ে নিয়েছেন সেটি হচ্ছে আউটসোর্সিং এবং যে ব্যক্তি অনলাইনের মাধ্যমে কাজটি করে দিয়েছে, সে হচ্ছে ফ্রিল্যান্সার।
আরো সহজভাবে বলা যায় যে, আপনার কাজটি আপনার কোম্পানির লোকের মাধ্যমে না করিয়ে বাহিরের সোর্স থেকে কাজ করে নেওয়ার কারনে আপনি আউটসোর্সিং করেছেন। এখানে আপনি হচ্ছেন আউটসোর্সার এবং আপনি যাকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন তার ক্লায়েন্ট হিসেবে আপনি আউটসোর্সিং করেছেন। পক্ষান্তরে যে আপনার কাজটি করে দিয়েছে সে হচ্ছে ফ্রিল্যান্সার। অর্থাৎ যে আপনার কোম্পানির কাজটি করে টাকা আয় করেছে সে কখনই আউটসোর্সিং করছেন না। সেটা করছেন আপনি!
শেষ কথা
আশা করি সকলে বুঝতে পেরেছেন যে, ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং এর মধ্যকার পার্থক্য কি! আর আশা করি আপনারা এর পর থেকে ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং কে এক সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। আর আজকের পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
একটু সময় পেলে ভিজিট করতে পারেন আমার সাইটটি।
6 thoughts on "ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিং এর মধ্যকার পার্থক্য জেনে নিন"