আজকের সেলফোন গুলো দিনের পরে দিন আরো উন্নতি লাভ করছে—কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেলফোন গুলো নেটওয়ার্কের জন্য সিম কার্ডের উপর নির্ভরশীল। আপনার ফোনটি যতোই স্মার্ট হোক আর যতোই দামী হোক না কেন, সিম কার্ড ছাড়া এর প্রায় অর্ধেক মূল্যই নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই সিমকার্ড আসলে কি? কেন এটি এতোবেশি গুরুত্বপূর্ণ? সিম ছাড়া কি সেলফোন চালানো সম্ভব? চলুন এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
সিম কার্ড কি?
সেলফোনের জগতে প্রধানত দুই ধরনের মোবাইল বিশ্বব্যাপী গ্রাহকগনদের জন্য ব্যবহারযোগ্য; জিএসএম (GSM) (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল ) এবং
সিডিএমএ (CDMA) (কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস)। জিএসএম ফোন গুলোতে শুধু সিমকার্ড ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যেখানে সিডিএমএ ফোনে সিমের প্রয়োজন নেই। সিম-কার্ড প্রধানত একটি ছোট আকারের কার্ড—যেখানে একটি ছোট চিপ লাগানো থাকে, এবং এটি প্রত্যেকটি জিএসএম ফোন কাজ করার জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় একটি জিনিষ। সিম-কার্ড ছাড়া জিএসএম ফোন গুলো কখনোই নেটওয়ার্ক টাপ করতে পারে না। শুধু এটুকুতেই নয়, এই কার্ডের মধ্যে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবস্থান করে।
সিডিএমএ অপারেটর তাদের সকল ফোন গুলোর একটি সম্পূর্ণ তালিকা রাখে—যাতে তারা সেই ফোন গুলোকে তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার অ্যাক্সেস প্রদান করতে পারে। এই ফোন গুলোকে তাদের ইএসএন ( ইলেক্ট্রনিক সিরিয়াল নাম্বার) ব্যবহার করে ট্র্যাক করা হয়, ফলে এই ফোনে কোন সিম-কার্ডের প্রয়োজন পড়ে না। ফোন সক্রিয় করার পরে সিডিএমএ ফোন সরাসরি এর মোবাইল নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা শুরু করে।
অ্যামেরিকাতে প্রায় বেশিরভাগ মোবাইল অপারেটর সিডিএমএ ভিত্তিক সেবা প্রদান করে থাকে। তবে কোন কোন মোবাইল অপারেটর একসাথে সিডিএমএ এবং জিএসএম উভয় সেবা প্রদান করে থাকে। অ্যামেরিকাতে সিডিএমএ সেবা দেওয়া হলেও বিশ্বব্যাপী কিন্তু জিএসএম সবচাইতে বেশি জনপ্রিয়। এমনকি বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর সিটিসেল প্রধানত জিএসএম সেবা প্রদান না করার কারণে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
সিম কার্ড কীভাবে কাজ করে?
আইএমএসআই (IMSI) ( ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল সাবস্ক্রাইবার আইডেনটিটি ) এবং একটি
অ্যথন্টিকেশন কী
(যা আইএমএসআই যাচাই করে)। এই অ্যথন্টিকেশন কী টি আপনার মোবাইল অপারেটর প্রদান করে থাকে। এই সম্পূর্ণ সিস্টেমটি কীভাবে কাজ করে তা পরিষ্কার করে জানবার জন্য নিচের স্টেপ গুলো দেখুন;
সেলফোনে সিম লাগিয়ে ফোন অন করা মাত্র সেলফোন সিম থেকে আইএমএসআই গ্রহন করে এবং তা নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে দেয়—এবং অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য নেটওয়ার্কের কাছে অনুরোধ পাঠায়।
নেটওয়ার্ক সেই আইএমএসআই কে গ্রহন করে এবং অ্যথন্টিকেশন কী প্রদান করার জন্য অভ্যন্তরীণ ডাটাবেজ চেক করে।
এবার নেটওয়ার্ক একটি এলোমেলো নাম্বার উত্পাদন করে, মনেকরুন সেটি “ক”, এবং এই নাম্বারটিকে অ্যথন্টিকেশন কী এর সাথে সাইন করে আরেকটি নতুন নাম্বার উত্পাদন করে, মনেকরুন সেটি “খ”। এবার নেটওয়ার্ক নাম্বারটিকে পাঠিয়ে দেয় আপনার সিমের বৈধতা যাচায় করার জন্য।
আপনার সেলফোন নেটওয়ার্ক থেকে সেই নাম্বারটি গ্রহন করে এবং সিমের কাছে পৌছিয়ে দেয়। এই নাম্বারটির সাথে অ্যথন্টিকেশন কী যুক্ত করা থাকে এবং এটি সিমে পৌঁছে আরেকটি নতুন নাম্বার “গ” উৎপন্ন করে—এবং এটিকে আবার নেটওয়ার্কের কাছে পৌছিয়ে দেয়।
এখন যদি নেটওয়ার্ক নাম্বার “ক” সিম কার্ড থেকে আসা নাম্বার “গ” এর সাথে মিলে যায় তবে নেটওয়ার্ক আপনার সিমকে বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং সিমটির অ্যাক্সেস গ্র্যান্টেড হবে।
আর এই কারনেই সিম ব্যবহার করা এতো সুবিধা জনক, যখন আপনি এটিকে কোন নতুন ফোনে প্রবেশ করাবেন। সিমের মধ্যে নেটওয়ার্কের সাথে লগইন করার পরিচয়পত্র আগে থেকেই দেওয়া থাকে। ফলে যেকোনো ফোনই খুব দ্রুত নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে সিডিএমএ পদ্ধতিতে নতুন ফোন পাল্টানো অনেক মুশকিলের কাজ, কেনোনা এতে সরাসরি ফোনটিই নেটওয়ার্কের সাথে নিবন্ধিত থাকে।
প্রত্যেকটি সিমে একটি অদ্বিতীয় আইডেন্টিফায়ার থাকে, যাকে আইসিসিআইডি (ICCID) (ইন্টাগ্রেটেড সার্কিট কার্ড আইডেন্টিফায়ার ) বলা হয়। এই আইডেন্টিফায়ারটি কার্ডে সংরক্ষিত রাখা হয়। আইসিসিআইডি ৩টি নাম্বার ধারণ করে—একটি আইডেন্টিফাইং নাম্বার সিম কার্ড ইস্যুকারীর জন্য, আরেকটি আইডেন্টিফাইং নাম্বার থাকে অ্যাকাউন্ট তথ্যের জন্য এবং তৃতীয় নাম্বারটি প্রথম এবং দ্বিতীয় নাম্বারের এক্সট্রা সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য কাজ করে।
এছাড়াও সিম কার্ড আরো অন্য ধরনের ডাটা সংরক্ষিত রাখার ক্ষমতা রাখে; যেমন- কন্টাক্ট লিস্ট ডাটা এবং এসএমএস ম্যাসেজ। বেশিরভাগ সিমে ৩২-১২৮ কিলোবাইট ডাটা সংরক্ষিত রাখার মতো জায়গা থাকে। সিমে এই ডাটা সংরক্ষন করার জায়গা থাকার উদ্দেশ্য হলো, আপনি সিমটি এক ফোন থেকে আরেক ফোনে স্থানান্তর করলে যাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলোর ব্যাকআপ থাকে। তবে এখনকার স্মার্টফোন গুলোতে আরো অনেক আধুনিক ব্যাকআপ সিস্টেম থাকে। তাছাড়া আজকের দিনের ফোন গুলোতে ফোনের ইন্টারনাল মেমোরিতেই সকল কন্টাক্ট লিস্ট ডাটা এবং এসএমএস ম্যাসেজ জমা করে রাখে। ফলে সিম কার্ড শুধু নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্যই ব্যবহৃত হয়।
আরো টিপস & ট্রিকস পেতে
ভিজিট করবেন সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায়।
2 thoughts on "সেলফোনে সিম কার্ড কেন প্রয়োজনীয়? সিম ছাড়া কি সেলফোন চালানো সম্ভব?"