এডমিন পারলে ক্ষমা করবেন কারন পোষ্টি কপি করছি
মহাকাশ স্টেশনের খবর নামক ব্লগ থেকে
দেব দুলাল গুহ
ঘুম থেকে উঠে, আমরা প্রতিদিন রুটিন মোতাবেক এমন কিছু কাজ করি, যা করার জন্য আমাদের কোনো চিন্তাভাবনার দরকার হয় না। যেমন ধরুন, বালিশ থেকে মাথাটাকে উঁচু করে তোলা, তারপর খাট থেকে নেমে কয়েক পা হাঁটা। দিনের পর দিন একই কাজ একইভাবে করতে করতে সবাই অভ্যস্ত এতে। পৃথিবীর প্রায় সব মানুষের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা এমন। তবে পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) থাকা ছয় নভোচারীদের বেলায় ব্যাপারটা আলাদা। আরও একজন নভোচারী শিগগিরই তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন। জেনে নেওয়া যাক আইএসএসে থাকা একজন নভোচারীর দিনলিপি কেমন হয়!
ঘুম থেকে ওঠা
মহাকাশ স্টেশনে সূর্যের আলো নয়, বরং
মিশন কন্ট্রোলের কৃত্রিম আলো দেখে হয় ঘুম থেকে জাগরণ, ভোর ছয়টায়। সেখানে ঘুমানোর মানে হলো হারমোনি মডিউলের স্লিপিং ব্যাগে ঢুকে চোখ বুজে পড়ে থাকা, আর সারা রাত ভেসে ভেসে কাটিয়ে দেওয়া! তাই ‘ওঠা’, ‘নামা’ শব্দগুলো এখানে আপেক্ষিক। জাগার পর, বাকি কাজগুলো পৃথিবীর মতোই। তবু সেখানে যেহেতু সবকিছু ওজনহীন, তাই একই রকম হয়েও তা আলাদা। যেমন ব্রাশ করতে গিয়ে পানি ব্রাশের ভেতর আটকে থাকতে পারে, পেস্ট বাতাসেই ভাসতে শুরু করতে পারে!
কাজে লেগে পড়া
শরীরচর্চা
মনে হতেই পারে শূন্যে ভেসে বেড়ানো তো মজার কাজ? না, শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যেহেতু সেখানে চলাফেরায় তেমন পরিশ্রম করতে হয় না, তাই পেশি ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে, হাড় ক্ষয়ে যায়। এ জন্য দিনে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরকে ঠিক রাখতে হয়। মহাকাশ স্টেশনে আছে ব্যায়ামের তিন ধরনের যন্ত্রপাতি—একটি ট্রেডমিল, একটি ব্যায়ামের বাইক এবং সম্প্রতি যুক্ত হওয়া ‘এআরইডি’।
দুপুরের খাবার
পৃথিবীর মতো সেখানেও সপ্তাহ আছে, ছুটির দিন আছে। সাধারণ দিনে প্রত্যেকেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আলাদা জায়গায় কাজে যায়। তাই ছুটির দিন (রোববার) বাদে বাকি দিনগুলোতে একত্রে খাবার খাওয়ার সুযোগ তেমন হয় না। বাড়ির মতো সেখানেও সরিষা, মরিচ, কেচআপের বিভিন্ন ধরনের সস আছে, আছে লবণ ও মরিচ। কিন্তু এর সবই তরল, না হলে ওজনহীনতার কারণে তা স্টেশনময় ছড়িয়ে যেত! আছে টাটকা ফলও, যা প্রতিটি কার্গোর সঙ্গে পৃথিবী থেকে পাঠানো হয়। কিন্তু ফল পচনশীল, তাই তা দ্রুতই খেয়ে ফেলতে হয়।
গবেষণা
আইএসএস নিজেই একটি বিশাল গবেষণাগার। সেখানে আছে পাঁচটি ল্যাব মডিউল—রাশিয়ার দুটি, যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডেস্টিনি’, ইউরোপের ‘কলম্বাস’ ও অতিসম্প্রতি যুক্ত হওয়া জাপানের ‘কিবো’। স্টেশনের বাইরে উন্মুক্ত মহাশূন্যে পরীক্ষণের জন্যও আছে ব্যবস্থা। কঠোর শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে গবেষণা হয় বিভিন্ন পদার্থ ও জীবের, এমনকি ছোটখাটো বিস্ফোরণের ওজনহীনতা নিয়েও। পৃথিবী থেকে সুবিধাজনক স্থানে হওয়ায়, পৃথিবীর ওপর গবেষণা ও ছবি তোলার কাজটাও সেখানে হয়।
ভ্রমণে বের হওয়া
মাঝেমধ্যে স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। যেমন ধরুন স্টেশনের বাইরের কোনো অংশ মেরামতের কাজ। তখনই মহাশূন্যচারীকে ভ্রমণে বের হতে হয়, যাকে বলে এক্সট্রা-ভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটি (ইভা)। নিঃসন্দেহে এটা মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা তাঁদের জন্য। তবে এতে ঝুঁকি প্রচুর। একটু এদিক-সেদিক হলেই আছে মহাশূন্যের বিশালতায় হারিয়ে যাওয়ার ভয়। তাই কেউ একা যান না, যান জোড়ায় জোড়ায়। এ জন্য যে পোশাকটি পরতে হয়, তার নির্দেশিকাটিই ১০০ পৃষ্ঠার। শুধু পোশাক পরতেই লেগে
যায় চার ঘণ্টা! এরপর টানা আট ঘণ্টার মতো কাজও করতে হয়।
অবসরে
দিনের কাজ শেষে অবসর বিকেলে নভোচারীরা যা খুশি করার স্বাধীনতা পান। চাইলে স্লিপিং স্টেশনে গিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন ফোনে, পাঠাতে পারেন বার্তা। ইচ্ছা হলে দেখতে পারেন ছবিও। তাঁদের জীবনধারার সঙ্গে সম্পর্কিত ছবি
গ্রাভিটি ও দ্য মারটিয়ান সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে সেখানকার ছবির তালিকায়।
তবে খুব সম্ভবত, ট্রাঙ্কুইলিটি মডিউলের গম্বুজ থেকে এমন সুন্দর পৃথিবীটাকে নিজের চোখের সামনে ঘুরতে দেখাটাই নভোচারীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। শুধু দেখাই নয়, বরং সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটাও তাঁরা আনন্দ নিয়েই করেন।
সবার আগে Technology খবর পেতে পেতে জয়েন করুন HamWap.Com এর সাথে
2 thoughts on "মহাকাশ স্টেশনের দিনলিপি"