‘নেচার’ জার্নালে যাঁর
গবেষণাপত্রটি বেরনোর পর
রীতিমতো হই চই শুরু হয়ে গিয়েছে
বিশ্ব জুড়ে, মার্কিন মুলুকের
মিসৌরির সেন্ট লুই শহরে
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সেই
বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
লি হাং ওয়াং তাঁর নিবন্ধের
ভূমিকায় লিখেছেন, ‘‘আমরা সব সময়
যে আলো খালি চোখে দেখি
(Optical Light), তাকে আমাদের
শরীরের দশ সেন্টিমিটার ভেতরে
ঢোকানোটা দশ বছর আগেও ছিল
রীতিমতো দুরূহ ব্যাপার।
আর সেই শরীরে ঢোকা আলো দিয়ে
ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কোষ ও
কলার ঝকঝকে ছবি (High Resolution
Imaging) তোলাটা ছিল একেবারেই
কাল্পনিক। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে,
দৃশ্যমান আলো দিয়েই এ বার আমরা
শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ঝকঝকে
ছবি তুলতে পারব। এক্স-রে, আলট্রা
সোনোগ্রাফির আর দরকার হবে না।
ওই বছরেই ক্যালিফোর্নিয়া
ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির
বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার শাং হুই ইয়াং
মুরগির বুক ফুঁড়ে ঢুকিয়ে দিতে
দেখা আলো। আর এখন তো ইঁদুরের
কানের কোষ, কলা ফুঁড়েও ঢুকে পড়তে
পারছে দৃশ্যমান আলো। তুলছে পারছে
ঝকঝকে ছবি। বিজ্ঞানীদের আশা,
দৃশ্যমান আলো এ বার আমাদের
শরীরের অন্তরে-অন্দরে আরও বেশি
করে ঢুকে পড়তে পারবে, খুব শীঘ্রই।
এক্স-রে, আলট্রা সোনোগ্রাফির
দিন কি তবে ফুরলো?
সে দিন আর বেশি দূরে নেই।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির
বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
লি হাং ওয়াঙের সহযোগী
বাঙালী গবেষক তীর্থঙ্কর বসু
চৌধুরী ই মেলে আনন্দবাজারকে
জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের এই
আটপৌরে আলো দিয়েই এ বার
মস্তিষ্কে ধমনীর অবাঞ্ছিত ফুলে-
ফেঁপে ওঠার মতো জটিল অসুখ
(Aneurosym) সারিয়ে ফেলা যাবে।
আর অস্ত্রোপচার করতে হবে না।
কোষ, কলায় ঢুকে শরীরে জন্মানো
টিউমারও চুপসে দিতে পারবে
আটপৌরে আলোই।’’ আটপৌরে আলো
কি তবে বেশি শক্তিশালী এক্স-রে
আর আলট্রা সাউন্ডের চেয়ে?
তীর্থঙ্কর জানাচ্ছেন, ‘‘অবশ্যই বেশি
শক্তিশালী। দৃশ্যমান আলো দিয়ে
তোলা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কোষ ও
কলার ছবি এক্স-রে ও আলট্রা
ঝকঝকে হবে। কারণ, দৃশ্যমান আলোর
তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে থাকা ফোটন কণাগুলি
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কোষ-কলায়
থাকা জৈব অণুগুলির (Organic Molecules)
সঙ্গে খুব ভাল ভাবে বিক্রিয়া
করতে পারে। তার ফলে, ওই জৈব
অণুগুলো থেকে প্রতিফলিত দৃশ্যমান
আলো শুধুই যে আরও বেশি ঝকঝকে
ছবি তুলতে পারবে, তা-ই নয়, কোষ ও
কলার অন্তরে-অন্দরে জৈব অণুগুলোর
রাসায়নিক পরিবর্তন, কোষ-কলার গঠন
ও রূপান্তর, রক্তে গ্লুকোজ ও
অক্সিজেনের মাত্রা সম্পর্কেও
অনেক বেশি নির্ভুল ভাবে তথ্য
তুলে আনতে পারবে।
ধন্যবাদ
তথ্য প্রযুক্তি সেবায়, আপনাদের পাশে।