বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব উদ্যোগে নিজস্ব জনবল দ্বারা প্রস্তুতকৃত ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) অনলাইন সলিউশনের মাধ্যমে সিআইবি সংক্রান্ত যাবতীয় সার্ভিস চালু করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সেবাটি চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন পদ্ধতিতে সিআইবি রিপোর্ট প্রস্তুত করতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি করে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন প্রক্রিয়ায় রিপোর্ট জমা দিতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরশেন ব্যুরো।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, সিআইবি রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগের পদ্ধতি বিলুপ্ত করা হয়েছে। তাই নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। নতুন পদ্ধতিতে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিং করে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। নতুন এ কার্যক্রম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব উদ্যোগ-অর্থায়ন ও জনবল দ্বারা পরিচালিত হবে। ফলে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও বিদেশি ভেন্ডরের ওপর নির্ভরশীলতা থাকছে না।
আগে এ রিপোর্ট পেতে অনেক সময় ব্যয় হলেও এখন মাত্র ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিপোর্ট নিতে সক্ষম হবে। দেশিয় সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকতর তথ্য সমৃদ্ধ সলিউশন বিজনেস সংক্রান্ত যে কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। সিআইবি বিভাগ ব্যাংক এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বা লিজ গ্রহীতাদের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করে। ঋণ গ্রহণে আগ্রহী কোনো ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইতিপূর্বে ঋণ বা লিজ নিয়েছে কি-না, নিয়ে থাকলে তার অবস্থা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ঋণখেলাপি কি-না তা সিআইবি রিপোর্ট থেকে জানা যায়। প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যেক মাসে বিতরণকৃত ঋণের তথ্য সিআইবিতে পাঠাতে হয়। কোনো ঋণ হিসাব পুনঃতফসিল করা হলে তার তথ্যও সিআইবিতে পাঠানো বাধ্যতামূলক। এতোদিন বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করে এ সেবা দিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন নিজস্ব উদ্যোগে এ সলিউশন তৈরির ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্যয় হবে। বিদেশি ভেন্ডরের উপর নির্ভরশীলতা থাকছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দেশে কার্যরত সকল ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই এ সেবা নিতে শুরু করেছে। নিজস্ব উদ্যোগে এ সলিউশন তৈরীর ফলে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, বিদেশী ভেন্ডরের উপর নির্ভরশীলতা থাকছে না, পূর্বের তুলনায় অনেক কম সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিআইবি রিপোর্ট নিতে সক্ষম হবে। বিজনেস সংক্রান্ত যে কোন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে, উক্ত সলিউশন পূর্বের সলিউশনের তুলনায় অধিকতর তথ্য সমৃদ্ধ ও ব্যবহার বান্ধব এবং পূর্বের সলিউশনের অনেক সীমাবদ্ধতা নতুন সলিউশনে দূর করা হয়েছে। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে বিদেশী সফটওয়্যার ব্যবহার করে এ কাজ করা হতো।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালে বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক খাত সংস্কার প্রকল্পের আওতায় সিআইবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনাই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিআইবি প্রতিবেদনের সহায়তা নিয়ে নতুন ঋণ বিতরণ এবং ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রত্যেক মাসের বিতরণ করা ঋণের তথ্য সিআইবিতে পাঠানো বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোনো ঋণ পুনঃতফসিল করা হলেও তার তথ্য সিআইবিতে পাঠাতে হয়। কোনো ঋণ অবলোপন করা হলেও তার তথ্য সিআইবিতে রিপোর্ট করতে হয়।