আস্সালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভাল আছেন।
আশা করি আপনাদের এই টিওনটি ভাল লাগবে। আমার অফিসিয়াল পেইজে একটি লাইক দেওয়া জন্য অনুরোধ করা হল এখানে ক্লিক করুন
=আরেকটি মার্চ, একই ভেন্যু, সেই পাকিস্তান, আবারও
নখ কামড়ানো উত্তেজনার চিত্রনাট্য। শেষটায় শুধু
হাসিমুখগুলোর বদল। কান্নার অধ্যায় পেছনে ফেলে
এবার হাসল বাংলাদেশ!
স্নায়ুর পরীক্ষা নেওয়া ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে
হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৭
উইকেটে ১২৯ রান করেছিল পাকিস্তান। শেষ ওভারের প্রথম
বলে মাহমুদউল্লার চারে জিতে যায় বাংলাদেশ।
২০১২ সালের ২২ মার্চ এশিয়া কাপের ফাইনালে এই পাকিস্তানের
বিপক্ষেই স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় পুড়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ
শেষে সাকিব-মুশফিকদের কান্না কাঁদিয়েছিল গোটা দেশকেই।
২০১৪ সালের ৪ মার্চ, এশিয়া কাপে আবারও পাকিস্তানের বিপক্ষে
জয় ফসকে গিয়েছিল হাতের মুঠো থেকে।
এবার আরেকটি মার্চেই বাংলাদেশের ভাগ্যবদল। জয়রসূচক চার
মেরেই ড্রেসিং রুমের দিকে ছুটলেন মাহমুদউল্লাহ, ঝাঁপিয়ে
পড়লেন ঘাসে। তার ওপর ঝাঁপালেন দলের বাকি সবাই। চার বছর
আগে যে মাঠের সবুজ ঘাসে মিশে গিয়েছিল বাংলাদেশের
ক্রিকেটারদের কান্না, এবার সেই ঘাসেই বিজয় উৎসব।
ইনিংসের শুরুতে দু:সময়ের সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশকে
টেনেছেন সৌম্য সরকার। মাঝে স্বাগতিকরা কিছুটা পথ হারালেও
অসাধারণ দক্ষতায় শেষটা করেছেন মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফি বিন
মুর্তজা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হুমকি হতে পারতেন মোহাম্মদ
আমির। সেই আমিরকেই প্রথম ওভারে দুর্দান্ত এক ফ্লিক শটে
ছক্কা মেরে তামিম ইকবাল শুরু করেন বাংলাদেশের রান তাড়া।
ফেরার ইনিংসে তামিম (৭) টেকেননি বেশিক্ষণ। তবে টিকে যান
সৌম্য। সাব্বির রহমানকে (১৪) নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৩৩
রানের জুটিতে কাটিয়ে দেন শুরুর ধাক্কা।
বেশ কবারই অল্পের জন্য সৌম্যর ব্যাটের কানা নেয়নি বল। বল
হাওয়ায় উড়লেও পড়েছে ফিল্ডারের আশেপাশে। ভড়কে না
গিয়ে ব্যাট চালিয়ে যান সৌম্য। টাইমিংয়ে গড়বড় অনেক শটের
পাশাপাশি খেলেছেন দারুণ সব শটও।
এই সৌম্যকে ফেরাতে প্রয়োজন ছিল ‘স্পেশাল’ একটি বল।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে পাকিস্তানকে তেমনই একটি ডেলিভারি
উপহার দেন আমির। অসাধারণ ইয়র্কারে বোল্ড সৌম্য (৪৮ বলে
৪৮)।
মুশফিক-সাকিব এগোচ্ছিলেন সিঙ্গেলে ভর করে। হঠাৎই
শোয়েব মালিককে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ
মুশফিক (১২)। শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার রুচিরা পালিয়াগুরুগের সিদ্ধান্তটি
অবশ্য ছিল বাজে, বল পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে,
যেত স্টাম্পের ওপর দিয়ে।
বাংলাদেশ তখন বেশ চাপে, শেষ ৪ ওভারে প্রয়োজন ৩৫ রান।
অসাধারণ এক শটে চাপটা কমান মাহমুদউল্লাহ। শর্ট অব লেংথ
বলকে ছক্কা মারেন লং অফ দিয়ে, টুর্নামেন্টেরই অন্যতম
তবে বাজে শটে মুশফিককেও ছাড়িয়ে যান সাকিব। প্রতিপক্ষের
সেরা বোলার আমিরকে অযথাই স্কুপ করতে গিয়ে হন বোল্ড
(৮)।
বাংলাদেশ তখন শঙ্কায়। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ যে হয়ে উঠেছেন
অসাধারণ এক ‘ফিনিশার!’ আবারও খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস। আর
প্রয়োজনের সময় ৭ বলে ১২ রানের মহামূল্য এক ইনিংস
খেললেন মাশরাফি। সাকিব আউট হওয়ার পরের দুই বলে
অধিনায়কের দুটি বাউন্ডারি ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের মোড়।
নাটকীয়তার বাকি ছিল অবশ্য তখনও। ১৯তম ওভারে সামির বলে
ক্যাচ দিয়েছিলেন মাশরাফি। ফিল্ডার ক্যাচ ধরেনও, কিন্তু আম্পায়ার
ডাকেন নো! ওই ওভারেই আরেকটি নো বলে চার মারেন
মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারের প্রথম বলে আরেকটি চারে তিনিই
শেষ করেন ম্যাচ (১৫ বলে ২২*)।
এর আগে বাংলাদেশকে জয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করে
দিয়েছিলেন বোলাররা। উইকেট ছিল না ঘাস, এখনও পর্যন্ত
এবারের টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং উইকেট।
সেখানেই ইনিংসের প্রায় পুরোটা জুড়ে দারুণ বোলিং করলেন
বাংলাদেশের বোলাররা।
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার বোলিং পরিবর্তন ও মাঠ সাজানো ছিল
প্রায় নিখুঁত। দলের ফিল্ডিং ছিল অসাধারণ, মাঠে সবাই ছিলেন
প্রাণশক্তিতে ভরপুর। কিন্তু সরফরাজ আহমেদ ও ও অভিজ্ঞ
শোয়েব মালিক খাদের কিনারা থেকে টেনে পাকিস্তানকে
এনে দেন লড়ার মত রান।
ছন্দময় বোলিংয়ে প্রথম ওভারেই ইনিংসের তাল-লয় ঠিক করে
দেন তাসকিন আহমেদ। নিখুঁত লাইন-লেংথ, গতি-বাউন্স ও
আগ্রাসনে নাড়িয়ে দেন খুররম মনজুরকে। প্রথম আঘাতটা
হানেন যদিও আল আমিন হোসেন। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম
বলেই লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা অসাধারণ ডেলিভারিতে
ফেরান মনজুরকে (৬)।
ওই ওভারেই দারুণ ফ্লিকে ছক্কা মেরে চাপ কাটানোর চেষ্টা
করেছিলেন শারজিল খান। পরের ওভারে আবার দুর্দান্ত
বোলিংয়ে মেডেন নেন তাসকিন।
পেসারদের এমন দুর্দান্ত শুরুর পরও চতুর্থ ওভারে হুট করে
দলে ফেরা আরফাত সানির হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি।
ব্যাখ্যাতীত বোলিং পরিবর্তনে এর আগেও অনেকবার চমকে
দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এবারও যখন সিদ্ধান্তটির কারণ
খুঁজছেন অনেকে, দ্রুতই মিলে যায় উত্তর। প্রথম ওভারেই
শারজিলের (১০) বেলস ওড়ান সানি।
পাওয়ার প্লে ৬ ওভারে ২০ ওভারে পাকিস্তানের রান ৩ উইকেটে
২০। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেই যেটি পাওয়ার প্লেতে
বাংলাদেশের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স!
ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতা উঠে গেলেও পাকিস্তানকে স্বস্তি দেয়নি
বাংলাদেশ। বরং চেপে ধরে আরও। ফাঁস আলগা করার চেষ্টায় বলি
হন উমর আকমল, দ্বিতীয় স্পেলে ফিরেই তাসকিন ফিরিয়ে
দেন উমর আকমলকে (৪)। ১০ ওভারে পাকিস্তানের রান ৪
উইকেটে ৩৪। প্রথম ১০ ওভারে টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের
সেরা বোলিং!
কিন্তু সরফরাজ ও মালিকের জুটিতে চাপটা কাটিয়ে ওঠে পাকিস্তান।
৫০ বলে দুজনের ৭০ বলের জুটি দলকে উদ্ধার করে বিব্রতকর
ফেরেন মালিক।
গত এশিয়া কাপে ২৫ বলে ৫৯ করে বাংলাদেশকে হারানোর বড়
ভূমিকা ছিল শহিদ আফ্রিদির। পাকিস্তান অধিনায়ককে এবার রানই করতে
দেয়নি বাংলাদেশ। প্রথম বলেই আল আমিনের ফুল টসে ক্যাচ
মতো দিয়েছিলেন শর্ট থার্ড ম্যানে। সানি পারেননি সময়মতো
নিচু হতে। পরের বলেই আরেকটি ফুলটসেই আফ্রিদি ক্যাচ
দিলেন সাব্বিরকে (০)।
তবে সরফরাজের ব্যাট ঠিকই জ্বলে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ৪২
বলে ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
প্রথম ৩ ওভারে মাত্র ২ রান দেওয়া তাসকিন শেষ করেছেন ১৪
রানে ১ উইকেট নিয়ে। ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আবারও
দলের সেরা বোলার আল আমিন। তবে শেষ ১০ ওভারে
পাকিস্তান তুলে ফেলে ৯৫ রান।
সেই রানে লড়াই করেছে পাকিস্তান। কিন্তু পারেনি বাংলাদেশকে
আটকাতে। অসাধারণ জয়ে দ্বিতীয়বার এশিয়া কাপের ফাইনালে
বাংলাদেশ। যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ভারত।
পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক হিসাবের কিছু চুকানো হলো, এবার
ভারতের সঙ্গে হিসাব চুকানোর পালা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১২৯/৭ (মনজুর ১, শারজিল ১০, হাফিজ ২,
সরফরাজ ৫৮, আমল ৪, মালিক ৪১, আফ্রিদি ০, আনোয়ার ১৩; আল
আমিন ৩/২৫, আরাফাত ২/৩৫, তাসকিন ১/১৪, মাশরাফি ১/২৯)
বাংলাদেশ: ১৯.১ ওভারে ১৩১/৫ (তামিম ৭, সৌম্য ৪৮, সাব্বির ১৪,
মুশফিক ১২, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ২২*, মাশরাফি ১২*; আমির ২/২৬,
মালিক ১/৩, আফ্রিদি ১/২০, ইরফান ১/২৩)
ম্যাচ সেরা: সৌম্য সরকার (বাংলাদেশ)
পয়েন্ট তালিকা
দল ম্যাচ জয় হার পয়েন্ট রান রেট
ভারত ৩ ৩ ০ ৬ +১.৪৬৭
বাংলাদেশ ৪ ৩ ১ ৬ +০.৪৫৮
শ্রীলঙ্কা ৩ ১ ২ ২ -০.২৯২
পাকিস্তান ৩ ১ ২ ২ -০.৪৬৪
আমিরাত ৩ ০
________________________________________________________
ফেছ্বুকে আমি
_________________________________________________________
আরো ভাল টিপ্স পেতে ভিজিট করেন TipsaLL24.Com
দেখা যাক কে কার বাশ দেয়?