বহুল প্রতীক্ষার পর আজ বৃহস্পতিবার দেশে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) প্রযুক্তির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। ডিটিএইচ সেবা চালু করতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড ও বায়ার মিডিয়া লিমিটেডকে লাইসেন্স দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। পরের বছরের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স। প্রতিষ্ঠানটিতে বেক্সিমকোর সঙ্গে অংশীদার হিসেবে রয়েছে রাশিয়ার বিনিয়োগ ও শিল্প খাতের প্রতিষ্ঠান জিএস গ্রুপ। গত বছরই সেবাটি চালুর উদ্যোগ নেয় ডিটিএইচ লাইসেন্স পাওয়া দুই প্রতিষ্ঠান। তবে নানা জটিলতায় সেবাটি চালু করতে পারেনি তারা। অবশেষে দুই বছর পর আজ রাজধানীর লেকশোর হোটেলে দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড এ সেবা চালু করতে যাচ্ছে।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ডিটিএইচের কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি প্রথম বছরে ৩ লাখ ও পরবর্তী প্রতি বছর নতুন ৪ লাখ গ্রাহককে এ সেবার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। তবে নানা জটিলতায় লক্ষ্যমাত্রা অনুয়ায়ী নির্ধারিত সময়ে সেবাটি চালু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি এ সেবা চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এশিয়া ব্রডকাস্ট স্যাটেলাইট (এবিএস) গ্লোবাল লিমিটেডের সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি করেছে বেক্সিমকো। বারমুডাভিত্তিক স্যাটেলাইট অপারেটর এবিএস ছয়টি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠানটির সেবার আওতায় রয়েছে বিশ্বের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যা।

ডিটিএইচের মাধ্যমে কেবল অপারেটরের সংযোগ ছাড়াই সরাসরি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেখা সম্ভব। সেটটপ বক্স, এলএনবি ও ক্ষুদ্রাকৃতির একটি অ্যান্টেনার সমন্বয়ে সরাসরি বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল দেখতে পাবেন গ্রাহকরা। ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে চ্যানেলগুলোর ছবি ও শব্দ আসে কেবল সংযোগের চেয়ে দ্রুত। এছাড়া সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে ডাউনলিংকের মাধ্যমে পাওয়া প্রতিটি চ্যানেলের ছবি ও শব্দের মান থাকে একই রকম।

এদিকে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু ১’-এর ব্যবসায়িক পরিকল্পনা অনুযায়ী স্যাটেলাইটের আয়ের অন্যতম প্রধান খাত নির্ধারণ করা হয়েছে ডিটিএইচ সেবা। তবে স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই ডিটিএইচ লাইসেন্স দেয়ায় এ খাত থেকে প্রাক্কলিত আয়ের বিষয়টি ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে মনে করছে বিটিআরসি। এজন্য নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই মধ্যে ডিটিএইচ সেবা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের যন্ত্রাংশের বিষয়ে অপারেটরদের প্রতি একটি নির্দেশনা জারি করেছে কমিশন। এতে বলা হয়েছে, এসব যন্ত্রাংশের মূল্য সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে। আর নির্দিষ্ট সময়ের পর এ যন্ত্রাংশ চাইলে ফেরত দিতে পারবেন গ্রাহক।

এ বিষয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ. রহমান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কোন বৈধ ডিটিএইচ অপারেটর নেই। টিভি দর্শকদের কয়েকটি ক্যাবল অপারেটর ও টিরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন চ্যানেলের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশী দর্শকদের কোন স্থানীয় টিভি অনুষ্ঠান উপহার না দিয়ে ভারতীয় ডিটিএইচ অপারেটররা অবৈধভাবে ডিটিএইচ সিগন্যাল ব্রডকাস্ট করছে। তিনি আরও বলেন, মানসম্মত বৈধ টিভি সার্ভিস নিয়ে যদিও তেমন কোন আলোচনা নেই। কিন্তু ১৬ কোটির বেশি মানুষের দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক পাবে বলে প্রত্যাশা করছে বেক্সিমকো কমিউনিকেশনস লিমিটেড। জিএস গ্রুপের বিদেশী প্রকল্প পরিচালক সের্গেই দোলগোপোলস্কি বলেন, বালাদেশে প্রথমবারের মতো ডিটিএইচ চালুর পথ মসৃণ করতে ২০১৪ সালে ‘হেড-অ্যান্ড’ ও ‘আপ-লিঙ্ক’ ইন্সটল করা হবে। পুরো বাংলাদেশেই আমাদের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে।

একনজরে ডিটিএইচ: 

ডিটিএইচ সেবার মাধ্যমে একটি স্যাটেলাইট সিস্টেম ব্যবহার করে সরাসরি গ্রাহকের আঙ্গিনায় টিভি সিগন্যাল পৌঁছে দিয়ে মাল্টি-চ্যানেল টিভি প্রোগ্রাম দেখার সুযোগ করে দেয়া হবে। ডিটিএইচ সংযোগ দিতে ব্রডকাস্টিং কোম্পানি গ্রাহককে একটি ডিশ ও রিসিভার সেট প্রদান করবে যা, ডিশের মাধ্যমে সিগন্যাল গ্রহণ করে রিসিভিং সেটের সাহায্যে দর্শকরা টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেল দেখতে পারবেন। ওই সেটের মাধ্যমেই শুধু গ্রাহকেরা কাঙিক্ষত চ্যানেলগুলো দেখার সুযোগ পাবেন। ডিটিএইচ’র অনেকগুলো সুবিধার একটি হচ্ছে গ্রাহকরা নিজেরাই পছন্দনীয় চ্যানেলগুলো বাছাই করতে পারবেন। কেবল অপারেটরের পছন্দে চ্যানেল দেখতে হবে না। কেবল সংযোগের মাধ্যমে এখন গ্রাহকেরা যে মানের ছবি দেখে থাকেন তার চেয়ে এর মান হবে অনেক উন্নত। বর্তমানে আমরা যে কেবলের মাধ্যমে টিভি দেখি তাতে সিগন্যাল ব্রেক হয়। অপরদিকে ডিটিএইচ প্রযুক্তিতে সিগন্যাল ব্রেক হয় না বলে উন্নতমানের সেবা পাওয়া যায়। গ্রাহক শুধু তার পছন্দমতো চ্যানেলগুলো ক্রয় করে মাসিক খরচের পরিমাণও কমিয়ে আনতে পারেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে টাটা স্কাই, রিলায়েন্স, ডিশ টিভি, এয়ারটেলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ডিটিএইচ সেবা দিচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানের সেট টপ বক্স পাওয়া যায়। অবৈধ হলেও রাজধানীর অনেক বাড়িতে ডিটিএইচ সংযোগ রয়েছে। দেশে বৈধ ডিটিএইচ চালুর মাধ্যমে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

Leave a Reply