সন্ত্রাসবাদের পাশাপাশি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই সরকার বার বার তাগিদ দিয়ে বন্ধ করাতে চেয়েছিল অনিবন্ধিত সিম কার্ড। বায়োমেট্রিক সিম ভেরিফিকেশনের সময়সীমা ৩১ মে শেষ হওয়ার পর বিটিআরসি জুন মাসের প্রথম চার দিন সিম বক্সের মাধ্যমে ৭,৭০৯টি অবৈধ কল সমাপ্তি সনাক্ত করে। এর মধ্যে শুধুমাত্র টেলিটক সিম থেকে চারদিনে কল সমাপ্ত করা হয়েছে যথাক্রমে ১,৬৮১, ২,১৮৪, ১,৮২৮ এবং ১,৯২০টি। সেখানে গ্রামীণফোন এবং রবি থেকে দুটি এবং বাংলালিংক থেকে ১১টি অবৈধ কল সমাপ্ত করা হয়েছে। অবৈধ কল আগমন অবসানে সরকার সিম কার্ড বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পুনরায় রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এখনও আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ কল দেশে প্রবেশ করছে। আর এর বেশিরভাগ অবৈধ কলই আসছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটকে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) গত কয়েকদিন যাবৎ সিম বক্স ডিটেকশন টুলের সাহায্যে ফোন কল পর্যবেক্ষণ করে সনাক্ত করেছে যে, বাংলাদেশে আগত অন্তত ৯৫ শতাংশ আন্তর্জাতিক কলই অবৈধ। আর এর বেশিরভাগ কলই টেলিকট সিমের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। বায়মেট্রিক সিম ভেরিফিকেশনের সময়সীমা ৩১ মে শেষ হওয়ার পর বিটিআরসি জুন মাসের প্রথম চার দিন সিম বক্সের মাধ্যমে ৭,৭০৯টি অবৈধ কল সমাপ্তি সনাক্ত করে। এর মধ্যে শুধুমাত্র টেলিটক সিম থেকে চারদিনে কল সমাপ্ত করা হয়েছে যথাক্রমে ১,৬৮১, ২,১৮৪, ১,৮২৮ এবং ১,৯২০টি। সেখানে গ্রামীণফোন এবং রবি থেকে দুটি এবং বাংলালিংক থেকে ১১টি অবৈধ কল সমাপ্ত করা হয়েছে। তাছাড়া এয়ারটেল এবং সিটিসেল সংযোগে কোন অবৈধ কলই প্রবেশ করেনি। অন্যদিকে পিএসটিএন অপারেটর র্যাঙ্কসটেল সংযোগে ৩ ও ৪ জুন যথাক্রমে ৪২ ও ৩৯ টি অবৈধ কল কাটা হয়েছে। এব্যপারে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টেলিটক অবৈধ কল সমাপ্তির মতো কোন ধরণের অবৈধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত নয়। এটি রাষ্ট্রায়াত্ত টেলিকম প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক ধরণের চক্রান্ত; কেননা কিছু বেসরকারি অপারেটর সর্বদায় টেলিটককে ধ্বংস করতে চায়।’ দেশের ৬টি অপারেটরে অবৈধ কল প্রবেশ সনাক্তকরণে বিটিআরসি এসআইজিওএস (পূর্বে মেউক্কি সল্যুশনস) প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে জানিয়ে টেলিটক প্রধান বলেন, ‘ভিওআইপি’র মাধ্যমে কোন অবৈধ কল সনাক্ত হলেই টেলিটক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া প্রত্যেকদিন অন্তত ৫ থেকে ৬ হাজার সিম ব্লক করছি আমরা।’ তিনি বলেন, ‘অবৈধ কলে ব্যবহৃত সনাক্তকৃত সব সিমই ব্লক করছি আমরা। তবে ৪৫ শতাংশ সিমই এখনও পর্যন্ত রেজিস্টার্ডভূক্ত না হওয়ায় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তাই অবৈধ কল সমাপ্তির পিছনে থাকা ফোন নম্বরগুলোর মালিকদের সনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।’ প্রযুক্তি বিশষজ্ঞরা বলছেন, সিমে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন, অবৈধ কল সমাপ্তকারীদের সনাক্ত করার প্রক্রিয়া সহজতর করেছে। তারা বলছেন, এই অবৈধ কল সমাপ্তিকরণের কারণে সরকারের রাজস্ব থেকে প্রত্যেক বছর বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা লোকসান হচ্ছে। বিটিআরসি’র তথ্যানুযায়ী, আইজিডব্লিউএস’র মাধ্যমে প্রত্যেকদিন ৮০ মিলিয়ন বৈধ কল সমাপ্ত হয়ে থাকে যেখানে অবৈধভাবে ৪০ মিলিয়ন কল সমাপ্ত হয়ে থাকে। অবৈধ কল সমাপ্তিকরণে কমিশনের নির্দেশনা না মেনে চলায় টেলিটককে সম্প্রতি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিটিআরসি। ঐ সময় বিটিআরসি সনাক্ত করে, টেলিটকের ১২৫৬টি সিম অবৈধ ভিওআইপি’র মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়। নিয়মানুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম প্রতিষ্ঠানটির সিমগুলো ব্লক করার কথা ছিল। অথচ, অপারেটরটি এ ব্যপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ঐ কলগুলো অবৈধ ভয়েস-ওভার-ইন্টারনেট প্রোটোকলের (অিওআইপি) মাধ্যমে করা হয়, যেখানে সিম বক্সগুলো বৈধ চ্যানেল যেমন, ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়েস (আইজিডব্লিউএস) বাইপাস করার জন্য ব্যবহার করা হয়। ভিওআইপি গেটওয়ে ইনস্টলেশনের একটি অংশ হিসেবে সিম বক্স ব্যবহার করা হয়। এটি সিম কার্ডগুলোর নম্বর ধারণ করে যা গেটওয়ের সাথে সংযুক্ত থাকে, কিন্তু এর প্রস্তুতিকরণ এবং সংরক্ষণ ভিন্ন থাকে। একটি সিম বক্সে ভিন্ন ভিন্ন অপারেটরের ইনস্টলড সিম কার্ড থাকতে পারে; এটি সিম কার্ডগুলোকে বিভিন্ন জিএসম গেটওয়েসহ বিভিন্ন স্থানে পরিচালনা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। সিম বক্স মোবাইল অপারেটরদের রাজস্বে লোকসান ঘটাতে বড় ভূমিকা পালন করে। সিম বক্সের কারণে অপারেটররা মিলিয়ন মিলিয়ন মিনিট লোকসান করে থাকে। বিটিআরসি রেগুলেটরি বডি কর্তৃক ইনস্টলকৃত সিম বক্স ডিটেকশন টুল ডিভাইস স্থানীয় নম্বর দিয়ে অবৈধ ভিওআইপি’র মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল সনাক্ত করতে পারে। বাংলাদেশে বিটিআরসি এসআইজিওএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। এটি বিশ্বের অন্যতম অ্যাডভান্সড এবং স্টেট-অব-দ্য-আর্ট সিম বক্স ডিটেকশস টুলস। বিশেজ্ঞরা জানান, দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক অবৈধ ভিওআইপি কল সমাপ্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক সবচেয়ে সন্দেহজনক অবস্থানে রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশের তিন অপারেটর- গ্রামীনফোন, বাংলালিংক এবং রবি ভিন্ন অপারেটর থেকে তাদের সিস্টেমে কল প্রবাহ বিশ্লেষণপূর্বক কল সমাপ্তিকরণের বিষয়ে বিটিআরসিকে অফিশিয়ালি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে আন্তর্জাতিক কলের অবৈধ সমাপ্তিতে টেলিটক জড়িত থাকার ব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়। চিঠিতে বিটিআরসি’র এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ২৮ মে থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত টেলিটকের ৩৮,৬১৩ টি সিম থেকে সন্দেহজনক কল করা হয়। ঐ একই সময়ে এয়ারটেলের ৬,০৮০, রবির ১,২১৭, বাংলালিংকের ৫১১ এবং গ্রামীনফোনের ৪৭২টি সিম থেকে সন্দেহজনক কল করা হয়েছিল। চিঠিতে বলা হয়, ‘টেলিটকের নেটওয়ার্ক থেকে সন্দেহজনক সিমগুলোকে ডিসকানেক্ট করার নিমিত্তে নেটওয়ার্কটিতে স্ব-প্রবিধান প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করছি আমরা।’ বিটিআরসি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ২০১৫ সালের জুনে অবৈধ কল সমাপ্তির জন্য প্রায় ১২০,০০০ টেলিটক সিম কার্ড ব্লক করে। বিটিআরসি’র তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ১৩১.৯৫ মিলিয়ন সক্রিয় সিম গ্রাহক আছেন যার মধ্যে ১১৬ মিলিয়ন গ্রাহক ইতোমধ্যে বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। গ্রামীনফোনে ৩১ মে পর্যন্ত ৪৯.৬ মিলিয়ন সিম পুনরায় নিবন্ধন হয়েছে। বাংলালিংকে ২৭.৮ মিলিয়ন, রবিতে ২০.২ মিলিয়ন, এয়ারটেলে ৭.৪ মিলিয়ন, টেলিটকে ২.৩ মিলিয়ন এবং সিটিসেলে ২.২ মিলিয়ন সিম পুনরায় নিবন্ধন হয়েছে। বাকি ২৩.৮৪ মিলিয়ন সক্রিয় গ্রাহকরা ব্লক হয়েছেন। তার সাথে ৭৬.১৫৯ মিলিয়ন নিষ্ক্রিয় সিম আছে।
Share:
One thought on "অবৈধ ভিওআইপিতে টেলিটকই শীর্ষে"