ট্রফিটি দেখতে সাদামাটাই। কিন্তু এই
ট্রফিটি হাতে নিয়েই জানান দেওয়া হয়
ফুটবলারদের ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের। এই
একটি ট্রফিই সারা বছর ধরে আগ্রহের
কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকে সারা বিশ্বের
ফুটবল-প্রেমীদের। এই ট্রফিটি নিয়েই কত জল্পনা-কল্পনা, কত ঝগড়া-বিবাদ, কতই না
মনোমালিন্য! আবার এই ট্রফিকে ঘিরেই
আনন্দ-উচ্ছ্বাস কিংবা রোমান্টিকতার
বাড়াবাড়ি। ট্রফিটির নাম ব্যালন ডি’অর।
ফুটবলারদের ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। এই ব্যালন ডি’অর পুরস্কারকে ঘিরে আজ রাতে
জুরিখে সমবেত হবেন বিশ্ব ফুটবলের প্রায়
সবাই, কেউ সশরীরে, কেউ টিভি কিংবা
মনিটরে চোখ রেখে। তীব্র আগ্রহ নিয়ে
তারা তাকিয়ে থাকবেন মঞ্চের দিকে।
যেখান থেকে ঘোষণা দেওয়া হবে সেই নামটি। যাঁর হাতে উঠবে সেই শ্রেষ্ঠত্বের
ট্রফি। যে ট্রফি নিয়ে এত উত্তেজনা, এত আগ্রহ, তাঁর
আদ্যোপান্ত ইতিহাসটা কী আমরা জানি?
আমরা কী জানি ফুটবলের এই একটি পুরস্কারই
গত অর্ধ-শতাব্দীরও বেশি সময় জুড়ে বুঁদ করে
রেখেছে ফুটবল দুনিয়াকে! আজ থেকে ৬০ বছর আগে ফ্রান্সের ফুটবল
সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবল পুরস্কারটি প্রচলন
করেছিল। কেবল সেরা ইউরোপীয়
ফুটবলারকে পুরস্কৃত করার সেই উদ্যোগটিই
কালের বিবর্তনে এসে দাঁড়িয়েছে আজকের এই
অবস্থানে। ফ্রান্স ফুটবল-এর মতোই ১৯৯১ সালে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা
চালু করে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার
ফিফা বর্ষসেরা। ফ্রান্স ফুটবল-এর ব্যালন
ডি’অর আর ফিফার বর্ষসেরা—দুটি ভিন্ন
উদ্যোগ এক হয়েই ২০১০ সাল থেকে পরিচিত
হয় ফিফা ব্যালন ডি’অর নামে। ১৯৫৬ সালে ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর
সম্পাদক গ্যাব্রিয়েল হান্তেরই
মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল এই পুরস্কার। তিনি
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সকল ক্রীড়া
সাংবাদিকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন
ইউরোপের সেরা ফুটবলার। খুব ঘরোয়াভাবে ভোটাভুটি করে প্রথমবার
সেই পুরস্কারটি তুলে দেওয়া হয়েছিল
স্ট্যানলি ম্যাথুসের হাতে।
এই পুরস্কারটি দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন জনের
হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে একটা নির্দিষ্ট

বিবেচনাকে কেন্দ্র করে। পুরস্কারটি পেতে একজন খেলোয়াড়কে অবশ্যই ইউরোপীয় হতে
হবে, একই সঙ্গে খেলতে হবে ইউরোপের
কোনো লিগে। এই নিয়মের কারণেই
ফুটবলের ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের এই
পুরস্কারটি যেমন কখনোই হাতে নিতে
পারেননি ফুটবলের দুই জীবন্ত কিংবদন্তি পেলে আর ম্যারাডোনা। পেলে তো
ইউরোপেই খেলতে আসেননি। ম্যারাডোনা
ইউরোপের ক্লাব ফুটবল মাতিয়ে গেলেও
দক্ষিণ আমেরিকান হওয়ায় এই পুরস্কারের
জন্য বিবেচিত হন।
ফ্রান্স ফুটবলের উদ্যোগের বহু বছর পর ফিফা উদ্যোগ নেয় বছরের সেরা ফুটবলারকে
সম্মানিত করার। ১৯৯১ সালে ফিফার
উদ্যোগে চালু হয় ফিফা বর্ষসেরা
ফুটবলারের পুরস্কার। নিয়ম করা হয় কয়েকজন
সেরা ফুটবলারকে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট
কমিটির তৈরি করা তালিকা থেকে ভোটাভুটির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হবে
ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারকে। ভোট দেবেন
প্রত্যেক জাতীয় দলের অধিনায়ক, কোচ ও
একজন নির্বাচিত সাংবাদিক। প্রথমবার
ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হন ৯০
বিশ্বকাপজয়ী জার্মান ফুটবল দলের অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউস।
ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার চালুর
চার বছর পর ১৯৯৫ সালে ফ্রান্স ফুটবল
তাদের পুরস্কার-পদ্ধতিতে একটু পরিবর্তন
আনে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, পুরস্কারটি অ-
ইউরোপীয় খেলোয়াড়দের জন্যও উন্মুক্ত করে দেওয়ার। তবে শর্ত রাখা হয়, তাদের
খেলতে হবে ইউরোপের লিগে। এই শর্তে
প্রথম অ-ইউরোপীয় ফুটবলার হিসেবে ব্যালন
ডি’অর জেতেন লাইবেরিয়ার জর্জ উইয়াহ।
সমস্যাটা বাঁধে এরপর। কোন বিশ্ব ফুটবলের
সেরা বর্ষসেরার পুরস্কার? ব্যালন ডি’অরের এত দীর্ঘ ইতিহাস, কিংবদন্তি সব
খেলোয়াড়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নাম; অন্য
দিকে ফিফা বর্ষসেরা অত পুরোনো না হলেও
উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্বজুড়ে
২০০টির মতো জাতীয় দলের কোচ-
অধিনায়ক-সাংবাদিক ভোট দিচ্ছেন। এ পুরস্কার জেতা মানে তো এক অর্থে সারা
বিশ্বকেই জেতা।
এর মধ্যে ২০০৭ সালে ফ্রান্স ফুটবল এক
যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যালন ডি অ’র
উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সবার জন্যই।
ইউরোপ-ইউরোপের বাইরে যেকোনো ফুটবলারই মনোনীত হবেন এই পুরস্কারের
জন্য—ফ্রান্স ফুটবলের এমন ঘোষণায় বড়
ধরনের সমস্যায় পড়ে যায় ফিফা। তখন থেকেই
তারা ফ্রান্স ফুটবলের সঙ্গে একটা
সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
আরও একটি সমস্যা দেখা গেল। দেখা গেল, ব্যালন ডি’র যে খেলোয়াড়টি জিতছে, তার
হাতেই উঠছে ফিফা বর্ষসেরার পুরস্কার।
পরপর পাঁচবার এ ঘটনা ঘটার পর একটি নিয়ে
যেন কৌতূহল অনেকটাই কমে গেল। এ তো
জানা কথাই-জিতবে কে! সমস্যা মিটিয়ে
ফেলা হলো দুটো পুরস্কার ‘এক’ করে ফেলায়। অনেক আলোচনার পর অবশেষে ২০১০ সালে
একীভূত হয় দুটো পুরস্কার। ফ্রান্স ফুটবলের
ব্যালন ডি’অর আর ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার
এক হয়ে নাম ধারণ করে ‘ফিফা ব্যালন
ডি’অর।’
ভোট-ব্যবস্থায়ও আসে বড় পরিবর্তন। সিদ্ধান্ত হয় এই পুরস্কারের জন্য প্রথমে
ফিফার টেকনিক্যাল কমিটি এবং ফ্রান্স
ফুটবলের বিশেষজ্ঞরা ২৩ ফুটবলারের একটি
প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। এই ২৩ জনকেই ভোট দেয় ভোটাররা। প্রত্যেক
ভোটারই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দের
তিনজনকে বেছে নেয়। সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট
পাওয়া ফুটবলারই হয় বর্ষসেরা। ‘সাসপেন্স’
তৈরির জন্য মূল পুরস্কার ঘোষণার আগে
সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া সংক্ষিপ্ত তিনের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে বলা হয়
না, এই তিনজনের মধ্যে সেরা কে।
এই সাসপেন্সটা তৈরি হয় বলেই এ নিয়ে এত
কৌতূহল থাকে। এবারও যেমন লিওনেল মেসি
জিততে চলেছেন বলে বেশির ভাগই
মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু দলীয়ভাবে ব্যর্থ হলেও ব্যক্তিগতভাবে নিজের সেরা
মৌসুম কাটানো রোনালদোর কি আসলেই
কোনো আশা নেই?
উত্তর জানতে আজ বাংলাদেশ সময় রাত দশটা
থেকে আপনাকেও চোখ রাখতে হবে। টিভি,
নয়তো মনিটরের পর্দায়!

কম্পিউটার এক্সপার্ট ও পিসি গেমার ভাইয়েরা এই গ্রুপ টায় জয়েন করুন। দাওয়াত রৈলো।

Leave a Reply