সাব্বির রহমান চুপ করতে বললেই হবে! কেউ
আজ চুপ করে থাকবে না। আজ গলা
ফাটানোর দিন।
ফেব্রুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, ফেব্রুয়ারি। প্রথম
দুটি ফেব্রুয়ারির সঙ্গে শেষেরটির
পার্থক্য আছে। প্রথম দুটির সঙ্গে মিশে
আছে হতাশা, এবারেরটির সঙ্গে
অনিঃশেষ আনন্দ! দুই বছর আগে এই
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুটি টি-
টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের একদম কাছে
গিয়েও পারেনি বাংলাদেশ। হেরেছিল
একেবারে শেষ বলে। এবার সেই ধাঁধাটির
সমাধান করে ফেলল বাংলাদেশ।
সিরিবর্ধনের ক্যাচ লুফে নিয়ে সাব্বির
যতই মুখে আঙুল দিয়ে চুপটি করে থাকতে
বলুন, গ্যালারির তা মানতে বয়েই গেছে!
এই সাব্বিরের ব্যাটই বড় ভূমিকা রাখল
বাংলাদেশের জয়ে। তাঁর ৫৪ বলে ১০টি
চার ও তিন ছক্কায় খেলা ৮০ রানের
ইনিংসটির সৌজন্যে প্রথমে ব্যাট করে
১৪৭ তুলল বাংলাদেশ। জবাবে শ্রীলঙ্কা ৮
উইকেটে তুলল ১২৪। ২৩ রানের এই জয়
বাংলাদেশকে পয়েন্ট টেবিলে নিয়ে
গেল আগে থেকেই শীর্ষে থাকা ভারতের
সমান পয়েন্টে। শীর্ষ দুটি দল সরাসরি
ফাইনালে যাবে। এই জয়ের গুরুত্ব তাই
অপরিসীম।
সাব্বির ছাড়াও আরেক জনের কথা বলতে
হবে। সাকিব আল হাসান। জাতীয় দলে
নতুনের আবাহন শুরু হতেই এক সময়ের
বাংলাদেশের নিয়মিত হাল ধরা সাকিব
যেন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছেন। অনেক
দিন পর ব্যাটে-বলে সাকিব বেশ হাসলেন।
ব্যাটে ৩২ করার পাশাপাশি বল হাতে ২১
রানে নিলেন দুই উইকেট। শেষের তিন
ওভারে বিপদ হতে পারতেন যিনি, সেই
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে ফেরালেন দারুণ
একটা ক্যাচ নিয়েও। ব্যাটে-বলে-
ফিল্ডিংয়ে আজ অনেক দিন পর সার্থক এক
নম্বর অলরাউন্ডারের দেখা পেল
বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহর কথাও তো বলতে হবে। তাঁর
১২ বলে অপরাজিত ২৩ রানের ইনিংসটা না
হলে বাংলাদেশ শেষের দিকে এত পুঁজি
পেত না। মাহমুদউল্লাহ তার চেয়েও বড়
ভূমিকা রাখলেন বোলিংয়ে। শ্রীলঙ্কার
স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন। আবারও
তাসকিনের বলে ক্যাচ ফেললেন সৌম্য।
সেই চান্ডিমাল দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছিলেন, ১
উইকেটে ৭৬-ও তুলে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা।
এমন সময়ই ৩৭ বলে সমান রান তোলা
চান্ডিমালকে ক্যাচ বানিয়েছেন বোলার
মাহমুদউল্লাহ।
মজার ব্যাপার হলো, ক্যাচটা নিলেন
তাসকিনই। তাসকিন অবশ্য আরেকটি ক্যাচ
ফেলেছেন। ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি
মাহমুদউল্লাহও। বেশ কয়েকটি রান আউটেও
ভাগ্যকে পাশে পায়নি বাংলাদেশ।
বারবার তাই গত ফেব্রুয়ারির স্মৃতিই উঁকি
দিয়ে যাচ্ছিল। এর আগে শ্রীলঙ্কার
বিপক্ষে ১৮১ আর ১৬৬ করেও হারতে
হয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু
বাংলাদেশের বোলাররা লাগাম মুঠো
থেকে বেরোতে দিলেন না। সময়ের সঙ্গে
সঙ্গে রান আর বলের সমীকরণটা মাপা
বোলিংয়ে আরও কঠিন থেকে কঠিনতর
করে তুললেন।
মাত্র এক উইকেট পেলেও মুস্তাফিজ যেমন
চার ওভারে দিলেন মাত্র ১৯ রান। সবচেয়ে
বড় কথা, তিনটি ওভারই করেছেন ১৪, ১৭ আর
১৯তম ওভারে। বিশেষ করে শেষের দুটি
ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে শেষ ওভারে
শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে গেলেন এক রকম প্রতি
বলে ছক্কার মারার সমীকরণে। শেষ
ওভারে যে ৩২ দরকার ছিল তাদের!
শেষ ওভারটিতে এবার আর কোনো নাটক
হওয়ার সুযোগ দিলেন না আল-আমিন। শেষ
ওভারে বরং প্রথম তিন বলে ২ উইকেট তুলে
নিয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দিলেন। শেষ
পর্যন্ত ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সফল
বোলার তিনিই।
বোলাররা সবাই কাঁধ মিলিয়েই লড়েছে।
ব্যাটিংয়ে আলোটা কেড়ে নিয়েছেন
একা সাব্বির। এক সময় মনে হচ্ছিল
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম
বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরি পেয়েই
যাবেন। যখন আউট হয়েছেন, তখনো ২৪ বল
বাকি ছিল। সম্ভাবনা ছিলই। কিন্তু নিজের
সেঞ্চুরির চেয়ে দলের স্কোরটার দিকে
বেশি বেশি তাকিয়েছেন বলেই মারতে
গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়লেন।
বাংলাদেশের ইনিংসে তৃপ্তির জায়গা
সাকিব আল হাসানের রানে ফেরা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ করেছেন। চতুর্থ
উইকেটে এই দুজনের ৮২ রানের জুটিতেই
দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্কোর।
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বিনোদনদায়ী
বিষয়গুলোর একটি। চোখে লেগে থাকার
মতো ১০টি চার, উচ্ছ্বাসে আত্মহারা করে
দেওয়ার মতো তিনটি ছক্কা দিয়ে
সাজানো ইনিংস। সাকিব রয়ে-সয়ে পরিণত
ব্যাটিং করে অভিজ্ঞতার মূল্য
বুঝিয়েছেন। বারবার স্ট্রাইকে সাব্বিরকে
এনে দিচ্ছিলেন। তাঁর নিজের স্ট্রাইক রেট
এক শর নিচে থাকলেও ও প্রান্তে
সাব্বিরের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়েই এই
জুটি ওভারে এগারোর ওপরে রান তুলেছে।
সাব্বির সেঞ্চুরির দিকে ভালোমতোই
ছুটছিলেন। কিন্তু তামিম ইকবালের
বাংলাদেশের পক্ষে করা সর্বোচ্চ ৮৮
রানের রেকর্ডটাও পেরিয়ে যেতে
পারলেন না। সেঞ্চুরি থেকে ২০ রান দূরে
থাকতে দুষ্মন্ত চামিরাকে উড়িয়ে মারতে
গিয়ে আউট হয়ে গেলেন। একটু আক্ষেপ তাই
রয়েই গেল।
আজ একক কোনো নায়ক নেই। ম্যাচ
সেরার পুরস্কার একজনকে দিতে হয় বলেই
দেওয়া। নয়তো আজ ম্যাচ সেরা তো ‘টিম
বাংলাদেশ’ই! আজ বাংলাদেশের গলা
ফাটানোরই দিন!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৭/৭ (সাব্বির ৮০,
সাকিব ৩২, মাহমুদউল্লাহ ২৩*, মিঠুন ০,
সৌম্য ০, মুশফিক ৪, নুরুল ২, মাশরাফি ২;
চামিরা ৩/৩০, ম্যাথুস ১/৮, কুলাসেকারা
১/৪৪)
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১২৪/৮ (চান্দিমাল
৩৭, জয়াসুরিয়া ২৬, শানাকা ১৪; তাসকিন
০/১৯, আল আমিন ৩/৩৪, সাকিব ২/২১,
মুস্তাফিজ ১/১৯, মুর্তজা ১/১৭,
মাহমুদউল্লাহ ১/১৪)
ফল: বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সাব্বির রহমান।