অগাধ বিস্ময় নিয়ে সাদমানের
দিকে তাকিয়ে আছে নিয়াজ।
সাদমান নিচু হয়ে একটা টেবিলের
মাঝখানে ঝুকে দাড়িয়ে আছে। টেবিলের
উপরে ছড়ানো রয়েছে একটা বিশাল ম্যাপ।
নিয়াজ দাড়িয়ে আছে সাদমানের
সামনাসামনি টেবিলের ওপাশে। অবিশ্বাস
এবং দ্বীধা দুইটিই তার চেহারায় স্পষ্ট।
সাদমান ম্যাপের ওপরে টর্সের আলো
ফেলে কিছু
একটা খোজার চেষ্টা করছে। টর্সের সরু
আলোটা গিয়ে পড়ছে পৃথীবির বিভিন্ন দেশের
মানচিত্র রেখার ওপর।
এবার সাদমান সোজা হয়ে দাড়িয়ে নিয়াজের
দিকে তাকাল। ঠোটের আগায় একটু
মুচকি হাসি এনে বলল,”আমার কথা কি তোর বিশ্বাস
হচ্ছে না?”
“ইমপসিবল! বিশ্বাসের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
তুই
ভাবলি কি করে এরকম একটা আজগুবি কথা বললেই
আমি বিশ্বাস করব?” উত্তেজিত
কন্ঠে কথাগুলো উচ্চারন করল নিয়াজ।
“আমি কোনো আজগুবি কথা বলছি না। তুই অন্তত
আমার
কথাটাবিশ্বাস কর।”
“তোর কথা আমি কিভাবে বিশ্বাস করব?
এটা কি কখনো সম্ভব।”
“প্লিজ, তুই আমার কথাটা বিশ্বাস কর। এই দ্বীপটার
কোনো নাম দেয়নি কেউ। খুব ছোট্ট একটা
দ্বীপ।
তবে খুব অদ্ভূদ।”
গতকাল রাতে হুট করে নিয়াজের বাসায় উপস্থিত হয়
আদনান। তারা দুজন খুব ভাল বন্ধু।
কলেজে একসাথে পড়ত। তারপর দুজন একই
ইউনিভার্সিটিতে একত্রিত হয়।
আরো দুইমাস আআইল্যান্ডে।র থেকে
নিখোজ হয়ে যায়
সাদমান। তাকে কোথাও খুজে পাওয়া যায় না।
অনেকেই ধারনা করেন অদৃশ্য কোনো
চোরাবালির অতল
গহ্বরে বুঝি অকালে হারিয়ে গেছে সাদমান।
আজ রাতে দরজার ওপাশে সাদমানকে দেখে ভূত
দেখার
মত চমকে ওঠে নিয়াজ। তার বিশ্বাস হচ্ছিল না-
উদ্ভট চেহারার এই ব্যক্তিটি সাদমান নাকি অন্য
কেউ।
নিয়াজকে দেখে সেই পুরাতন স্টাইলে দাত
বের
করা হাসি হাসতে হাসতে নিয়াজ বলে, “কিরে
কেমন
আছিস?”
এবার নিয়াজের মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। দুই হাত
প্রসারিত করে সাদমানকে জড়িয়ে ধরে।
“কোথায় ছিলি এতোদিন? তোকে অনেক
খুজেছি।
কি হয়েছিল তোর?”
আরো অনেক কিছু বলতে যাচ্ছিল নিয়াজ। তাকে
এক
হাত উচু করে থামতে বলল সাদমান।
“সেসব পরে বলব। আমার খুব খুধা পেয়েছে।
আমাকে কিছু খেতে দিবি।”ক্লান্ত স্বরে বআইল্যান্ডে।
“অবশ্যই অবশ্যই। আয়, ভেতরে আয়।”
নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে সাদমানকে উদ্দেশ্য

করে নিয়াজ বলল, “যা বাথরুম থেকে ফ্রেশ
হয়ে আয়।
আমি টেবিলে খাবার রেডি করছি।”
” তুই কেন? কাকিমা কোথায়?”
“মা বাসায় নেই।”
দশমিনিট বাদে বাথরুম থেকে ফিরে এলো
সাদমান।
তাকে এখন কিছুটা মানুষের মত লাগছে।
কোনো দ্বীধা না করে খাবারের টেবিলের
খাবার
গুলোর উপর ঝাপিয়ে পড়ল সাদমান। কয়েক
মূহুর্তের
মধ্যেই টেবেলের সব খাবার সাদমানের
পেটে জায়গা করে নিল।
এক ঘুমে রাত পার করে দিল সে। তার ঘুম ভাঙল
পরের
দিন দুপুরে।
বিকেলের দিকে সাদমানকে আসল প্রশ্নটা করল
নিয়াজ, “তোর কি হয়েছে বলতো? আমিতো
কিছুই
বুঝতে পারছি না।”
উদাসীন চোখে শুন্যের দৃষ্টিতে তাকাল
সাদমান।
নিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল, “সিগারেট আছে?”
সিগারেটের প্যাকেটটা সাদমানের
দিকে বাড়িয়ে দিল নিয়াজ। প্যাকেট
থেকে একটা সিগারেট বের করল সাদমান।
সিগারেটটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলল,
“কক্সবাজারে গিয়েছিলাম বেড়াতে। আমি একা না।
আমার পুরো ফ্যামিলী। আমি, মা , ভাইয়া, ভাবী,
আমার দুই ভাতিজা-ভাতিজী। বেশ সুন্দর কাটছিল
দিনগুলো।”
এবার সিগারেটটা জ্বালিয়ে টানতে শুরু করল
সাদমান। তারপর আবার বলতে শুরু করল, “তুইতো
জানিস
রাতের বেলা সমুদ্রে মুক্তার মালা জ্বল-জ্বল
করে।”
নিয়াজ বলল,”মুক্তার মালা না।
এগুলো হচ্ছে ফসফরাস।”
সাদমান বলল, “হ্যা জানি, ফসফসারাস। অনেক
রাতে আমি ফসফরাস দেখতে একা একা বাইরে
বের
হতাম। সমুদ্রের কিনারা ঘেষে একা একা হাটতাম।
হাতে হাটতে অনেক দুরে চলে যেতাম।
একা একা এভাবে সমুদ্র দেখাটা অদ্ভূদ
একটা অনুভুতি।”
এবার প্যাকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের
করল
সাদমান। সিগারেট টানতে টানতে আবার বলতে শুরু
করল সাদমান,”একদিন
রাতে আমি এভাবে হাটতে হাটতে অনেক
দুরে চলে গেলাম। সমুদ্রের ভিতরে আমি একটা
গর্জন
শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখি একটা বোট
বো-
বো শব্দে তীরের দিকে আসছে। আমি তখন
গা ঢাকা দিলাম। বোট থেকে নেমে এলো
তিনজন
মানুষ। তারা সোজা হাটতে শুরু করল। আমিও পিছু পিছু
তাদেরকে অনুসরন করলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর
তারা একটা বাড়ির সামনে থামল। মোবাইল বের
করে তাদের মধ্যে একজন লোক কার সাথে
যেন
কথা বলল। একটু পরে একটা মোটা লোক
বাড়ি থেকে বরে হয়ে এলো। তারপর বলল,”কি
রাজন
খান, সব ঠিক আছে তো।”
রাজন খান নামের লোকটি জবাব দিল,”জ্বি বস, সব
কিছু ঠিক আছে।”
“বোট এনেছিস?”
“জ্বি বস, এনেছি।”
“গুড। কাজটা কিন্তু খুব সাবধানে করতে হবে। এই
দ্বীপের কথা আর কে কে জানে?”
“বেশি লোক জানে না। এই দ্বীপটা নিয়ে
অনেক
ভায়ানক গল্প আছে। তাই ভয়ে কেউ ধারে
কাছেও যায়
না। তবে স্থানীয় কেউ কেউ জানে। আমরা
তাদের মুগ
বন্ধ করার ব্যবস্থা করব।”
“কাজটা আমাদেরকে খুব সাবধানে করতে হবে।
আমি চাই না- পৃথীবির মানুষ এই
দ্বীপটা সম্পর্কে জানুক।তোমরা এই
দ্বীপটা সম্পর্কে আরো ভয়াবহ গল্প রটিয়ে
দাও
যাতে কেউ এই দ্বীপের পাশ দিয়ে যেতেও
ভয় পায়।”
এক টানা অনেকক্ষন কথা বলার পর থামল সাদমান।
আবার বলতে শুরু করল সাদমান,” সেদিন রাতে
এইসব
কথা শোনার পর আমার মনে সেই
অজানা দ্বীপটা সম্পর্কে কৌতুহল জাগে। পরের
দিন
আমি খোজ নেওয়া শুরু করি। মানুষকে প্রশ্ন
করি এখানের সব চেয়ে ভয়ানক দ্বীপ কোনটা।
অনেক
কষ্টে একটা মাঝিকে রাজি করাই।
মাঝি আমাকে চারপাশ থেকে দ্বীপটা ঘুরিয়ে
দেখায়
কিন্তু দ্বীপে যেতে রাজি হয় না।
ফিরে এসে একটা বোট ভাড়া নিয়ে আমি একা
সেই
দ্বীপে যাই। অদ্ভূদ একটা জিনিস।
বাইরে থেকে সেটা বুঝার উপায় নেই।
দ্বীপটা সম্পূর্ন লাল। সব কিছু লাল। গাছপালাও
লাল। কিন্তু দুর থেকে তাকালে মনে হবে সাধারন
একটা দ্বীপ। সেই দ্বীপে অনেক কিছু
আছে যার
কথা পৃথীবির কেউ জানে না। সেদিন আমি দ্বীপ
থেকে ফিরে আসি। রাতে কিছু লোক
এসে আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায়।”
সাদমান টেবিলের উপরে ম্যাপ
জড়িয়ে নিয়াজকে দ্বীপটার অবস্থান দেখাল। এক
পর্যায়ে নিয়াজের হাত চেপে ধরে বলল,”তুই
আমার
কথা বিশ্বাস কর। এই দ্বীপটাকে আমাদের
রক্ষা করতে হবে। এটা আমাদের বাংলদেশেরর
সম্পদ।
নিয়াজ সাদমানের কঁধে হাত রেখে বলল,”
আমি বিশ্বাস করি। আমি যাব তোর সাথে সেই
রেড
আইল্যান্ডে।

আরো দারুন সব গল্প পরতে গল্প প্রেমিরা আমার সাইটে আসুন

Leave a Reply