আই ও টি ডিভাইস। জ্বি, আজকের টিউনের মুল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আই ও টি ডিভাইস। এই বিষয়ে হয়ত আপনারা কেউ কেউ জানেন। কিন্ত আপনারা বেশির ভাগ লোকজনই এই বিষয়টির ব্যাপারে জানেন না। তাহলে চলুন আজকেই আমরা এই চমত্কার প্রযুক্তি সম্পর্কে জেনে নেই।
আই ও টি ডিভাইস এর ব্যাপারে জানতে প্রথমে আই ও টি এর একটি উদাহরন ভালমত বুঝতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে। কারন এই প্রযুক্তি এখনো আমাদের ধারে কাছেও আসেনি। তাই আমাদের কাছে ইহার যেকোনো উদাহরণ আমাদের কাছ অবিশ্বাস্য বলে মনে হবে। যদিও এই প্রযুক্তি বাস্তবে পরিণত করার জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ২০ বছর আগে থেকেই গবেষণা করে আসছে।
মনে করুন, আপনি রাতে ফোনে কোন এক নিদ্দিষ্ট সময়ে আ্যলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পরলেন। কিন্ত সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠলেন আ্যলার্ম বাজার কিছুক্ষন আগেই। উঠে একটু ব্যাল্কুনিতে গেলেন সকালের ফ্রেশ হাওয়া গ্রহন করার জন্য। ততক্ষনে আপনার আ্যলার্ম এর সময় হয়ে গেল। কিন্তু আপনার আ্যলার্মটি বাজলো না।
আপনি কি বলতে পারবেন আ্যলার্ম কেন বাজেনি? আপনি আ্যলার্ম ভুল দিয়েছেন এজন্য? মোটেই না। আপনার আ্যলার্ম দেওয়া একদম সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।
তারপরেও আ্যলার্ম কেন বাজেনি? আ্যলার্ম না বাজার কারন হচ্ছে আপনার ঘরে আই ও টি সিস্টেম অন থাকার ফলে মোবাইল সহ অন্যান্য সকল আই ও টি ডিভাইস গুলো জানতে পেরে গেছে যে আপনি ঘুম থেকে উঠে গেছেন। জি, আই ও টি এর মাধ্যমে আপনার ঘরের সমস্ত জিনিস আপনার অবস্থা দেখতে ও বুঝতে পারবে। এবং সেই অনু্যায়ি তারা নিজেদের কাজ বেসিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেই করে ফেলবে।
যেমনিভাবে আপনার ফোন নিজেই বুঝতে পেরেছিল যে, আপনি আপনার আ্যলার্মটি ঘুম থেকে উঠার জন্য দিয়েছেন। তাই আপনি ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথেই আপনার ফোন নিজেই নিজের আ্যলার্ম বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর হবে আরও মজার কান্ড। আপনি আপনি বাথরুম এ যেয়ে দেখবেন যে, আপনার ব্রাশ আপনার জন্য পেস্ট লাগিয়ে প্রস্তুত। এবং কল থেকে আপনার বাবহারের জন্য পানি প্রস্তুত হচ্ছে।
এবং যেই পানি আপনার জন্যে রেডি করা হচ্ছে সেটাও আবার আপনার পছন্দমত। আপনি কুসুম পরিমান গরম পানি ব্যবহার করতে চাইলে কল ও বালতি মিলে আপনার জন্য গরম পানি প্রস্তুত করবে। আর ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে চাইলে সেটাও কল প্রস্তুত করে দিবে। বাথরুম থেকে বের হলে আপনার অফিসের জামা কাপড় আপনার জন্যে প্রস্তুত হয়ে থাকবে।
এমনিভাবে আমি একের পর এক উদাহরণ দিতেই থাকব তো দিতেই থাকবো কিন্তু আপনারা ক্রমেই বলতে থাকবেন যে, পোস্টদাতা পুরোই পাগল হয়ে গেছে। যেমনিভাবে বাংলাদেশে মোবাইল ফোন চালু হবার আগের সময়ে হয়েছিল।
সাধ্বিনতা যুদ্ধের আগে খুব কম সংখ্যক লোকই এদেশে মোবাইল ফোন সম্পর্কে জানত। এবং যদি তারা মোবাইল ফোন চালু হবার ভবিষ্যত বানি কাউকে বলত তখন কেউ সেটা বিশ্বাসই করত না। উল্টো তাদেরকেই সকলে পাগল বলত।
আই ও টি কী?
এতক্ষণ আপনারা আই ও টি এর উদাহরণ সহ আই ও টি ডিভাইস কেমন হবে আর কি কাজ করবে সেটা বুঝতে পেরেছেন। এখন আপনারা আই ও টি এর সংজ্ঞা জানতে পারবেন। আই ও টি এর পূর্নরূপ হচ্ছে ইন্টারনেট অফ থিংস (Internet Of Things). অর্থাৎ, জিনিসপত্রের ইন্টারনেট।
বর্তমানে আমরা যেই ইন্টারনেট ব্যবহার করি সেটা হচ্ছে মানুষের ব্যাবহৃত ইন্টারনেট। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে বিজ্ঞানিরা অন্য এক রকম ইন্টারনেট আবিস্কার করার চেষ্টা করছেন। আর সেটাই হচ্ছে জিনিসপত্রের ইন্টারনেট। এক কথায় বলা যায় যে, যেই রকম বা যেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের ব্যাবহৃত ও প্রয়োজনিয় জিনিসপত্রগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে তাকে ইন্টারনেট অফ থিংস (আই ও টি) অথবা জিনিস পত্রের ইন্টারনেট বলে।
আই ও টি এর গঠন প্রণালী
আপনারা এতক্ষণে ভালমতোই বুঝে গেছেন যে আই ও টি এর কাজ কী। আই ও টি কিভাবে কাজ করবে অথবা আই ও টি ডিভাইস তৈরি করা কিভাবে সম্ভব হবে সেটা আমরা এখনও অনেকেই জানিনা। টিউনের এই প্যারাতে আমি আই ও টি এর গঠন প্রণালী সম্পর্কে আলোচনা করব।
কোনো জিনিসপত্রকে অন্য কোনো জিনিসের সাথে কথাবলাতে বা যোগাযোগ করাতে চাইলে প্রথমে তাকে দিতে হবে অন্য আরেকটি জিনিসকে অনুভব করার ক্ষমতা বা অনুভুতি। আপনারা কেউ কেউ বুঝতে পেরেছেন আমি কি বলতে চাইছি। সেন্স করার জন্য যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস এ প্রয়োজন হয় সেন্সর। আমাদের ফোনে এবং সিসি টিভি ক্যামেরাতে যেসকল সেন্সর লাগানো থাকে সেগুলো সিসি ক্যামেরা এর আসেপাশে মানুষ আছে কি না সেটা ডিটেক্ট করার জন্য। এবং আমাদের ফোনে কথা বলার সময় আমাদের কানের কাছে ফোন আছে কি না সেটা ডিটেক্ট করার জন্য।
আই ও টি এর জন্য যে সেন্সর এর প্রয়োজন হবে সেটা হতে হবে এমন যেন, তার আসেপাশে তার মালিক অথবা অন্য কোন আই ও টি ডিভাইসকে ডিটেক্ট করতে পারে। মালিক অথবা অন্য কোন আই ও টি ডিভাইসকে ডিটেক্ট করতে পারলে সে মালিক অথবা অন্যান্য আই ও টি ডিভাইস এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের নির্দেশনা মোতাবেক নিজের নিজে সম্পন্ন করতে পারবে।
এখানে আরো একটি কথা আছে। আমাদের আই ও টি ডিভাইস এর নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করার জন্য আমদের আই ও টি ডিভাইসকে প্রথমে অন্য কোনো ডিভাইস অথবা সাথে যেকোন একটি মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে। যেন ইহা আমাদের থেকে প্রয়জনিয় নির্রদেশনা গ্রহন করতে পারে। যোগাযোগ করার যেই মাধ্যম আমাদের আই ও টি ডিভাইস এর মধ্য থাকতে হবে সেটা হলো ইন্টারনেট কানেকশন। ইন্টারনেট কানেকশন এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা গ্রহন করতে পারবে।
এবার পরবর্তী যে জিনিস দরকার সেটার কথায় আসি। আমাদেরকে যেকোনো তথ্য দেওয়া হলে সেটা আমরা স্বরন রাখি অথবা মনে রাখি। এরপর সেই নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করি। আমরা যখন যেখানে যেই কাজই করি সকল কিছু আমাদের সৃতিতে রেকর্ড হয়ে থাকে।
কখনো কখনো আমরা অনেক কিছুই ভুলে যাই। কিন্তু পরে আবার ঠিকই সেই বিষয়টি মনে পড়ে। যার কারন হচ্ছে আমাদের প্রতিদিন এর সকল ঘটনাই আমাদের ব্রেইন এ রেকর্ড থাকে। এজন্য আমরা মাঝেমধ্যে ভুলে গেলেও পরবর্তী সময়ে সেটা আবার মনে পড়ে।
তাই আমাদের আই ও টি ডিভাইস গুলোর মধ্যেও এমন একটা কিছু সেট করতে হবে যেটা ডিভাইস এর প্রত্যেকটি কাজ ও নির্দেশনাকে ভালমত রেকর্ড করতে পারে। যেন আমাদের ডিভাইস সেখান থেকে তথ্য বের করে নিজের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারে। এমন একটি সিস্টেম হচ্ছে গুগল ড্রাইভ। অথবা আমাদের আই ও টি ডিভাইস এ সেট করা কোনো হার্ড্ডিস্ক অথবা এসডি কার্ড।
জি, হ্যাঁ। আমাদের আই ও টি ডিভাইস এর মধ্যে একটি এসডি কার্ড অথবা হার্ড্ডিস্ক অথবা এসএসডি অথবা যেকোনো স্টোরেজ ডিভাইস অথবা যেকোনো ক্লাউড স্টোরেজ যেমন গুগল ড্রাইভ, মেগা, ড্রপবক্স ইত্যাদি যেকোনো একটি ক্লাউড স্টোরেজ অথবা স্টোরেজ ডিভাইস সেট করে দিতে হবে। যেন সে তার প্রতিদিনের কাজকর্মের রেকর্ড করে রাখতে পারে। এবং পরে যেন রেকর্ড হয়ে থাকা কার্জক্রম এর লিস্ট থেকে সেগুলো বের করে তার নিদিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
শেষ কথা
আজ তাহলে এই পর্যন্তই রাখি। এই পোস্টটি দুটি পর্ব করে লিখতে হচ্ছে। অন্যথায় পোস্টটি বিশাল বড় হয়ে যাচ্ছে। আগামি পর্ব খুব শিগ্রহি আপলোড করে দিব।
আমার আগামি পর্বে আমি আই ও টি এর কয়েকটি সুবিধা, অসুবিধা সহ আই ও টি এঁর কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ উল্লেখ করবো। এছাড়াও আমাদের দেশে আই ও টি ডিভাইস এর প্রভাব কেমন পড়েছে সেটা নিয়েও আমি আগামি পর্বে আলোচনা করব। ততক্ষণে আপনারা সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ।