বর্তমানে আমাদের জীবন প্রায় পুরোপুরি ইন্টারনেটভিত্তিক পরিচালিত হচ্ছে। আর ইন্টারনেট ব্যবহারের সাইবার হামলা বা হ্যাকিং হচ্ছে সবচেয়ে বড় বাঁধা বা প্রতিবন্ধকতা। এই সময়ে ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকতে আপনাকে “সাইবার নিরাপত্তা” বিষয়ক শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে হয়ত আপনিও ফাঁদে পড়ে যাবেন সাইবার আক্রমণকারীর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নিজের অজান্তেই কোনো একটি কারণে শিকার হচ্ছে সাইবার আক্রমণের।
আমাদের ডিভাইস ইন্টারনেটে সংযুক্ত থাকে দিনের বেশিরভাগ সময়ই। ডিভাইস সংযুক্ত হওয়ার সাথে ডিভাইসের ডাটাও ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়। এতে তথ্য চুরি বা সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায় বহুলাংশে। আজকে এই টিউনটিতে জানতে পারবেন কীভাবে ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকবেন
সাইবার সিকিউরিটি কি
সাইবার সিকিউরিটি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া বা অনুশীলন যার সাহায্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক, ডাটা ইত্যাদি প্রতিরক্ষা করা যায় সাইবার আক্রমণ থেকে। আমাদের ডিভাইস ইন্টারনেটে সংযুক্ত হলে বা আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় সাইবার আক্রমণের সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন উপায়ে আমাদের ডিভাইসে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত ডাটা চুরি, ক্ষতি বা অবৈধ কাজে ব্যবহার করতে পারে। যা ভাইরাস, ম্যালওয়্যার ফিশিং ইত্যাদির মাধ্যমে হতে পারে।
যাইহোক, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, নেটওয়ার্ক বা ডাটা সুরক্ষার জন্য সাইবার সিকিউরিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কখন কীভাবে কোথায় সাইবার আক্রমণ হবে তা বলা মুশকিল। এজন্য সম্পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে। তাহলেই সাইবার আক্রমণ থেকে আমাদের ডিভাইস, নেটওয়ার্ক, ডাটা ইত্যাদি প্রতিরক্ষা করতে পারবো।
বহুলব্যবহৃত তিনটি সাইবার আক্রমণ
বর্তমানে সাইবার আক্রমণ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যেও হতে পারে। যদিও সাইবার আক্রমণ কোনো ওয়েবসাইটের সার্ভারে অবৈধভাবে প্রবেশ করা তথ্য চুরি করার কাজে ব্যবহার হতো। চলুন জেনে নিই জনপ্রিয় এবং বহুলব্যবহৃত তিনটি সাইবার আক্রমণ সম্পর্কে।
র্যানসমওয়্যার আক্রমণ
র্যানসমওয়্যার মূলত কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা সিস্টেমকে এনক্রিপ্ট করে দেয়। এনক্রিপ্ট করা ফাইলকে আক্রমণকারী ছাড়া আর কেউ ডিক্রিপ্ট করতে পারে না। আর তাই আক্রমণকারী মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করতে পারে। বর্তমানে র্যানসমওয়্যার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাইবার আক্রমণ দুনিয়ায়।
র্যানসমওয়্যার বিভিন্নভাবে সিস্টেম প্রবেশ করে থাকে। বিশেষ করে ক্র্যাক সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ইনস্টল করার মাধ্যমে র্যানসমওয়্যার প্রবেশ করে থাকে। তাছাড়াও ফিশিং ইমেইলের সাহায্যে প্রবেশ করতে পারে। অপরিচিত কোনো ইমেইলের লিংক ওপেন করলে র্যানসমওয়্যার আক্রমণের আশঙ্কা বেশী থাকে।
ফিশিং আক্রমণ
অবৈধভাবে প্রতারণামূলক ই-মেইল বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য চুরি করে নেওয়াকে ফিশিং বলে। বিশেষ করে ফিশিং আক্রমণ করা হয় HTTP লিংকের মাধ্যমে। মূলত ফিশিং এর মাধ্যমে সেনসিটিভ তথ্য যেমন, ফেসবুক পাসওয়ার্ড, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য ইত্যাদি চুরি করা হয়।
হ্যাকার ফিশিং এর জন্য সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করে চমকপ্রদ ও লোভনীয় অফার। ইমেইলে বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চমকপ্রদ ও লোভনীয় অফারের নামে ফিশিং লিংক পাঠিয়ে থাকে। তখন সেই লিংকে ক্লিক করলে বা লিংকে দেওয়া পদ্ধতি অনুসরণ করলে হ্যাকার ফিশিং আক্রমণে সফল হয়।
ম্যালওয়্যার আক্রমণ
ম্যালওয়্যার এমন একটি প্রোগ্রাম, কোড বা সিস্টেম যা অন্য কোনো ডিভাইসে বা সিস্টেমে প্রবেশ করে সেই ডিভাইস বা সিস্টেমের অ্যাক্সেস অন্য কাউকে দিয়ে দেয় বা সেনসিটিভ তথ্য চুরি করে নেয়। ম্যালওয়্যার হলো মালয়েশিয়ার একটি প্রোগ্রাম, কোড বা সিস্টেম।
কোনো ডিভাইসে ম্যালওয়্যার আক্রমণ করলে সেই ডিভাইসের মালিকের অনুমিত ছাড়াই ডিভাইসের সেনসিটিভ তথ্য অপর প্রান্তে থাকা হ্যাকারের কাছে পাঠাতে থাকে। ম্যালওয়্যার আক্রমণের মাধ্যমে একজন হ্যাকার খুব সহজেই কোনো ডিভাইসের অ্যাক্সেস নিতে পারে।
ইন্টারনেট জগতে নিরাপদ থাকবেন যেভাবে
- সন্দেহজনক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন না। যেকোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশের পূর্বে অবশ্য দেখে নিবেন লিংকের শুরুতে http আছে নাকি https আছে। https মানে নিরাপদ।
- শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ডে অবশ্যই সংখ্যা, চিহ্ন, বড় হাতের অক্ষর এবং ছোট হাতের যেন থাকে।
- টু স্টেপ অথেনটিকেশন চালু রাখুন। টু স্টেপ অথেনটিকেশন চালু রাখার ফলে শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি সিকিউরিটি আরো শক্তিশালী হয়।
- ব্রাউজিং হিস্টোরি এবং পাসওয়ার্ড অটো সেভ বন্ধ রাখুন। এর ফলে সেনসিটিভ তথ্য হ্যাক হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যায়।
- সফটওয়্যার ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন। আর্থিক সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই অফিশিয়াল সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত সিস্টেম বা সফটওয়্যার আপডেট করুন।
- আর্থিক তথ্য যেমন, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য বা ব্যাংকিং তথ্য কোথাও ইনপুট দেওয়ার আগে কয়েকবার সাইট চেক করে নিন কোন সাইটে দিচ্ছেন।
শেষ কথা
আপনি যদি ভালোভাবে সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ বা সাইবার ঝুঁকি সম্পর্কে ও তার ধরন সম্পর্কে অবগত থাকে তাহলে খুব সহজেই সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারবেন। এবং শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবেন। যাই হোক, আশাকরি আজকের টিউনে জনপ্রিয় তিনটি সাইবার আক্রমণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ বুঝতে বা জানতে পেরেছেন।
তো বন্ধুরা, আজকে এ পর্যন্তই। সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সচেতন হোন এবং ভবিষ্যতের সাইবার আক্রমণ থেকে বাঁচুন। ধন্যবাদ।
3 thoughts on "জানুন কিভাবে ইন্টারনেটে জগতে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন"