অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। লোকসান ঠেকাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
কুমিয়ে আনার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে অফিস ব্যাংক, সপ্তাহে ১ দিন বন্ধ থাকবে পেট্রোল পাম্প এছাড়াও রাত আটটার পর বন্ধ রাখা হবে দোকানপাট।
সেই সঙ্গে মসজিদগুলোতে ও এসি ব্যবহার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এসবের মাঝে জনমনে এক প্রশ্ন লোডশেডিং এর এই যন্ত্রনা আর কতদিন ধরে চলবে? আর কেনই বা সরকার বাধ্য হচ্ছে লোডশেডিং করতে? কি কারন রয়েছে এর পিছনে?
খরচ কমাতে গত ১৯ তারিখ থেকেও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে ডিজেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যে যুদ্ধ রাশিয়া ইউক্রেন শুরু করেছিল সেই যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গোটা বিশ্বে।
যুদ্ধে না জড়িয়েও বিশ্বের সিংহ ভাগ দেশে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে যুদ্ধের।শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারত শ্রীলংকা পাকিস্তান শহ ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো প্রায় একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া গত দুই সপ্তাহ ধরে রেশনিং করছে বিশ্ববাজারে জ্বালানিতেলের একটা সংকট চলছে এখন।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ জেনে দেখা দিয়েছে সমস্যা।
তাই সাময়িক দুর্ভোগ শর্তেও নেয়া হয়েছে কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত।দেশের বৃহৎ স্বার্থে এবং পৃথিবীর এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
তবে এসবের মাঝেও যতটুকু দুর্ভোগ কমানো যায় তার পূর্ণ চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ কারণে কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং হবে তা দ্রুত জানিয়ে দেওয়া হবে।
এছাড়া সপ্তাহে একদিনের জন্য পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ও নেয়া হয়েছে। বন্দর এলাকাতে সপ্তাহে দুই দিনও বন্ধ রাখা হতে পারে পেট্রোল পাম্প।
দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় চার বছর ধরে কোন লোডশেডিং হয়নি।
কিন্তু গত দুইদিন ধরে দিনে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহে বারোশো মেগাওয়াট এর বেশি ঘাটতি হচ্ছে।
বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বলেছেন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়াই আন্তর্জাতিক খোলা বাজার বা স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হচ্ছে না।
আর সেই কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কমানো হয়েছে, গ্যাসভিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো ১০ হাজার মেগাওয়াট এর বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে।
এই কেন্দ্রগুলোতে এখন অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
এছাড়াও কর্মকর্তারা বলছেন জ্বালানি তেলের দাম ও বিশ্ববাজারে অনেক বেশি হওয়ায়। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে দিনে ১০০ কোটি টাকারও বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে।
সেজন্য তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো পুরো দমে চালানো হচ্ছে না।দিনে আমাদের যত চাহিদা তার তুলনায় অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ঘন ফুড এলএনজি কোন সরবরাহ করছে পেট্রো বাংলা।
গত ২৯ জুন দেশে গ্যাস সরবরাহ ছিল ৩১৭৪ মিলিয়ন ঘন ফুট তাতে আমদানি করা গ্যাস অর্থাৎ এলএনজি ছিল ৮৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
এরপর প্রতিদিনই গ্যাস সরবরাহ একটু একটু করে কমানো হয়েছে, আগে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হলে পেট্রোল বা কয়েল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন বাড়ানো হতো।
কিন্তু এবার তা হতে দেখা যাচ্ছেনা তার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি।
উৎপাদনে বিগনো ঘটায় সারাদেশে কমবেশি লোডশেডিং হচ্ছে।
সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এইটি ফোর্স লোডশেডিং অর্থাৎ কেন্দ্রীয় উৎপাদন বাড়ালে লোডশেডিং এর প্রয়োজন পড়তো না। তারপরও করা হচ্ছে।
ঢাকা দুই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি জানিয়েছে। সবমিলিয়ে তাদের প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মত ঘাটতি হচ্ছে।
ঘাটতি মিটাতে এলাকা ভেদে ত্রিশ মিনিট করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি এর সূত্র মতে তাদেরকে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি ডিস্কো জানিয়েছে তাদের ঘাটতির পরিমাণ ১৫০ থেকে ১৭৫ মেগাওয়াট এর মত।
বিভিন্ন এলাকায় আধ ঘন্টার মত লোড সেটিং করে তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে।
ঢাকার বাইরের লোডশেটিং এর পরিস্থিতি তুলনামূলক বিশাল খারাপ, অনেক এলাকায় প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ থাকছে না।
মানুষের মনে প্রশ্ন এখন একটাই লোডশেডিং এর এই যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে কবে?
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় কোন সুসংবাদ দিতে পারছে না এখনি। জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে তাদেরকে ধৈর্যধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী।
ফেসবুক পোস্টে নজরুল হামিন বলেন গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, এতে অনেক জায়গাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
গ্যাস সারবরাহ স্বাভাবিক হলে, বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ অন্যান্য সব দেশের মত আমাদেরকেও সমস্যায় ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে আপনাদের সামরিক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।
*
*
*
আজকের মত এখানে ই শেষ করছি আশা করছি খুব শিগগিরই নতুন কিছু নিয়ে হাজির হচ্ছি সেই পর্যন্ত সাথেই থাকুন ট্রিকবিডির ধন্যবাদ।❤️
2 thoughts on "বারবার কেন কারেন্ট চলে যাচ্ছে? | কেন এত লোডশেডিং? | এর শেষ কোথায়?"