ক্লিকের আমি, ক্লিকের তুমি, ক্লিক দিয়ে যায় চেনা। চেনা তো যায়, কিন্তু মাঝে মধ্যে অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করার ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে সেটা যিনি ভুগেছেন তিনিই একমাত্র জানবেন। এমন অনেক ভাইরাস আছে, যা একবার ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সিস্টেমে ঢুকে গেলে নতুন কম্পিউটার কেনাটাই বোধহয় বেশি সহজ। বাড়ির ছাপোষা কম্পিউটার থেকে হোয়াইট হাউজের সুপার কম্পিউটার— কেউই এই সব ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এক নজরে দেখে নিন সেই সব ভাইরাসের তালিকা। আর হ্যাঁ, বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণটা আরও একবার মনে করিয়ে দিচ্ছি আমরা, ভুল করেও কোনো অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।

১) IloveYou: কী সুন্দর নাম! অথচ এর প্রভাব কতটা ভয়ানক তা টের পাওয়া গিয়েছিল ২০০০ সালে। প্রথম দেখা গিয়েছিল ফিলিপিন্সে। নিমেষের মধ্যে বিশ্বের মোট কম্পিউটারের ১০ শতাংশ একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছিল। মোট ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি।

২) My Doom: ইতিহাসে এর থেকে ভয়ঙ্কর ভাইরাস নাকি জন্মায়নি! প্রথমবার দেখা গিয়েছিল ২০০৪ সালে ২৬ জানুয়ারি। ই-মেল মারফত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। এর অন্য একটি নামও রয়েছে, Novarg. প্রায় ২০ লাখ কম্পিউটার এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার।

৩) Sobig F: এই ভাইরাস আপনার কম্পিউটারের নিপাট ভদ্রলোক সেজে এসে দাঁড়াবে এবং আপনার কাছেই ঢোকার অনুমতি চাইবে। অর্থাত্‍‌ স্প্যাম মেল হিসাবে ঢুকেও আপনাকে এটা বোঝাবে যে সে একটি সঠিক অ্যাড্রেস থেকে এসেছে। এ ভাবেই ২০০৩-এ ২০ লাখ সিস্টেমের বারোটা বাজিয়েছিল। কম্পিউটারে ঢোকার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজের ১০ লক্ষ কপি তৈরি করে ফেলে এই ভাইরাস। ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি করেছিল এই ভাইরাস।

৪) Code Red: ইনি হোয়াইট হাউসের কম্পিউটারকেও নাচিয়ে ছেড়েছেন। ২০০১-এর ১৩ জুলাই এটি প্রথম দেখা যায়। মাইক্রোসফ্ট ইন্টারনেট ইনফর্মেশন সার্ভারের একটি খুঁতকে কাজে লাগিয়ে ৪ লাখ সার্ভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এটি। বিশ্বজুড়ে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার।

৫) SQL Slammer: ২০০৩-এ প্রথম দেখা যায়। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে ৭৫ হাজার সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা থেকে 911 সার্ভিস সবই প্রভাবিত হয়েছিল এর জন্য। মোট ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১২০ কোটি মার্কিন ডলার।

৬) Melissa: অন্যতম সাঙ্ঘাতিক তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ১৯৯৯ সালে ২৬ মার্চ প্রথম লক্ষ্য করা যায়। প্রথম মাস-মেইলার মাইক্রোভাইরাস। খুব কম সময়ের মধ্যে ৬০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি করেছিল এটি। FBI এর সৃষ্টিকর্তা ডেভিড স্মিথ-কে ধরার জন্য আকাশ-পাতাল এক করে ফেলেছিল।

৭) Chernobyl: এটি প্রথম দেখা যায় তাইওয়ানে। এটি কম্পিউটারে ঢুকে Flash BIOS Chip টি এফেক্ট করে এবং সেটি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর জন্য বিশ্ব জুড়ে প্রায় ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়।

৮) Storm Worm: ২০০৭-এ বিশ্বের প্রচুর কম্পিউটার ব্যবহারকারী একটি মেইল পেয়েছিলেন। ওতে লেখা ছিল ইউরোপে ঝড়ের কারণে ২৩০ জন মারা গিয়েছেন। যারা এই মেইলটি ক্লিক করে খুলেছিলেন, তাদের কম্পিউটার আর ঠিক করা যায়নি। এক কোটি কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বিশ্ব জুড়ে। ক্ষতির হিসাব করা যায়নি।

৯) Conflicker: ২০০৯-এ আবিষ্কার হয় এটি। দেড় কোটি উইন্ডোজ সিস্টেমের বারোটা বাজিয়েছিল এটি। শুধুমাত্র কম্পিউটারই নয়, পেন ড্রাইভ, স্মার্টফোন, এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক সব কিছুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এটি। ফায়ারওয়াল প্রোটেকশন ভলো না হলে কম্পিউটারের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিমেষে কপি করে ফেলতে ওস্তাদ।

১০) Nimda: অ্যাডমিট কথাটি উল্টো করে লিখলে এই ভাইরাসটি দেখতে পাবেন। ৯/১১-এর এক সপ্তাহ পরে এই ভাইরাসটি বিশ্বজুড়ে মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য, ফাইল ট্রান্সফার এবং শেয়ার্ড ফোল্ডারের ইতিহাস নিমেষে চুরি করে ফেলতে পারে এটি। অনেকে বিশ্বাস করেন, এটি সাইবার টেরর অ্যাটাকেরই একটা অঙ্গ হিসাবে কাজ করেছিল।

One thought on "কম্পিউটারকে এই ১০ ভাইরাস থেকে দূরে রাখুন"

  1. Parvez Islam Contributor says:
    thank for give me information of virus.

Leave a Reply