হে পশ্চিমা যুবসমাজ,

ফ্রান্সে তিক্ত সন্ত্রাসী ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তোমাদের সঙ্গে আবারও কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করছি। আমার জন্য এটা খুবই দুঃখজনক যে, এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলতে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ ধরনের সমস্যা যদি উপায়-অনুসন্ধান ও আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি না করে, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো মানুষের দুঃখ-কষ্টই অপর মানুষের জন্য কষ্টকর। স্বজনদের চোখের সামনে শিশুর মৃত্যু, মায়ের পারিবারিক আনন্দ শোকে পরিণত হওয়া এবং স্ত্রীর নিথর মৃতদেহ নিয়ে স্বামীর ছুটে চলার মতো দৃশ্যগুলো মানুষকে আবেগাপ্লুত না করে পারে না। যাদের মধ্যেই মমত্ব ও মানবতাবোধ রয়েছে, তারাই এ ধরনের দৃশ্য দেখে ব্যথিত ও দুঃখিত হবে। এধরনের ঘটনা তা ফ্রান্সেই ঘটুক আর ফিলিস্তিন, ইরাক, লেবানন বা সিরিয়াতেই ঘটুক, মানুষ ব্যথিত ও দুঃখিত হবেই।নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের দেড়শ’ কোটি মুসলমানের মনে এই একই ধরনের অনুভূতি কাজ করছে এবং মুসলমানেরা সন্ত্রাসী ঘটনার হোতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত।কিন্তু সমস্যা হলো, আজকের দিনের দুঃখ-কষ্ট যদি আরও সুন্দর ও নিরাপদভবিষ্যত গড়ার উৎস না হয়ে উঠে তাহলেকেবল তিক্ত ও নিস্ফল অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারই বাড়তে থাকবে।আমি বিশ্বাস করি, তোমরা তরুণরাই কেবল আজকের দুর্ভোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে পারবে এবং পাশ্চাত্যের ভুলপথ পরিক্রমণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে।এটা ঠিক যে, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ আমাদের ও তোমাদের অভিন্ন সমস্যা, কিন্তু তোমাদের জানা প্রয়োজন-সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে তোমরা যে অনিরাপত্তা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছ, তার সঙ্গে ইরাক, ইয়েমেন, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের মানুষের কষ্টের দু’টি বড় পার্থক্য রয়েছে। এসব দেশ বছরের পর বছর ধরে এ পরিস্থিতির মোকাবেলা করছে। প্রথমত- মুসলিম বিশ্ব দীর্ঘ মেয়াদে আরও ব্যাপক মাত্রায় বড় ধরনের হিংস্রতা ও সহিংসতার শিকার।দ্বিতীয়ত- দুঃখজনকভাবে নানা কৌশলেও কার্যকর পন্থায় এসব সহিংসতার পেছনে সমর্থন দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন বৃহৎ শক্তি।আজ খুব কম লোকই আছে যারা আল-কায়েদা, তালেবান ও এ ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সৃষ্টি, এগুলোর বিস্তার এবং তাদেরকে অস্ত্রে সজ্জিত করার পেছনে আমেরিকার ভূমিকার কথা জানে না। এছাড়া, তাকফিরি সন্ত্রাসবাদের প্রকাশ্য ও নিশ্চিত পৃষ্ঠপোষকরা সবচেয়ে পশ্চাৎপদ রাজনৈতিক ব্যবস্থার অধিকারী হওয়ার পরও সব সময় পাশ্চাত্যের মিত্র হিসেবে স্থান পেয়েছে। কিন্তু একই সময়ে জনগণের গতিময় শাসন ব্যবস্থাভিত্তিক অগ্রগামী ও সুস্পষ্ট চিন্তা-দর্শনকে কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে ইসলামি জাগরণের বিষয়ে পাশ্চাত্যের দ্বিমুখী আচরণ পাশ্চাত্যের নীতিতে স্ববিরোধিতার প্রমাণ বহন করছে। তাদের স্ববিরোধী আচরণের আরেকটি প্রমাণ হলো, ইহুদিবাদী ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জনগণ ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সবচেয়েঘৃণ্য সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলা করছে।ইউরোপের জনগণ এখন যদি কয়েক দিনের জন্য নিজেদের ঘরে আশ্রয় নিয়ে থাকে এবং জনবহুল কেন্দ্র বা স্থানগুলো পরিহার করে থাকে তাহলে ফিলিস্তিনের পরিবারগুলো তো বছরের পর বছর ধরে এমনকি নিজেদের ঘরেও নিরাপদ নেই, কখনোই ছিল না। তাদের ঘরেই তারা ইসরাইলি বুলডোজারে পিষ্ট হয়ে এসেছে। ইসরাইলিরা যে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে জোর করে নিজেদের ইহুদি বসতি নির্মাণ করে যাচ্ছে ওই জঘন্য কাজটিকে কি কোনো ধরনের নৃশংসতার সঙ্গে তুলনা করা যায়? ইহুদিবাদী ইসরাইল আন্তর্জাতিক কোনো রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের এই পাশবিকতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মিত্রদের প্রশ্রয়ে তারা প্রতিদিনই ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি বিরান করেই যাচ্ছে, ধ্বংস করে যাচ্ছে তাদের ক্ষেত-খামার, বাগ-বাগিচা। এতো জঘন্যভাবে এই নৃশংসতা চালানো হয় যে ঘরের ভেতরে থাকা ফিলিস্তিনিরা তাদের ঘরের জিনিসপত্র কিংবা কৃষিকাজের সরঞ্জামাদি পর্যন্ত গুছিয়ে নেয়ার সুযোগ পায় না। ঘরের ভেতরে থাকা শিশুরা, মহিলারা শুধু ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের কিছুই করার থাকে না। এই নারী-শিশুরা অশ্রুসজল দৃষ্টিতে দেখে তাদের পরিবারের লোকজনকে কীভাবে নির্যাতন করছে, কীভাবে তাদের কাউকে কাউকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভয়ংকর নির্যাতন কেন্দ্রের দিকে। এধরনের নির্দয় নিষ্ঠুরতার উদাহরণ কি বর্তমান পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে? একজন ফিলিস্তিনি মহিলা আপাদমস্তক সশস্ত্র ইসরাইলি সেনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর কারণে তাকে রাস্তার মাঝখানে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার ঘটনা যদি সন্ত্রাসবাদ না হয় তাহলে কোন্‌টা সন্ত্রাসবাদ?এই নৃশংস বর্বরতা একটি দখলদার সরকারের সেনারা ঘটিয়ে যাচ্ছে বলে তাকে উগ্রতা বলা যাবে না? নাকি ষাট বছর ধরে এই নৃশংসতার চিত্র টেলিভিশনের পর্দায় দেখতে দেখতে এখন আর আমাদের বিবেককে নাড়া দেয় না।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুসলিম দেশগুলোতে সৈন্য সমাবেশ ঘটানো- যার ফলে নিজেদেরও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে-পশ্চিমাদের আরেকটি বৈষম্যমূলক ও স্ববিরোধী যুক্তির প্রমাণ। যেসব দেশে আগ্রাসন চালানোহয়েছে সেসব দেশে প্রাণহানি তো ঘটেছেই তদুপরি অর্থনৈতিক এবং শিল্পখাতগুলোর ভিত্তি ভেঙেচুরে খানখান হয়ে গেছে। যার ফলে সেসব দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রবাহ একেবারেই ধীরগতি হয়ে গেছে কিংবা থেমে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশগুলো পিছিয়ে গেছে বহু বছর। অথচ নির্লজ্জভাবে তাদেরকে বলা হয় তারাযেন নিজেদেরকে অত্যাচারিত কিংবা মজলুম মনে না করে। এটা কী করে সম্ভব যে একটা দেশকে পুরোপুরি বিরানভূমিতে পরিণত করে, তাদের শহর-নগর-গ্রামগুলোকেও মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে তারপর তাদের বলা হচ্ছে দয়া করে তোমরা নিজেদেরকে মজলুম ভেব না। এভাবে বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার আহ্বান না জানিয়ে নিষ্ঠার সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করাটা কি উত্তম নয়?আগ্রাসী বর্ণচোরাদের কারণে মুসলিম বিশ্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে ধরনের দুঃখ-কষ্টের শিকার হয়েছে তা বস্তুগত ক্ষতির চেয়ে কোনোভাবেই কম নয়।প্রিয় তরুণ সমাজ!আমি আশা করি বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে তোমরা সেই কপট ও দূষিত মানসিকতায় পরিবর্তন আনবে যে মানসিকতার শিল্প হচ্ছে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য গোপন করা এবংধোঁকাবাজি আর দুরভিসন্ধিকে রঙীন অলংকারে সাজানো।আমি মনে করি শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে এই আগ্রাসী ও নৃশংস মানসিকতায় পরিবর্তন বা সংস্কার আনা উচিত। পশ্চিমাদের চিন্তায় যতদিন এই দ্বৈত মানদণ্ড বজায় থাকবে, যতদিন সন্ত্রাসবাদ তার শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকদের দৃষ্টিতে ভালো এবং মন্দ এই দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে, যতদিন বলদর্পী সরকারগুলোর স্বার্থকে মানবীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর স্থান দেয়া হবে ততদিন নৃশংসতার শেকড় অন্য কোথাও খুঁজে লাভ নেই।দুঃখজনকভাবে এই শেকড়গুলো বছরের পরবছর ধরে পশ্চিমাদের সাংস্কৃতিক নীতির গভীরে ধীরে ধীরে প্রোথিত হয়ে গেছে এবং একটি নীরব ও নরম যুদ্ধের ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই তাদের নিজস্ব ও জাতীয় সংস্কৃতির জন্য গর্ব করে। সেসব সংস্কৃতি জন্ম থেকে বিকশিত হয়ে শত শত বছর ধরে তাদের সমাজের সাংস্কৃতিক চাহিদা বা খোরাক মিটিয়েছে। মুসলিম বিশ্বওএ ধরনের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য থেকে ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব এখন উন্নত মাধ্যম ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে সমগ্র বিশ্বের ওপর তাদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দিয়ে অভিন্ন সাংস্কৃতিক রূপ দেয়ার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি পশ্চিমা সংস্কৃতিকে এভাবে অন্যান্য দেশের ওপর চাপিয়ে দেয়াকে এবং মুক্ত ও স্বাধীন সংস্কৃতিগুলোকে হেয় প্রতিপন্ন করাকে একটা নীরব ও ক্ষতিকর সহিংসতা বলে মনে করি।এমন সময় সমৃদ্ধ সংস্কৃতিগুলোর পাশাপাশি এগুলোর সবচেয়ে সম্মানিত উপকরণগুলোর অবমাননা করা হচ্ছে যখনঅন্য কোনো কিছু দিয়েই একটি সংস্কৃতির স্থান পূরণ করা সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বর্তমান যুগে ‘সহিংসতা’ ও ‘নৈতিক স্খলন’ পশ্চিমা সংস্কৃতির দু’টি প্রধান অনুষঙ্গে পরিণত হলেও পাশ্চাত্যের মানুষই এখন এ দু’টি বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা যদিএকটি সহিংস, অশ্লীল ও নিরর্থক সংস্কৃতি গ্রহণ করতে না চাই- সেটা কি আমাদের অপরাধ? নানা ধরনের কথিত শিল্প পণ্যের আদলে আমাদের তরুণদেরপ্রতি যে ধ্বংসাত্মক ঢল নামিয়ে দেয়া হয়েছে তা প্রতিহত করার কারণেই কি আমরা অপরাধী? সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে সংযোগের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে আমি অস্বীকারকরছি না। যখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এবং সম্মানের সঙ্গে কোনো সমাজে এই সংযোগ ঘটে তখন সে সমাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু জোর করে সাংস্কৃতিক সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা সব সময়ই ছিল ক্ষতিকর ও ধ্বংসাত্মক। আমি চরম পরিতাপের সঙ্গে একথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, আমদানি করা সংস্কৃতিগুলোর সঙ্গে এ ধরনের ব্যর্থ সংযোগ ঘটানোর চেষ্টার ফসল হিসেবে আইএসআইএল বা দায়েশের মতো হীন প্রকৃতির গোষ্ঠীগুলো সৃষ্টি হয়েছে। যদি ইসলামি চিন্তাধারায় দৈন্যতা থাকতো তাহলে সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী যুগ শুরু হওয়ার আগেও মুসলিম বিশ্বে এ ধরনের গোষ্ঠী দেখা যেত। অথচ ইতিহাস তার উল্টো চিত্রই তুলে ধরছে। অকাট্য ঐতিহাসিক দলিল একথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট করে দেয় যে, একটি বেদুঈন গোত্রের একটি উগ্র ও জঘন্য চিন্তাধারার সঙ্গে উপনিবেশবাদের মিলনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে চরমপন্থার বীজ বপন করা হয়েছে। তা না হলে, বিশ্বের সবচেয়ে মানবিক ও নীতিনৈতিকতাপূর্ণ ধর্ম- যাতে একজনমানুষের হত্যাকাণ্ডকে গোটা মানবতাকে হত্যার সমান বলে অভিহিত করা হয়েছে সেখান থেকে কীভাবে দায়েশের মতো আবর্জনা বেরিয়ে আসে?পাশাপাশি এ প্রশ্নও করতে হবে যে, যারা ইউরোপে জন্মগ্রহণ করেছে এবং ইউরোপীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে যাদের চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছে তারা কীভাবে এ ধরনের গোষ্ঠীতে যোগ দেয়? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, একদল মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে একবার বা দু’বার সফর করার পর হঠাৎ করে এতটা চরমপন্থি হয়ে যায় যে, নিজের দেশের নাগরিকদেরওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে? এখানে যে বিষয়টি উপেক্ষা করা হচ্ছে সেটি হলো- এসব জঙ্গি একটি অসুস্থ ও সহিংস সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে এবং জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছে। এ বিষয়টিকে অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হবে; যে বিশ্লেষণে সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন দূষণগুলো বেরিয়ে আসে। পাশ্চাত্যে শিল্প ও অর্থনৈতিক বিকাশের বছরগুলোতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় যে অসাম্য ও বৈষম্যের বীজ বপন করা হয়েছে কিছুদিন পরপর অসুস্থ প্রকৃতিতে হয়তো তার ফলে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।সে যাই হোক, তোমাদেরকেই নিজেদের সমাজের বাহ্যিক আবরণগুলোকে ভেঙে ফেলে এই ক্ষোভ ও জটগুলোকে খুঁজে বের করে তা ঝেড়ে ফেলতে হবে। ফাটলগুলোকে গভীর করার পরিবর্তে ভরাট করতে হবে। সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে মস্তবড় ভুল যা বিদ্যমান ফাটলগুলোকে আরো বড় করে তুলবে। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকায়বসবাস করছে কোটি কোটি মুসলমান যারা সেখানকার সমাজের নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। যেসব হঠকারী ও তড়িৎ পদক্ষেপ এই মুসলিম সমাজে ভীতি ও শঙ্কা তৈরি করে ও অতীতের চেয়ে আরো বেশি করে তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হয় এবং সমাজের মূলধারা থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয় সেসব পদক্ষেপের ফলে সমস্যার সমাধান তো হবেই না বরং উল্টো সেই ফাটল ও বিদ্বেষকে আরো গভীর করে তুলবে। প্রতিক্রিয়াশীল যেকোনো পদক্ষেপ বিশেষ করে সেটিকে যদি আইনি রূপ দেয়া হয় তাহলে তাতে বিদ্যমান শ্রেণিবিভাগকে উস্কে দেয়া এবং নতুন নতুন সংকটের পথ উন্মুক্ত করে দেয়া ছাড়া অন্য কোনো ফল পাওয়া যাবে না। প্রাপ্ত খবরে জানা যাচ্ছে, কোনো কোনো ইউরোপীয় দেশে এমন আইন করা হয়েছে যার ফলে কিছু নাগরিককে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই আচরণগুলো অত্যন্ত অন্যায় এবং আমরা সবাই জানি অন্যের প্রতি অন্যায় আচরণ কোনো না কোনোভাবে নিজের প্রতি ফিরে আসে। এ ছাড়া, মুসলমানরা এমন অকৃতজ্ঞ আচরণের শিকার হওয়ার যোগ্য নন।পশ্চিমা দুনিয়া বহু শতাব্দি ধরে মুসলমানদের সঙ্গে ওঠাবসা করেছে। এক সময় তারা মুসলিম দেশগুলোতে উপনিবেশ স্থাপন করে স্বাগতিক দেশগুলোর সম্পদ লুণ্ঠন করেছে এবং বর্তমানে মুসলমানদেরকে তাদের নিজেদের দেশে আপ্যায়ন করে বিভিন্নভাবে তাদের সেবা গ্রহণ করেছে। দু’টি ক্ষেত্রেই মুসলমানরাপশ্চিমাদের সঙ্গে অত্যন্ত সদয় আচরণ করেছে ও ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে। কাজেই আমি তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করব, তোমরা গভীর দৃষ্টি দিয়ে ইসলাম সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করার পাশাপাশি অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম বিশ্বের ব্যাপারে একটি সঠিক ও সম্মানজনক পন্থা অবলম্বন করবে। তখন দেখবে, অচিরেই এই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিতভবনটি তার নির্মাতাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টিকারী ছায়া বিস্তার করবে, তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তা উপহার দেবে এবং বিশ্ব অঙ্গনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আশার আলোর সঞ্চার করবে।

=>> উৎসঃ সময়ের কন্ঠস্বর

5 thoughts on "পশ্চিমা যুবকদের উদ্দ্যেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ২য় চিঠি"

  1. Sobuj ahammed Contributor says:
    সবাই সব সময় নতুন নতুন টিপ্স
    পেতে এই সাই
    থেকে গুরে আসেন?
    Fairmela.ML
  2. RobiulRs Contributor says:
    valo laglo….but oliur tmr sathe kichu kotha chilo
    1. Oliur Rahman Contributor Post Creator says:
      RobiulRs amake Techzbd.cf Giye Msg dau …
  3. Abdur Rahim14100 Contributor says:
    Tnx for picking the truth
  4. আমার খুবি ভালো লাগলো

Leave a Reply