বুজুর্গানে দ্বীন রোযা শুদ্ধ
হওয়ার জন্য ছয়টি আদব লিপিবদ্ধ
করিয়াছেন।
১নং চক্ষুর হেফাজত করা, অর্থাৎ
অপাত্রে দৃষ্টিপাত যেন না হয়।
এমন কি স্বীয় স্ত্রী’র প্রতি
কামদৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে
রোযার অঙ্গহানি হয়। হুযুরে পাক
(সঃ) বলেন, দৃষ্টি শয়তানের তীর
সমূহ হইতে একটি তীর। যে ব্যক্তি
আল্লাহর ভয়ে উহাকে করে
,আল্লাহ পাক তাহাকে ঈমানের
এইরূপ নূর দান করেন, যাহার লজ্জত
সে অন্তরে অনুভব করে।
২নং জবানের হেফাজত করা,
মিথ্যা ,চোগলখুরী,বাজে কথা,
গীবত, শেকায়েত, কটুবাক্য,
ইত্যাদি হইতে জিহ্বাকে সংযত
রাখিবে। বোখারী শরীফে
বর্ণিত আছে,রোযা মানুষের জন্য
ঢাল স্বরূপ। কাজেই আজে বাজে
কথা হইতে জবানকে বিরত
রাখিবে। কেহ ঝগড়া করিলে
প্রতুত্তরে বলিবে আমি
রোযাদার। কটু কথা বলা আমার
শোভা পায় না।
হুযুরে পাক (সঃ) -এর যামানায়
দুইটি মেয়েলোক রোযা
রাখিয়া ক্ষুধায় কাতর হইয়া
পড়ে। তাহাদিগকে মৃত্যপ্রায়
দেখিয়া সাহাবাগণ হুযুর (সঃ)-
এর খেদমতে তাহাদের সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করিলেন। হুযুর (সঃ)
তাহাদের নিকট একটি পেয়ালা
পাঠাইয়া বলিলেন, তাহারা
যেন ইহাতে বমি করে। বমি করার
পর দেখা গেল উহাতে গোশতের
টুকরা এবং তাজা রক্ত
রহিয়াছে। হুযুর (সঃ) কারণ
দর্শাইয়া বলিলেন,ইহারা
হালাল রুজি দ্বারা রোযা
রাখিয়াছে সত্য, কিন্তু গীবত
করিয়া হারাম ভক্ষণ করিয়াছে।
তাই তাহাদের এই দুরাবস্থা
হইয়াছে। আল্লাহ পাক গীবত কে
আপন মৃত ভাইয়ের গোশত্ খাওয়ার
সমতূল্য বলিয়াছেন। হাদীস
শরীফে বর্ণিত আছে, একদা হুযুর
(সঃ) কয়েকজন লোককে দাঁত
খেলাল করিতে বলিলেন,
তাহারা বলিল আমরা তো আজ
গোশত্ খাই নাই। হুযুর (সঃ)
বলিলেন, অমুকের গোশত্
তোমাদের দাঁতে বিদ্ধ
রহিয়াছে। জানা গেল
তাহারা সেই ব্যক্তির নিন্দা
করিয়াছিল।
সাধারণ লোক ছাড়াও যাহারা
পরহেজগার বলিয়া গণ্য
তাহাদের মজলিশ ও গীবত হইতে
খালি থাকে না। উপরোন্ত কেহ
কেহ উহাকে গীবত বলে মনে

করে না। বরং উহাকে ঘটনার
বর্ণনা বলিয়া প্রকাশ করা হয়।
গীবত সম্পর্কে জনৈক সাহাবী
জিঞ্জাসা করিলে হুযুর (সঃ)
বলেন, কাহারো পশ্চাতে এমন
কথা বলা যাহা শুনিলে সে
দুঃখ পায়। সাহাবী বলিলেন,
ইয়া রাসূলুল্লাহ (সঃ)! সে ব্যক্তি
উক্ত দোষে প্রকৃত দোষীও যদি হয়?
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলিলেন,
তবেইত গীবত। আর যদি সে দোষী
না হয়, তাহলে উহা মিথ্যা
অপবাদ।
একদিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোন এক
কবরস্থানে গিয়া বলেন, কবরে দুই
ব্যক্তির আজাব হইতেছে।
একজনের গীবতের দরুন এবং অপর
জনের পেশাব করিয়া পরিস্কার
না হওয়ার দরুণ।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরশাদ
ফরমাইতেছেন, সুদের সত্তরটি স্তর
রহিয়াছে এবং এর সর্বনিম্ন সুদ
আপন মায়ের সাথে জিনার
সমতূল্য এবং এক দেরহাম সুদ
খাওয়া পয়ঁত্রিশবার জিনার
চেয়েও গুরুত্বর এবং সবচেয়ে
মারাত্মক সুদ হইল মুসলমান ভাইয়ের
ইজ্জত নষ্ট করা।(নাউজুবিল্লাহ)
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এই
মারত্মক অপকর্ম হইতে হেফাজত
করুন।
তৃতীয়. কর্ণের হেফাজত করা। ঐ
সব অপ্রিয় বস্তু যাহা মুখে উচ্চারণ
করা না জায়েজ, উহার প্রতিকর্ণ
পাত করাও নাজায়েজ।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
গীবতকারী ও শ্রোতা উভয়ই
পাপের মধ্যে শামিল।
চতুর্থ. বাকী সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের
হেফাজত করা। যেমন হস্তকে
নিষিদ্ধ বস্ত স্পর্শ করা হইতে ,পা-
কে অবৈধ স্থানে গমন হইতে,
পেটকে সন্দেহজনক বস্তু খাওয়া
হইতে রক্ষা করিবে। যে ব্যক্তি
রোযা রাখিয়া হারাম মাল
দ্বারা ইফতার করে সে যেন
কোন রোগের জন্য ঔষধ ব্যবহার
করিল,কিন্তু উহাতে বিষও
মিশ্রিত ছিল। এমতাবস্থায় ঔষধ
তো উপকার করিবেই, কিন্তু
বিষে তাহার মৃত্য অনিবার্য।
পঞ্চম. ইফতারের সময় হালাল মাল
দ্বারা হইলেও উদর পূর্ণ না
করিয়া খাওয়া। যেহেতু রোযার
উদ্দেশ্য উহা দ্বারা ব্যাহত হয়।
রোযার মকছুদ কামভাব ও পশু
প্রভৃত্তিকে দমন করা এবং নুরানী
শক্তিকে বর্দ্ধিত করা। এগার
মাস প্রচুর খাওয়ার পর এক মাস
কিছুটা কম খাইলে কেহ প্রাণ
হারায় না, কিন্তু আমরা ইফতার
এবং সেহরীতে এত অধিক ভোজন
করি যে,অন্য মাসেও এত বেশি
ভোজনের সুযোগ হয় না।
ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) বলেন,
রোযার উদ্দেশ্য হইল, শয়তান এবং
নফছকে দমন করা। কিন্তু ইফতারের
সময় যদি বেশি খায় তবে ইহার
উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। এতে আমরা শুধু
আহারের সময় পরিবর্তন করিলাম
মাত্র। আমরা রমযানে অন্য
মাসের চেয়ে অধিক পরিমান
খাদ্য সামগ্রীর আয়োজন করি
এবং দিনভর উপবাস থাকিয়া
ইফতারের পর থেকে মজার
খানায় ঝাঁপাইয়া পড়ি। ইহা
নিঃসন্দেহে কামভাবকে দমন
না করিয়া উহাকে আরও
উত্তেজিত করিয়া দেয়।
রাসূলুল্লাহ (সঃ)বলেছেন, শয়তান
তোমাদের শিরায় শিরায়
চলাচল করে। কাজেই ক্ষুধার
দ্বারা উহার গতি বিধি বন্ধ কর,
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৃপ্ত থাকিলে
নফছের লালসা বৃদ্ধি পায়, আর নফছ
ভূখা থাকিলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
পরিতৃপ্ত থাকে।
হে আল্লাহ! আমাদের জন্য যা
মঙ্গল তা দান কর, আর যা অমঙ্গল
তা থেকে আমাদের হেফাজত
কর। তুমিই একমাত্র হেফাজত
কারী।
রাসুল (সঃ)বলেন, আল্লাহর নিকট
কোন বরতন পূর্ণ করা অতটা অপছন্দ
নয় যতটা পেটভর্তি করা
অপছন্দনীয়। হুযুর (সঃ) আরও বলেন,
সোজা হয়ে দাড়াবার জন্য
কয়েক মুষ্টি অন্নই যথেষ্ট। হ্যাঁ,
কেহ যদি খাইতে চায় তবে উদুর
কে যেন তিন ভাগে বিভক্ত
করে। এক অংশ অন্নের জন্য। আর এক
অংশ পানির জন্য এবং বাকী
অংশ যেন খালি রাখে।
ষষ্ঠ বস্তু এই যে, রোযা কবুল হয় কি
না এই ভয়ে সব সময় কম্পিত থাকা।
প্রত্যেক এবাদতেই এই ভাবে ভয় –
ভীতি থাকা উচিত। হুযুর (সঃ)
বলেন, অনেক লোক কোরআন
তোলাওয়াত করে অথচ কোরআন
তাহাদেরকে অভিশাপ দিতে
থাকে।
আদবের সহিত মনোযোগ
সহকারে এবং সঠিক উচ্চারণে
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা
এবং সে অনুযায়ী জীবন
পরিচালনা করা প্রত্যেক
বয়ঃপ্রাপ্ত মুসলিম নর-নারীর জন্য
কর্তব্য।
নিশ্চয় আল্লাহ নেক বান্দাদের
দলে আমাদের অন্তর্ভূক্ত করবেন।
আমিন।
তথ্য-সংগৃহীত। Like Me Facebook Page

Leave a Reply