Movie Review of Incendies (2010).
আসসালামু আলাইকুম।
অন্যান্য সকল ধর্মাবলম্বী ভাইদের জানাই অনেক-অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
প্রায় দুবছর পরে ফিরলাম ট্রিকবিডিতে, এবার হলিউডের একটা মুভি রিভিউ নিয়ে। আশা করি আগের মতোই আমার লেখা আপনাদেরকে সন্তুষ্ট করবে; যদিও জানিনে, আগের সেই ট্রিকবিডি ইউজার আর কজন বাকি আছে এখনো!
আরো পড়ুনঃ
“Fate has terrible power. You cannot escape it by wealth or war. No fort will keep it out, no ships outrun it.”
— বিখ্যাত গ্রীক ট্র্যাজেডি Oedipus এর রচয়িতা Sophocles.
প্রথমেই উক্ত উক্তিটি উল্লেখ করার কারণ, এই মুভিটি, অর্থাৎ Incendies এর সাথে Sophocles রচিত ট্র্যাজেডি Oedipus এর দারুণ মিল রয়েছে। আপনি যদি প্রথমে ‘ঈডিপাস’ পড়ে থাকেন ও এরপরে ‘Incendies’ দেখেন, তাহলেই এই দুই শিল্পকর্মদ্বয়ের মধ্যকার সাদৃশ্য আপনি স্পষ্ট বুঝে যাবেন। যাহোক, এদের মিল খুঁজে দেখার দায়িত্ব আপনার ওপর ছেড়ে দিয়ে আমি ফিরে আসি শুধু সিনেমাটির প্রসঙ্গে।
আরো পড়ুনঃ
যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, ১ এর সাথে ১ যোগ করলে কত হয়? ভাববেন- এটা আবার কিধরণের প্রশ্ন! এটা তো সবাই-ই জানে, যোগফল ২। কিন্তু সবসময়ই কি তাই হয়? কিছুক্ষেত্রে যে ১ ও ১ এর যোগফলরূপে সেই ১-ই ফিরে আসতে পারে, সেটা কি কখনো আমাদের ভাবনায় এসেছে?
কি অবাক হলেন? ভাবছেন, সেটা কি করে সম্ভব! আসলেই ব্যাপারটাকে অসম্ভব মনে হলেও ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত Incendies নামক ফ্রেন্স-কানাডিয়ান সিনেমাটির মাধ্যমে এর পরিচালক এটাকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। নাহ্, এটা কোনো ভারিক্কি তত্ত্ববিশিষ্ট সাই-ফাই মুভি নয়। বাস্তবভিত্তিক একটা কাহিনী এর, নেই কোনো বিজ্ঞানের মারপ্যাঁচ।
স্পয়লারবিহীন কাহিনী সংক্ষেপ বলতে গেলে এরকম– কানাডায় বসবাসরত এক বৃদ্ধ মহিলা (নাওয়াল মারওয়ান) তার যমজ দুই ছেলেমেয়েকে রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, যার জন্ম ও অতীত জীবন কেটেছে মধ্য প্রাচ্যের কোনো গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত নামবিহীন এক দেশে। এক পারিবারিক বন্ধু ও উকিলের (জ্যাঁ লেবেল) মাধ্যমে মৃত্যুর পূর্বে মহিলা তার ছেলেমেয়ের জন্য একটা দায়িত্ব দিয়ে যান, দায়িত্ব পালন না হওয়া পর্যন্ত যেন তাকে স্বাভাবিক নিয়মে কবরস্থ না করা হয় (নিচের দিকে ফিরিয়ে বা উপুড় করে) এমন শর্তও জুড়ে দেন। মেয়ের (জেনি মারওয়ান) ওপর অর্পিত দায়িত্ব হলো- তাদের বাবাকে খুঁজে বের করে তার হাতে একটা চিঠি পৌঁছে দিতে হবে। এবং ছেলের (সাইমন মারওয়ান) ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছিলো- তাদের ভাইকে খুঁজে তার হাতে একটা চিঠি পৌঁছে দিতে হবে।
তো সদ্য গত হয়ে যাওয়া মায়ের কাছ হতে এমন দায়িত্ব পেয়ে যমজ ভাইবোন পুরোই অবাক হয়ে যায়। কেননা এতোদিন ধরে তাদের ধারণা ছিলো- তাদের বাবা তাদের জন্মের আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তাদের আর কোনো সহোদর ছিলো না। এমন পরিস্থিতিতে সাইমন মারওয়ান কিছুটা পিছপা হয় তার দায়িত্ব থেকে, কিন্তু বোন জেনি মারওয়ানের নাছোড়বান্দা কার্যক্রমে একসময় সেও বাধ্য হয়ে মাঠে নেমে পড়ে। উন্মোচিত হতে থাকে তাদের মা নাওয়াল মারওয়ানের রহস্যময় অতীত জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী। ক্রমে ক্রমে তারা অনেক চেষ্টা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রথমে তাদের পিতা ও পরে সিনেমার প্রায় শেষের দিকে এক ভাইয়ের সন্ধান পায়।
বলা হয়ে থাকে যে, কিছু সত্য অপ্রকাশিত বা গোপন থাকাই ভালো। তেমনটা এ মুভির ক্ষেত্রেও ঘটেছে। সিনেমার শেষাংশে যখন জেনি ও সাইমন মারওয়ান তাদের ভাইয়ের খোঁজ পায়, এক্ষেত্রে যে সত্য তারা জানতে পারে, তাতে সে সত্য অথবা সেই ভাইয়ের খোঁজ না পাওয়াটাই তাদের জন্য ভালো ছিলো। কেন? তা বলা যাবে না, কেননা তাতে স্পয়লার হয়ে যাবে। আর তাছাড়া এই ‘কেন’ এর জবাবের মাঝেই লুকিয়ে আছে ১ ও ১ এর যোগফল কিভাবে ১ হয়! যাহোক, উক্ত অনাকাংখিত সত্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় সিনেমাটির ট্রাজিক্যাল সমাপ্তি ঘটে।
Denis Villeneuve পরিচালিত এই মুভিটি আসলে লেবানীয়-কানাডিয়ান লেখক Wajdi Mouawad রচিত Incendies নামক নাটকের অ্যাডাপ্টেড রূপ, যেটা ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম মঞ্চস্থ করা হয়। Wajdi Mouawad উক্ত নাটকটি লিখেছেন Souha Fawaz Bechara নামক এক লেবানীয় মহিলার অটো-বায়োগ্রাফীর কাহিনী অনুসরন করে। সেক্ষেত্রে এই মুভিটিকে বাস্তব ঘটনার অবলম্বনে নির্মিত হিসেবেও বলা যেতে পারে।
২০০৪ সালে পরিচালক Denis Villeneuve কানাডার মন্ট্রিলের Théâtre de Quat’Sous নামক এক থিয়েটারে বসে প্রথমবারের মতো Incendies নাটকটি উপভোগ করেন। এ সম্বন্ধে তিনি বলেন- “আমার এমন একটা তীব্র অনুভূতি হচ্ছিলো যেন আমি কোনো এক মহামূল্যবান শিল্প উপভোগ করছি।” তাঁর মতে এটা ছিলো ‘গ্রীক ট্র্যাজেডির আদলে এক আধুনিক কাহিনী’। তিনি সিনেমাটির স্ক্রিনপ্লে তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় নিয়েছিলেন এবং সিনেমাটি তৈরীর পেছনে বাজেট ছিলো ৬.৫ মিলিয়ন ডলার।
সিনেমাটির পরিচালনার কথা বলতে গেলে আমার কাছে মোটামুটি লেগেছে। কেননা আমার মতে সিনেমাটি আরেকটু গতিসম্পন্ন হতে পারতো; তবে এর সুন্দর কাহিনীর কারণে এই ধীরতা খুব একটা সমস্যা করেনি। আর এর সিনেমাটোগ্রাফীকে আমি ভালোই বলবো, কারণ আমার দৃষ্টিতে ভালো লেগেছে। অভিনয়ও ভালো ছিলো, বিশেষ করে নাওয়াল মারওয়ানের অতীত জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উক্ত চরিত্রের অভিনেত্রীর ফেস এক্সপ্রেশনগুলো যথাযোগ্য মনে হয়েছে।
সিনেমাটিতে মধ্য প্রাচ্যের কোনো এক দেশের গৃহ যুদ্ধে সেদেশের ভেতরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি, ধর্ম কলহে সাধারণ জনগণের ওপর নেমে আসা নিষ্ঠুরতার চরম রূপ অতি দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেমন, একটা অংশে দেখানো হয়েছে, এক বাসভর্তি মুসলিম শরনার্থীদেরকে খ্রিস্টান জাতীয়তাবাদী একটা দল অতি নিষ্ঠুরভাবে প্রথমে গুলি করে ও পরে বাসে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে; তাদের গুলির হাত থেকে রক্ষা পায়নি চার-পাঁচ বছরের একটা কন্যা শিশুও।
সিনেমায় যদিও নির্দিষ্ট কোনো দেশের কথা উল্লেখ করা হয়নি, তারপরেও বোঝা যায় যে এর কাহিনী ১৯৭৫-১৯৯০ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ৬ মাস ধরে চলমান লেবানীয় গৃহযুদ্ধ দ্বারা ভিত্তিপ্রাপ্ত। উক্ত গৃহযুদ্ধে আনুমানিক এক লক্ষ বিশ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে আর প্রায় ছিয়াত্তর হাজার মানুষ গৃহহারা হয়।
ফিল্মটি ২০১১ সালের অ্যাকাডেমী অ্যাওয়ার্ডসে ‘বেস্ট ফরেইন ল্যাংগুয়েজ ফিল্ম’ ক্যাটাগরিতে নমিনেশন পাওয়াসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের অ্যাওয়ার্ড ও নমিনেশন লাভ করে।
মুভির ক্রিটিক্স রিভিউ ওয়েবসাইট ‘Rotten Tomatoes’ ১২২ জন ক্রিটিক্সের মতামতের ভিত্তিতে সিনেমাটিকে ৯২% ফ্রেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। অন্য আরেকটি একই ধরণের ওয়েবসাইট ‘Metacritic’ অনুযায়ী ৪২ টি রিভিউয়ের মধ্যে সিনেমাটি ৮০% স্কোর লাভ করে। এছাড়া এর বর্তমান IMDb রেটিং হলো ৮.৩/১০।
সিনেমাটিতে মূলত ফরাসি ও আরবি ভাষার প্রাধান্যই বেশি, পাশাপাশি অল্প পরিমাণে ইংরেজীও ব্যবহৃত হয়েছে। আপনি চাইলে ইংরেজী অথবা বাংলা সাবটাইটেল ব্যবহার করে সিনেমাটি দেখতে পারেন। দারুণ উপভোগ্য একটি মুভি, আশা করি এটি আপনাকে হতাশ করবে না।
পোস্টটি ভালো না লাগলে দুঃখিত। কোনো ভুল পেলে দয়া করে জানাবেন, আমি অতি শীঘ্র তা সংশোধন করতে চেষ্টা করব; শুধু-শুধু কমেন্টে নিন্দনীয় ভাষা ব্যবহার করে নিজের বংশ সম্বন্ধে অন্যদেরকে খারাপ কিছু ভাবনার সুযোগ করে দিবেন না।
ধন্যবাদ।।।
সেগুলো নিয়ে পোস্ট করেন প্লিজ। তিন বছর ধরে সেই patch ফাইল গুলোর জন্য অপেক্ষা করতেছি। আমি আশা করি আপনার পরবর্তী পোস্টের পর আমার অপেক্ষার পালা শেষ হবে।✔️✔️✔️✔️✔️✔️✔️✔️✔️✔️✔️