بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
প্রিয় ট্রিকবিডি বাসি কেমন আছেন সবাই ? আশা করি মহান আল্লাহ তা’আলার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন।আপনাদের দোয়া ও ভালবাসায় আমিও অনেক ভাল আছি।
আজকে আলোচনা করবো কিভাবে নিজের বাড়ির বিদ্যুৎ এর ব্যাবহার সঠিক ভাবে ব্যাবহার করে নিজের বিদ্যুৎ বিল কমাবেন।
আমরা প্রত্যেকে বর্তমান বিদ্যুৎ এর প্রতি এক কথায় স্বনির্ভর হয়ে গেছি।বর্তমান সময়ে বিদ্যুৎ ছাড়া চলা খুব কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে।বিদ্যুৎ যেমন পুরো বিশ্বকে আধুনিকতায় গড়ে তুলেছে।এই বিদ্যুৎ এখন সবার কাছে সেবা মূলক হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে।আর এই বিদ্যুৎ এর ব্যাবহারের জন্য আমাদেরও কিছু চার্জ দিতে হয়। অনেকেই আবার ভুলভাবে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে বেশি টাকা চার্জ দিচ্ছে।আর এই বিদ্যুৎ পুরো পৃথিবীর কাছে অনেক ব্যয়বহুল। তাই ব্যয় রোধ করার জন্য-ই গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ ব্যাবহার এর চার্জ দিতে হয়।আর এই চার্জ বা বিল অনেক সময় নিজেদের অপব্যবহারের ফলে অনেক সময় বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।তাই আমি আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে যাচ্ছি কিভাবে বিদ্যুৎ বিল কমাবেন ও সঠিক নিয়মে কিভাবে ব্যাবহার করবেন।
তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
সঠিক ভাবে হাউজ ওয়্যারিং করা:
বাসা-বাড়িতে বৈদ্যুতিক নিয়ম অনুযায়ী তারের সুবিন্যাসকে হাউজ ওয়্যারিং বলে।অনেক বাসা-বাড়িতে সঠিক ভাবে ওয়ারিং করা না থাকার ফলেও বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি আসে।আবার অনেকের বাড়িতে সঠিক নিয়মে ওয়্যারিং থাকার ফলেও নিম্ন মানের ওয়্যার ও নিম্ন মানের বৈদ্যুতিক ডিভাইস থাকার ফলেও বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।তাই টাকা একটু খরচ বেশি হলেও ভাল মানের যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করবেন।
সঠিক ভাবে গ্রাউন্ডিং এর ব্যাবহার ।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর আরো একটি কার্যকরী উপায় হলো সঠিক ভাবে গ্রাউন্ডিং ব্যাবহার করা।
গ্রাউন্ডিং হলো নিউট্রালকে পৃথিবীর মাটির সাথে সংযোগ করাকেই গ্রাউন্ডিং বলে।অনেকেই এই গ্রাউন্ডিংকে আর্থিং বলে থাকে।আর্থিং ও গ্রাউন্ডিং দুটিই আলাদা।
গ্রাউন্ডিং এর ব্যাবহার সঠিক নিয়ম হলো এনার্জির মিটারের বাহিরের নিউট্রাল তারের সাথে সংযোগ করে দেওয়া হয়। আমরা অনেক বাসা-বাড়িতে দেখি মেইনসুচের সাথে গ্রাউন্ডিং কানেকশন করে যা একেবারে ভুল। এই রকম কানেকশনে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে।
ধরুন আপনি মেইনসূচের ভিতরে গ্রাউন্ডিং কানেকশন করলেন সেই সাথে যদি নিউট্রাল দিয়ে মেইন লাইন থেকে কারেন্ট প্রাবিহত হয় তাহলে মিটারে ঐ কারেন্ট খরচ হবে এবং বিল আসবে।এখন যদি সঠিক ভাবে মিটারের বাহিরের নিউট্রাল এর সাথে গ্রাউন্ডিং(আর্থিং) ব্যাবহার করেন তাহলে নিউট্রাল দিয়ে কারেন্ট আসলেও তা পৃথিবীর মাটির বুকে চলে যাবে এনার্জির মিটারের ভিতরে কারেন্ট প্রবাহিত হতে পারবেনা।
আবার অনেকেই আছেন যারা গ্রাউন্ডিং ব্যাবহার করেন না।তাদেরকে আমি অবশ্যই সঠিক নিয়মে গ্রাউন্ডিং ব্যাবহার করতে বলবো।মনে করেন মেইন খুটি থেকে নিউট্রাল তার ছিড়ে গেল তাহলে ফেজ তার দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হবে কিন্তু কারেন্ট নিউট্রাল তার দিয়ে ফিরে আসতে পারবে না।তাই এমতাবস্থায় নিউট্রাল দিয়েও ভোল্টেজ ও কারেন্ট প্রবাহিত হবে।এমতাবস্থায় যদি কেউ এই নিউট্রালের সংস্পর্শে আসে তাহলে তাকে মারাত্মক শক করবে ও শেষমেশ সে মৃত্যুবরন করতে পারে।
আবার যদি বর্জ্রপাতের সময় যদি ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক চার্জ হয় আর ঐ চার্জকৃত বিদ্যুৎ যদি মিটারে আসে তাহলে আপনার চিন্তাভাবনার বাহিরে বিল আসবে।তাই বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য ও নিজের সূরক্ষার জন্য সঠিক নিয়মে গ্রাউন্ডিং ব্যাবহার করা উচিত।
সঠিক মাপের মানসম্মত তার/ক্যাবল ব্যাবহার করা।
বিদ্যুতের সংযোগ ও তারের উপর নির্ভর করেই বিদ্যুৎ বিল কম আসে।
যদি তার নিম্নমানের হয় তাহলে সংযোগ দূর্বল হয়ে নড়বড়ে কানেকশনের জন্য ভোল্টেজ কম/বেশি হতে পারে আর এই লুজ কানেকশনের জন্যই বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি আসে।
আমাদের বাসা বাড়ির ও সকল বিদ্যুৎ সিস্টেমে ফেজ তার দিয়ে উৎস হতে কারেন্ট ও ভোল্টেজ প্রবাহিত হয়ে লোড পর্যন্ত যায় এবং লোড থেকে কারেন্ট নিউট্রাল তার দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আবার পুনরায় উৎসে ফিরে আসে।
আমরা যা বিদ্যুৎ খরচ করি তা নিউট্রাল তার দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিটারে এসে কত ইউনিট খরচ হয়েছে তা হিসাব নির্ধারণ করে।আর ঐ ইউনিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল হিসাব করা হয়।এখন আমরা যদি সঠিক পরিমাপে তার/ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করি তাহলে বিদ্যুৎ বিল অনেকটাই কম আসবে।
সাশ্রয়ী ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যাবহার করা।
আমাদের বাসা বাড়িতে এমন যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করতে হবে যে গুলো বিদ্যুৎ কম ব্যাবহৃত হয় ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়।যেমন বর্তমান বাতির জন্য এনার্জি সাদা বাতি ব্যাবহার করা হয়,এল এডি টিভি,বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ,এসি এই রকম সাশ্রয়ী মূলক ডিভাইস ব্যাবহার করা উচিত।
সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যাবহার।
বর্তমান সৌর বিদ্যুৎ এর ব্যাবহারের ভূমিকা অপরিহার্য ।
এটিতে যেমন কোন প্রকার বিদ্যুৎ বিল আসেনা তেমনি এর ব্যাবহারও অনেক সহজ। যেমন সৌরবিদ্যুতে লোডশেডিং এর ঝামেলা নেই ও এটি পরিবেশ বান্ধব।
সৌরবিদ্যুত কিনতে প্রথমে অনেক খরচ হলেও পরবর্তীতে এটি অনেক বিদ্যুৎ বিল সাশ্রয়ী হয়।যা অব্যশই আপনারা কম-বেশি সকলেই জানেন।
মিটার নিয়মিতো পরিক্ষা করা উচিত ।
আমরা দৈনন্দিন যে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করি তা বৈদ্যুতিক মিটারে হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।তাই আমাদের প্রতিদিন বা প্রতিমাসে মোট কত বিদ্যুৎ ইউনিট খরচ হচ্ছে তা হিসেব রাখবেন।যদি দেখেন আগের মাসের থেকে পরবর্তী মাসে বেশি ইউনিট খরচ হচ্ছে তাহল এই সমস্যার সমাধানের জন্য চেষ্টা করুন কারণ অনেক সময় মিটারের যান্ত্রিক সমস্যার কারনেও ভূল রিডিং আসে।
আবার আপনার কাছে ক্লিপ অন মিটার যদি থাকে তাহলে আপনি নিউট্রাল তারে মিটার দিয়ে চেক করে দেখবেন নিউট্রাল তার দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে কিনা যদি কারেন্ট প্রবাহিত হয় তাহলে গ্রাইন্ডিং সঠিক নিয়মে ব্যাবহার করতে হবে।আর যদি মিটারে ভূল রিডিং দেয় তাহলে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে মিটার পরিবর্তন করে নিবেন।
বিদ্যুৎ অপচয় দূর করতে হবে।
আমরা অনেকেই বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজনের শেষেও ব্যাবহার করে থাকি এইটা আমাদের এক প্রকার বদ অভ্যাস।যেমন দিনের বেলায় ঘরে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো থাকার পরেও আমরা বাতি জ্বালিয়ে রাখি,একই ঘরে অনেক বাতি ব্যাবহার করি,মোবাইল চার্জার সহ সকল ডিভাইসের প্লাগ লাগিয়ে রাখি,এসির তাপমাত্রা অধিক পরিমাণে ব্যবহার করি,দিনের বেলায় দরজা জানালা খুলে রাখলে ঘর এমনিতেই প্রাকৃতিক ভাবে ঠান্ডা থাকবে এমতাবস্থায় ফ্যান না ব্যাবহার করলেও চলবে তারপরেও ফ্যান ব্যাবহার করে থাকি। আরো বিভিন্নভাবে বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করতে হবে।
আমরা যদি আমাদের বৈদ্যুতিক ব্যাবহৃত যন্ত্রপাতি গুলো প্রয়োজন মতো ব্যাবহার করি ও এর ব্যাবহার শেষে বন্ধ করে রাখি তাহলে অবশ্যই বিদ্যুৎ বিল অনেক কম আসবে।
সঠিক ভাবে আর্থিং এর ব্যাবহার
অনেক সময় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে হাত দিলে মারাত্মক শক করে এই গুলো লিকেজ কারেন্ট আর আর্থিং এর কাজ হলো লিকেজ কারেন্টকে নিরাপদে পৃথিবীর মাটির সাথে সংযোগ করে দেওয়া।
আমি আমার গত পোস্টে আর্থিং ও লিকেজ কারেন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি।পোষ্টটি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন – Click Here
এখন যদি আমরা এই লিকেজ কারেন্ট কে না বিন্যাস করি তাহলে আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে।
বৈদ্যুতিক সামগ্রী নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে।
আমরা আমাদের বাড়িতে ফ্রীজ, টিভি,এসি,মোটর,কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিনের মতোন ডিভাইস ব্যাবহার করে থাকি।এখন এই ডিভাইস গুলি যদি যান্ত্রিক ক্রটির কারনে কোন সমস্যা হয় তাহলে আমাদের বিদ্যুৎ অধিক পরিমানে খরচ হতে পারে।
সেজন্য এই ডিভাইস গুলোতে নিয়মত্রান্তিক রেগুলেটর ও ভোল্টেজার ব্যাবহার করা উচিত। আর যদি ডিভাইস গুলি অধিক পুরোনো হয় তাহলে তা মেরামত করা উচিত।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য আরো কয়েকটি কার্যকরি উপায় বা টিপস।
এই কয়েকটি নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ ব্যাবহার করলে ইনশাআল্লাহ আপনার বিদ্যুৎ বিল অনেক কম আসবে সেই সাথে আমাদের দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতিও দূর হবে।
পরিশেষে আর কথা না বাড়িয়ে আজ এইখানেই বিদায় নিচ্ছি আমি
সোহেল আরমান রাজু
আমার সাথে যেকোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারবেন Facebook – Instagram – My Telegram Channel
পোস্টের কোন অংশে ভুলক্রটি হলে সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন ও নিয়মিতো ট্রিকবিডির সাথেই থাকুন এই প্রত্যাশায় বিদায় নিচ্ছি,ধন্যবাদ
আল্লাহ হাফেজ
You must be logged in to post a comment.
Nice
Thanks
গ্রাউন্ডিং কানেকশনের যে পিক দেয়া আছে সেটা ভুল পদ্ধতি
Eitai sothik poddoti….Manush ei vabe kaj korena boley biddut bil beshi ashe…
Vaiya,
Pic e j poddhoti dewa ase eitai sothik.
https://youtu.be/ylKFJ9u2z2Y?si=PpdE8bS7YhUDu5FO
এই ভিডিওটা আগে দেখে তারপর কপি পোস্ট করুন। আগে নিজে জানুন। ভুলভাল না তথ্য দিয়ে নিজে ভালোভাবে গবেশনা করুন
পোষ্ট টি ভালো ভাই তথ্যবহুল এবং দরকারি! বিদ্যুৎ সাশ্রয় হলে আমাদের বিদ্যুৎ বিল কম আসবে কিন্তু যতই সাশ্রয় করি না কেন ভাই লোডশেডিং থেকে আমরা কখনও মুক্তি পাবো না!
Hmm..tobe amra jodi sobai biddut sasroy kori tahole insallah obossoy load-shedding kombe