আমরা অনেকেই মনে করি অন্যসব কীট-পতঙ্গের ন্যায় মৌমাছিও দুই প্রকার হয়ে থাকে। স্ত্রী মৌমাছি ও পুরুষ মৌমাছি। স্ত্রী মৌমাছি সন্তান উৎপাদন করে, আর বাদবাকি কাজকর্ম করে পুরুষ মৌমাছিরা। এটাই অনেক মানুষের বিশ্বাস। কিন্তু আসল কথা হলো, মৌমাছির জীবনচক্র অন্যান্য কীট পতঙ্গের তুলনায় একদম আলাদা।

১৯৭৩ সালে অষ্ট্রিয়ান বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch ‘Physiology of Medicine’ বিষয়ে সফল গবেষণার জন্য চিকিৎবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল মৌমাছির জীবনচক্র। এই গবেষণা চালাতে গিয়ে তিনি এমন সব আশ্চর্জজনক জিনিস সামনে নিয়ে এলেন, যা সাধারণ মানুষদের পুরো বিশ্বাসকে পাল্টে দিলো। তিনি ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে করে দেখিয়েছেন যে, মৌমাছি দুই প্রকার নয়, মৌমাছি আসলে তিন প্রকার। প্রথমটা হলো, পুরুষ মৌমাছি। দ্বিতীয়টি হলো স্ত্রী মৌমাছি। এরা শুধু সন্তান উৎপাদন করা ছাড়া আর কোন কাজ করে না। এই দুই প্রকার ছাড়াও আরো একপ্রকার মৌমাছি আছে। লিঙ্গভেদে এরাও স্ত্রী মৌমাছি তবে একটু ভিন্ন।

আমরা জানি, পুরুষ মৌমাছিরাই মৌচাক নির্মান থেকে শুরু করে মধু সংগ্রহ সব করে থাকে। কিন্তু এই ধারনা ভুল। পুরুষ মৌমাছি শুধু একটিই কাজ করে, আর তা হলো কেবল রানী মৌমাছিদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। মানে, সন্তান উৎপাদনে সহায়তা করা। এই কাজ ছাড়া পুরুষ মৌমাছির অন্য কোন কাজ নেই। আর মৌচাক নির্মান থেকে শুরু করে বাদ-বাকি কাজসমুহ তৃতীয় প্রকারের মৌমাছিরাই করে থাকে। লিঙ্গভেদে এরাও স্ত্রী মৌমাছি, কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে এরা সন্তান জন্মদানে অক্ষম। সোজা কথায়, এদের বন্ধ্যা বলা যায়।

বিজ্ঞানী Karl Von-Frisch এই বিশেষ শ্রেণীর স্ত্রী মৌমাছিদের নাম দিয়েছেন Worker Bee বা কর্মী মৌমাছি। এদের কাজ রানী মৌমাছির থেকে আলাদা। কারণ, রানী মৌমাছির কাজ হলো সন্তান উৎপাদন, আর কর্মী মৌমাছির কাজ সন্তান জন্ম দেওয়া ছাড়া অন্যসব।

আরো মজার ব্যাপার হলো, বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch এটাও প্রমান করেছেন যে, এইসব কর্মী মৌমাছিরা যখন ফুল থেকে রস সংগ্রহে বের হয়, তখন তারা খুব অদ্ভুত একটি কাজ করে।সেটা হলো, কোনো কর্মী মৌমাছি যখন কোনো এক জায়গায় ফুলের উদ্যানের সন্ধান পায় যেখান থেকে রস সংগ্রহ করা যাবে, তখন সেই মৌমাছিটি তার অন্যান্য সঙ্গীদের এই ফুলের উদ্যান সম্পর্কে খবর দেয়।

মৌমাছিটি ঠিক সেভাবেই খবর দেয়, যেভাবে যে পথ দিয়ে সে সেই উদ্যানে গিয়েছিলো। মানে, যে পথে সে এই উদ্যানের সন্ধান পায়, সে পথের কথাই অন্যদের বলে। আর, অন্যান্য মৌমাছিরাও ঠিক তার বলে দেয়া পথ অনুসরণ করেই সেই উদ্যানে পৌঁছে। একটুও হেরফের করেনা।

মোটকথা, Karl Von-Frisch প্রমান করেছেন যে, স্ত্রী মৌমাছি দুই প্রকার। রানী মৌমাছি আর কর্মী মৌমাছি। দুই প্রকারের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। আর, পুরুষ মৌমাছি মৌচাক নির্মান, মধু সংগ্রহ এসব করে না। এসব করে স্ত্রী কর্মী মৌমাছিরাই। এই জিনিসগুলা প্রমান করে তিনি ১৯৭৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান।

মজার ব্যাপার হলো, যে জিনিসটা ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞান প্রমান করেছে, সেই জিনিসটা ১৫০০ বছর আগে আমাদের কোরআন বলে রেখেছে।

কোরআন যেহেতু আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে, তাই আমাদের আরবি ব্যাকরণ অনুসারে তার অর্থ বুঝতে হবে।

কোরআনে মৌমাছির নামে একটি সূরা আছে। যার নাম সূরা আন-নাহল। এই সূরার ৬৮ নাম্বার আয়াতে আছে, ‘(হে মুহাম্মদ) আপনার রব মৌমাছিকে আদেশ দিয়েছেন যে, মৌচাক বানিয়ে নাও পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মান করে, তাতে।’ এখানে সন্তান জন্মদানের কথা বলা হচ্ছে না কিন্তু। মৌচাক নির্মানের কথা বলা হচ্ছে। আর Karl Von-Frisch আমাদের জানিয়েছেন, মৌচাক নির্মানের কাজ করে থাকে স্ত্রী কর্মী মৌমাছি।এখন আমাদের দেখতে হবে কোরআন কোন মৌমাছিকে এই নির্দেশ দিচ্ছে? স্ত্রী মৌমাছিকে? নাকি পুরুষ মৌমাছিকে?

আরবি ব্যাকরণে, পুরুষ মৌমাছিকে মৌচাক নির্মান কাজের নির্দেশ দিতে যে ক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা হলো ‘ইত্তাখিজ’ আর স্ত্রী মৌমাছির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ‘ইত্তাখিজি’।
অত্যন্ত আশ্চর্জনক ব্যাপার হচ্ছে, কোরআন এই আয়াতে ‘মৌমাছিকে নির্দেশ দিতে ‘ইত্তাখিজ’ ব্যবহার না করে, ‘ইত্তাখিজি’ ব্যবহার করেছে। মানে এই নির্দেশটা কোরআন নিঃসন্দেহে স্ত্রী মৌমাছিকেই দিচ্ছে, পুরুষ মৌমাছিকে নয়।

শুধু এই আয়াত নয়, এর পরের আয়াতে আছে ‘অতপর, চোষন করে নাও প্রত্যেক ফুল থেকে এবং চল স্বীয় রবের সহজ-সরল পথে’।

চোষণ বা পান করার ক্ষেত্রে আরবিতে পুংলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ক্বুল’ শব্দ, আর স্ত্রীলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ক্বুলি’। কোরআন এখানে ‘ক্বুল’ ব্যবহার না করে ‘ক্বুলি’ ব্যবহার করেছে। ‘সহজ সরল পথে’ চলার নির্দেশের ক্ষেত্রে পুংলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত শব্দ ‘ঊসলুক’, এবং স্ত্রীলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ঊসলুকি’। মজার ব্যাপার, কোরআন ‘ঊসলুক’ ব্যবহার না করে, ‘ঊসলুকি’ ক্রিয়া ব্যবহার করেছে। মানে, নির্দেশটা পুরুষ মৌমাছির জন্য নয়, স্ত্রী মৌমাছির জন্য।

আরো মজার ব্যাপার হলো, এই আয়াতে কোরআন মৌমাছিকে একটি ‘সহজ সরল’ পথে চলার নির্দেশ দিচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, তাদের কেনো সহজ সরল পথে চলার নির্দেশ দেওয়া হলো?

বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch মৌমাছিদের ব্যাপারে যে আশ্চর্যজনক ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন তা হলো, তারা ঠিক যে পথে কোনো ফুলের উদ্যানের সন্ধান পায়, ঠিক একই পথের, একই রাস্তা অন্যদের বলে দেয়।কোন হেরফের করে না। অন্যরাও ঠিক সে পথ অনুসরণ করে উদ্যানে পৌঁছে। এটাই তাদের জন্য সহজ-সরল পথ। কোরআনও ঠিক এই কথাই বলছে।

যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয় যে, কোরআন কি এই জিনিসগুলো বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch এর থেকে নকল করেছে? তখন উত্তর হবে, না। কারন, তিনি এসব প্রমান করেছেন মাত্র সেদিন, ১৯৭৩ সালে। আর কোরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৫০০ বছর আগে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন নিরক্ষর মুহাম্মদ (সাঃ) এই বৈজ্ঞানিক ব্যাপারগুলো ঠিক কোথায় পেলেন? কোরআন কেনো এই নির্দেশগুলো পুরুষ মৌমাছিকে দিলো না? কেনো স্ত্রী মৌমাছিকে দিলো?

যদি এই কোরআন সুপার ন্যাচারাল কোন শক্তি, যিনি এই মৌমাছির সৃষ্টিকর্তা, যিনি মৌমাছিদের এই জীবনচক্রের জন্য উপযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন তার নিকট থেকে না আসে, তাহলে ১৫০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে বসে কে এই তথ্যগুলো বলতে পারে?

যে জিনিস ১৯৭৩ সালে আবিষ্কার করে বিজ্ঞানি Karl Von-Frisch নোবেল পেলেন, তা কোরআনে বহু শতাব্দী আগেই বলা আছে। পরিশেষে বলা চলে, আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞান দিনশেষে কোরআনের সাথেই এসে কাঁধে কাঁধ মিলায়।

4 thoughts on "[কোরআন ও বিজ্ঞান] মৌমাছির জীবনচক্র নিয়ে মাথা ঘুরে যাওয়ার মত কোরআন ও বিজ্ঞানের অজানা তথ্য"

  1. MD Musabbir Kabir Ovi Author says:
    আলহামুলিল্লাহ বেশ ভালো ছিল
    1. Masum Billah Author Post Creator says:
      ধন্যবাদ
    2. MD Musabbir Kabir Ovi Author says:
      আপনাকেও ধন্যবাদ
  2. MD Shakib Hasan Author says:
    সুবহানাল্লাহ

Leave a Reply