মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য সংক্রান্ত প্রশ্নে কৌতুহলিদের কৌতুহলের শেষ নেই। তবে বলাবাহুল্য যে, মহাবিশ্ব বলতে অনেকে শুধু পৃথিবীকেই বুঝে থাকে। অথচ পৃথিবী হলো বিশাল মহাবিশ্বের ক্ষুদ্রতম একটি অংশ মাত্র। পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য, গ্যালাক্সি এবং অন্য যা কিছু রয়েছে, তাদের বাসস্থানসহ এই সবকিছু মিলে গঠিত জগতকেই বলা হয় মহাবিশ্ব। এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি নিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক তথ্য হলো ‘বিগ ব্যাং থিওরি’। এই থিওরি অনুসারে একসময় আমাদের মহাবিশ্বের চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র এবং অন্যান্য সবকিছুই একত্রে পুঞ্জিভূত হয়ে একক বস্ত্তপিণ্ড অবস্থায় একটি ঘন বিন্দুবৎ রূপে ছিলো। সহজ বাংলায় বলতে গেলে, বর্তমান মহাবিশ্বে পৃথক পৃথক অবস্থায় যা কিছু আছে, এসব তখন এরকম পৃথক ছিলো না, বরং সবগুলো একসাথে মিলে একটি জমাট বস্ত্ত ছিলো। পরে তা এক প্রচন্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সূচনা হয়।
এই তথ্যটি বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী জর্জ ল্যমেত্র্ ১৯২৭ সালে সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন। অতঃপর ১৯২৯ সালে এডুইন হাবল তার আবিষ্কৃত ‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ’ দ্বারা পর্যবেক্ষন করে প্রমাণ করেন যে, মহাকাশের গ্যালাক্সিগুলো ক্রমাগত পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আর এর কারণ তাদের নিজস্ব কোনো বেগ নয়। বরং, স্থানের সম্প্রসারণে নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, প্রতিনিয়ত এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার মতে, পূর্বের সেই বিস্ফোরণ তথ্যটি সত্য এবং এই বিস্ফোরণের ফলেই মহাবিশ্ব এখন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। তিনি এটি সত্যায়ন করেন যে, বিগ ব্যাং থিওরি অনুযায়ী একক বস্ত্তপিণ্ড একটি বিন্দুবৎ হতেই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, সম্প্রসারণশীল বিশ্বকে যদি সময়ের সাথে পিছিয়ে নেয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে মহাবিশ্বের সবকিছু একটা বিন্দুতে এসে পুঞ্জিভূত হবে।
উপরোক্ত তথ্যগুলো থেকে দুইটি মূল তথ্য সামনে আসে। প্রথমতঃ একটা বিন্দুবৎ থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এখনও চলমান। তথ্য দুটি খুব আশ্চর্যজনক হলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে, টেলিস্কোপ ও বিভিন্ন চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে যে তথ্য বিজ্ঞান মাত্র কয়েক বছর আগে আমাদের জানিয়েছে, কোরআনে তা দেড় হাজার বছর আগে থেকেই লিপিবদ্ধ রয়েছে।
সূরা আল-আম্বিয়ার ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘‘কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল। অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম।’’ উক্ত আয়াত দ্বারা পরিষ্কারভাবেই ১ম তথ্যটি বুঝে আসে যে, মহাবিশ্বের সূচনা একটা বিন্দুবৎ থেকেই হয়েছে। অর্থাৎ, বিগ ব্যাং।
সূরা আয-যারিয়াতের ৪৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমি স্বীয় শক্তিবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চই আমি এর সম্প্রসারণকারী।’’ এখানে সম্প্রসারণ অর্থে আরবি ‘মুসিউন’ শব্দটি হলো চলমান বিশেষণ। যা ২য় তত্ত্বানুযায়ী মহাবিশ্বের চলমান সম্প্রসারণের প্রতি ইঙ্গিত করে।
খুব পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে মহাবিশ্ব সৃষ্টি সংক্রান্ত বিজ্ঞানের আধুনিক তথ্যগুলো আগে থেকেই কোরআনে বিদ্যমান রয়েছে। ভেবে দেখুন, মাত্র কয়েক বছর আগের আবিষ্কৃত এই তথ্যগুলো দেড় হাজার বছর আগের কোরআনে মরুপ্রান্তরের কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে আসা তো কোনভাবেই সম্ভব নয়। এটি একমাত্র সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে এসেছে বলেই সম্ভব।
আশাকরি উত্তরটা পেয়েছেন।