*বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম*
কি হবে আগামী বিশ্ব
–শাফিউল আলম
ধাপ! ধাপ!! ধাপ!!!
মুখে কিছু একটা শুখানো হলো , এরপর আর সেন্স নেই !
১দিন পর…….
রাজা ছাদে দাড়িয়ে পান করতেছে ! সামনে ধুধু এলাকা ! স্লো মশানে এক ঢোক গিলতেছে আর কিছু একটা ভাবতেছে । রাস্তা দিয়ে বহু মানুষ যাচ্ছে আসতেছে গরু গাড়ী করে । চোখ লাল হয়ে আছে রাজার । হাতে থাকা কাষার গ্রাস দিয়ে , এক ঢোক করে গিলছে অথপর, দম নিচ্ছে । এক পলকে কিছু একটা দেখছে বলে মনে হচ্ছে । পরনে রাজার পোশাক গলায় মালা । পিছন থেকে কেও একজন হাত দিতেই কাষার গ্লাস পরে গেল হাত থেকে ! পিছন ফিরে ঘুরলেন ।
দেখলেন , তার স্ত্রী । বললেন, কি গো তোমাকে অনেক চিন্তিত দেখছি কোন কথা নেই , চুপ চাপ একা একা !
রাজা বিশ্মত হয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলেন না , কারন তার চুপচাপ থাকার অবস্থা গত তিন দিন যাবত । রাজা তার বিবির কাধে হাত দিয়ে বললেন , আমি জানিনা আমি ঠিক করেছি কি না !
একথা বলে রাজা প্রস্থান করলেন । রানী বেশ চিন্তিত রাজা কিছুই খোলাশা করে বলছেন না । কি হয়েছে তার ? কেন সে নিরব ! ঝুড়ি ভর্তি ফল , মাঠ ভর্তি ফসল , গোয়াল ভর্তি গরু সবই তো তার আছে । সে কেন এত চিন্তত ! কি হয়েছে তার ?
পিছন থেকে মন্ত্রীর ডাক: সালাম আম্মাজান , !
রাণী পিছণ ফিরে তাকালো , বলল: কি হয়েছে ?
মন্ত্রী: আম্মাজান রাজা কে বেশ চিন্তত , রাজসভাতেও দেকা যাচ্ছে না কেমন জানি তার চাল-চলণ হয়ে গেছে । কি হয়েছে একটু বলবেন ?
রাণী: সে নিয়ে তোমার মাথা ঘামাতে হবে না । যাও নিজের কাজ করো ।
মন্ত্রী বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে , চলে এলো । রাণী কিছু একটা আন্দাজ করতে পাচ্ছে । কিছু একটা রাজ্যে হারাতে বসেছে রাজা । তা না হলে এমন হত না । আগের মত তার কথা নেই , সমস্ত দিক থেকেই তিনি পরিবর্তন দেখা দিয়েছে ।
—
চোখ খুলতেই উসমানের চোখের সামনে ভেষে উঠলো কোরআন শরীফ এর আয়াত , সূরা ইমরান-১৪৫ নং আয়াত “আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে” ।
তিনি হসপিটালের রুমে ।কু………..কু শব্দ হচ্ছে মেশিন এর ।
মুখে অক্সিজেন মাস্ক । আর দেয়ালে , লিখা উক্ত কোরআনের আয়াত । খুব কষ্ট হচ্ছে । ডাক্তার অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিলো । সামনে কিছু লোক যাদের কে উসমান সঠিক চিনতে পারছেনা । কিন্তু তিনি কোথায় এটি ঠিক বুঝতে পারছেন না ।
প্রথমেই মাথা ঘুড়ালেন ডান পার্শে সেখানে দেখতে পেলেন , আবার আরেকটি আয়াত , সূরা আন নিসা এর ৭৬ নাম্বার আয়াত “যারা ঈমানদার তারা সংগ্রাম করে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা সংগ্রাম করে তগুত প্রতিষ্ঠার জন্য । হাফেজ সাহেব আবার বাম দিকে ঘুরলেন দেখলেন সেখানে কোরআন শরীফের আরেকটি আয়াত যেটি সুরা আন নিসা ৭৬ নাম্বার আয়াতের শেষের অংশ “নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত অন্যন্ত দূর্বল”!
হাফেজ উসমান আয়াত গুলো দেখে উঠার চেষ্টা করতেই ডাক্তার থামিয়ে দিলো । বলল: শুয়ে থাকুন ।
তখনই , হসপিটালের টেলেভিশন থেকে আব্দুর রহমান আস সুদাইস এর কন্ঠে আরেকটি কোরআনের আয়াত তার কানে এল, সেটি ছিল সূরা ত্বালাক এর ৩ নাম্বার আয়াত এর মাঝের অংশ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট” !
তিনি কিছুই মনে করতে পারছেন না ! শুয়ে পরলেন ! কি হয়েছিল তার সাথে মাথার নিচে হাত দিতেই দেখলেন মাথায় ব্যান্ডেজ । মাথা গেল ঘুড়ে ! পা আলোক করতেই দেখলেন এক পায়ে মোটা করে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে । অথচ, উনি নিজেও জানেনা আসলে কি হয়েছে এবার ডাক্তারের দিকে তাকালেন । বললেন: আমি কোথায় ?
ডাক্তার: ১ ঘন্টা পর আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে !
এই কথা বলে চলে গেলেন । মাওলানা উসমান চিন্তত । কোথায় এলো , ! তিনি ছিলেন , মাথায় কিসতি টুপি , লম্বা পান্জাবী , সাদা ট্রাউজার , লম্বা রুমাল পরিহিত এক যুবক । মাদ্রাসা থেকে কামেল করেছেন মাত্র , ২ বছর । যুবক বয়সে কোরআন শরিফ হাতে নিয়ে মাহফিলের মন্চ থেকে শুরু করে জুমার খুতবা পর্যন্ত তার গর্জন চলে । তার গর্জনে বাতিল পন্থিদের কলিজা গলার কাছে চলে আসে ।
হটাত , দরজা খুলল , কেও ! চোখ খুললো হাফিজ উসমান । ব্লু জ্যাকেট পরিহিত যুবক ২ টি । বলল: এখন চলুন অনেক বিশ্রাম করেছেন ।
হাত ধরে উঠার চেষ্টা করতেই চিরিত!!
মাথায় ব্যথা এখন বুঝা যাচ্ছে । তাকে অজ্ঞ্যান করা হয়েছিল । চার দিকে মাথা ঘুড়তেছে । তিনি এখন মানুষ গুলোকেও ঠিক ভাবে দেখতে পাচ্ছেন না । সব তালগোল পাকিয়ে গেল মনে হয় এতক্ষণ ঠিকই ছিল । হাতে স্ট্যান্ড দেওয়া হল দাড়ানোর জন্য । তিনি দেখলেন তার শরীর এ মাত্র সাদা ট্রাউজার আর পাতলা গেন্জি । উনি বললেন: আমার পান্জাবি , টুপি ও ঘাড়ের উপর দেওয়ার সেই কালো রুমাল কোথায় ?
অপরিচিত যুবক: সব দেওয়া হবে আপনাকে আগে পার্শের রুমে চলেন ।
উসমান স্ট্যান্ডের উপর ভর দিয়ে স্লো মশানে আসতে আসতে যাচ্ছে এগিয়ে । কিছুই ঠিক লাগতেছেনা । মনে হয় সব শুধু ঘুড়তেছে । পার্শের রুমে গিয়ে তার পাজ্ঞাবী , টুপি ফিরে পেল । তা পরিহিত করে আবার যুবকদের পিছনে হাটতে লাগলো ।
যেয়েই দেখলো এক ঘোড়াগারি । তার উপর উঠতে হবে তাকে । এক পা ভাংগা তার উপর ঘোড়াগাড়ি । সব যেন ভ্যাবাচেকা হয়ে গেল । ঠিক দই দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার মত । গাড়িতে উঠার পর উনি বললেন: আমি কোথায় ? আর কেনই বা এখানে আমি ?
এক যুবক বলল: মুল্লা মানুষ বেশি প্যাচাল পারলে তো সমস্যা ! আহা ! বেশি প্যাচাল পারেন দেখেই আজকে ঠ্যাংডা লুলা ! হাহা
অট্ট হাসি শুরু করলো ২ জন । উসমান এর মেজাজ খারাপ ! চুপ করে আছে । তার পায়ের ব্যাথা প্রচন্ড । কি করবে বুঝতেছেনা সে ! তার উপর অজ্ঞানের ভাব । মাথা থেকে মৃদ্যূ রক্ত বের হচ্ছে । সাদা কাপড় রক্তে লাল হয়ে গেল । যুবকদের সেদিকে কোন খেয়াল নেই । কিছুক্ষন পরেই দেখলো মাটির ঘর উপরে লিখা জেলখানা ! উসমান কিছু টা অনুমান করতে পেলো কি কাহীনি । তবুও কিছু টের পাচ্ছেনা ।
—
রাজার পার্শে গিয়ে রাণি বসলো । রাণি বলল:- কি হয়েছে তোমার আমাকে খুলে বল ?
রাজা গম্ভির মনে তার মুচ একবার ডলে রানীর দিকে তাকালো । বলল: সেই ভবিষ্যত বাণীটি আমার ঘুম ভাংগিয়ে দিয়েছে ।
রাণী: কোন ভবিষ্যত বানী ?
রাজা বিষ্মীত হয়ে চুপ হয়ে গেলেন । টেবিলের উপর থেকে একটি সিগারেট নিয়ে আগুন ধরালেন এবং রাণীর দিকে তাকিয়ে বললেন:- উসমান কে গ্রেফতার করার আগে থেকেই আমার হাত কাপতেছিল । কেন জানিনা ! ওকে গ্রেফতার করার পর আমার মণ টা কেন জানি ভার । কিছুদিন আগে কোন এক বুযুর্গে এর কিছু ভবিষ্যত বাণী তুলে ধরেছিল আর সেটি আমার চোখে পরে আমি হতবাক হয়ে যায় । সেটি লিখা হয়েছে ৮০০ বছর আগে কিন্ত তা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে ।
রাণী: কি সেই ভবিষ্যত বাণী ?
রাজা ভুরু টি কুচকিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়ে বলল: সেটি আমি জানিনা তখনই শুনেছিলাম তখনই মনে ছিল মাথায় ।
রাণী: কি যা তা বলতেছে ? এক মুল্লার জন্য , তুমি চিন্তত ? ভুলে যাও ঐসব । এজন্য তুমি রাজ্যের সব কাজ বাদ দিয়ে দিয়েছে ? হূর ! চলো ভাত খাবো !
রাজা: তুমি যা ভাবছো বিষয় টা তা নয় ! ওর মুখ থেকে যখন আমি চর্মচক্ষু দিয়ে তার বক্তব্য দেখেছি এবং নিজের কাণে শুনেছি সেটি ছিল ভয়ংকর । কিন্তু কি যে সেটি ছিল সেটিই তো আমার মনে হচ্ছে না । তবে কিছু একটা বলেছিল ।
রাণী: চলো খাবে ! চলো ।
রাজা বুঝতে পারলো রাণী তার বিষয়টা খুব গুরুত্ব দিচ্ছে না । সে সিগারেট ফেলে দিয়ে উঠে দাড়ালো এবং বলল: চলো ।
—
মাওলানা উসমান কে ঢুকানো হল , একটি মোটা শিকওয়ালা কারাগারে । উপরে মর্শাল জালানো । একটি টেবিল ২ টি চেয়ার । পার্শে অনেক কয়েদি রয়েছে । তারা চেয়ে আছে । মাওলানা উসমান ছিলেন অনেক আলোচিত ব্যক্তি । বাস্তবযুগ কে নিয়ে বাস্তবসত্য গুলো উনি সবসময় তুলে ধরার চেষ্টা করত । এজন্য তার দুষমণ থেকে শুরু করে তার শত্রু পর্যন্ত তাকে খুব ভালোভাবেই মনে রাখত ।
তাকে বসানো হল চেয়ারে ।মাথার উপরে মর্শাল । ব্যানেজের উপরে মাথার টুপি । ব্যাথায় অনুভব হচ্ছে । খুলে ফেলল । ২ জন যুবক এর একজন বলল: এখানে বসে থাকেন । আপনার রাত্রের খাবার এখানে দেওয়া হবে একটু পর এরপর কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কতোয়াল সভাপতি আপনার সাথে এসে কথা বলবেন । আমরা গেলাম ।
মাওলানা উসমান চুপ করে শুধু শুনলেন । যুবক দুটি চলে গেল । চোখের চশমা খুলল । মনে হল ২ দিন যাবত তিনি নামায পরেন নি । অচেতন ছিলেন । আকাশ দিকে তাকালেন । দেখলেন , তিনি যেই ঘড়ে আছেন তার কোন ছাউনি নেই ! খোলা ! মাটির ঘড় দেওয়াল অনেক উচু । যা পালিয়ে টপকানোও সম্ভব নয় ! উপরে আকাশ দেখা যাচ্ছে । মাওলানা উসমান এক পলকে তাকিয়ে থাকলেন । একপলকে , এক নজরে । তার মন হল তার চারপার্শে কেও নেই । দু”হাত তুলে দিলেন আকাশ মন্ডলীর দিকে , দু চোখ ভিজে গেল । হাত তোলা মাত্রই বৃষ্টি শুরু হল ! খোলা ঘড় , বেষ্টনী দেওয়া মর্শাল শিক এর দরজা ! অপলক তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে । হটাত , তার মনে হল কোরআন শরীফের একটি আয়াত “তোমাদের প্রভু বলেন, “আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।””
চোখ আরও ভিজে গেল উসমান এর । চিতকার দেওয়ার মত শক্তি তার নেই । হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আসমানের দিকে তাগ করলো এরপর এই দু’টি হাত মুখে মাসেহ করে চোখ মুছলো । কেও একজন বলল: খাবার নেন ।
এই কথা বলে , শিক এর দরযার ফাক দিয়ে খাবারের কাসার প্লেট দিল এবং চলে গেল । যেখানে আছে একটি রুটি এবং এক মুষ্টি খেজুরের গুড় । উসমান আবার আকাশের দিকে তাকাল , তার মনে হল আরেকটি কোরআনের আয়াত যেটি সুরা হূদ এর ৬ নাম্বার আয়াত “এই পৃথীবিতে এমন কোন বিচরণশীল জীব নাই যার রিযক এর দায়িত্ব তোমার আল্লাহ নেই নায়” !
প্লেট টা কাছে নিল উসমান । বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলো ! এর মদ্ধেই এল কতোয়াল ।
………………………………………………………………………………………………………………………চলবে ……………………………………………………………………………………
বি:দ্র: ঈমান প্রিয় ভাইদের ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন বাকি পর্ব গুলো চালিয়ে যাবো !
https://trickbd.com/islamic-stories/615666