??[কোরআনের আলো পর্ব ৩৬]খাপ খোলা তলোয়ার সম্পর্কে জানতে পারবো ??

পাপে আর পাপে ছেয়ে গেছে আরবের সমাজ।

মানুষের মধ্যে হানাহানি, যুদ্ধ, রক্তারক্তি লেগেই আছে।

মানুষের হেদায়েতের জন্যে আল্লাহ পাক নবীকে (স) পাঠিয়েছেন। তিনি মানুষকে আলোর পথে ডাকছেন। ডাকছেন মুক্তির পথে।

নবীর (স) ডাকে যারা সাড়া দিলেন, তাঁরা আলোর সন্ধান পেলেন। নবী (স) সাথে তাঁরাও ইসলাম প্রচার করেন।

কিন্তু গোপনে গোপনে। চুপে চুপে।

কাফেরদের অত্যাচারের ভয়ে কেউ ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করেন না। আসলে, তখন সেই পরিবেশও ছিল না। পবিত্র কাবা ঘরে কেউ নামাজও আদায় করতে পারতেন না।

নামাজ আদায় করতেন তাঁরা গোপনে গোপনে।

কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

সময় পাল্লে যায়।

শুরু হলো ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার আর একটি নতুন অধ্যায়।

এতদিন কাফেরদরে ভয়ে কেউ ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করতে পারেননি।

কিন্তু ওমর?

ইসলাম গ্রহণের পর তিনিই সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন, সবাইকে জানিয়ে দিলেন ইসলাম গ্রহণের কথা।

নির্ভীক ওমর! দুঃসাহসী ওমর!

ইসলাম গ্রহণের আগে ওমর সম্পর্কে এ রকম ধারণা ছিল মক্কার সকল মানুষের।

ওমরের তলোয়ারকে ভয় করে না, এমন লোক মক্কায় নেই।

সেই দুঃসাহসী ওমর ইসলাম গ্রহণ করেছেন!

ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন!

এই প্রথম কাবাঘরে প্রকাশ্যে নামাজ আদায়ের ঘটনা ঘটলো।

কাফেররা শুনলো সবই। দেখলো সবই। দেখলো, সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে দুঃসাহসী ওমর কাবায় যাচেনছন! নামাজ আদায় কাছেন।

কাফেররা দেখলো, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করলো না। কেউ বাধা দিতে ছুটে এলো না।

কে আসবে ওমরের সামনে?

কে আসবে তাঁর খাপ খোলা তলোয়ারের সামনে? এমন হিম্মত কার আছে?

ওমরের হুংকার আবু জেহেল স্তম্ভিত হয়ে গেল। কিন্তু প্রতিবাদ করতে সাহস পেল না।

ওমর মিথ্যা ও পৌত্তলিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে জিহাদ ঘোষণা করলেন।

ওমর তাঁর সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে মক্কায় প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। কাফেরদের নাকের ডগা দিয়ে মক্কার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে যান ওমর তাঁর সঙ্গী-সাথীরা। তাঁরা একত্রে কাবায় নামাজ আদায় করেন।

কাবাঘরে তাওয়াফ করেন।

কেউ বাধা দিতে এলে তাঁরা তা প্রতিহত করেন।

মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার আগে ওমর প্রথমে কাবাঘর তাওয়াফ করেন। তারপর কুরাইশদের মধ্যে গিয়ে চিৎকার করে বলেন,

কেউ যদি তার মাকে পুত্রশোকে কাঁদাতে চায়, তাহলে সে যেন এ উপত্যকার অপর প্রান্তে আমার মুখোমুখি হয়।

ওমরের তলোয়ারের ভয়ে তারা প্রকম্পিত।

প্রাণ হারাতে কে যাবে তাঁর তলোয়ারের সামনে।

হযরত ওমর!

দুঃসাহসী ওমর!

নির্ভীক ওমর!

নবীকে (সা) তিনি ভালোবাসতেন প্রাণ দিয়ে। তাঁর সে ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না।

নবীর (সা) সাথে তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধেই অংশ নিয়েছেন এবং বীরত্বের সাথে কাফেরদের মুকাবেলায় যুদ্ধ করেছেন।

ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা)।

আর দ্বিতীয় খলিফা হলেন হযরত ওমর (রা)।

দশ বছর খিলাফতকালে তিন গোটা বাইজাইনটাইন, রোম ও পারস্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটান।

তিনি বহু শহর এবং বহু রাজ্য জয় করেন।

অর্ধেক জাহানের শাসনকর্তা হযরত ওমর।

কিন্তু ক্ষমতার মোহ তাঁকে কখনোই সত্য থেকে দূরে ঠেলে দেয়নি।

কিন্তু শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সচেতন।

তিনি নিজের চোখে মানুষের সুখ-দুঃখ দেখার জন্যে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন। তিনি এবং রাতের গভীরেও। তাঁর শাসনামলে মানুষ সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতো। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো।

ভালো মানুষেরা ওমরকে ভঅলোবাসতো প্রাণ দিয়ে। আর দুষ্ট ও ইসলামের শত্রু ওমরের নাম শুনতেই ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠতো।

হযরত ওমর!

আলহামদুলিল্লাহ। আশা করি সকলের ভালো লেগেছে।