মহাকাশ স্টেশন আসলে কোন স্টেশন না,
এটি একটি বিশাল মহাকাশযান। অন্যভাবে
বললে আবার একে কৃত্রিম উপগ্রহও বলা
যায়। যেটা পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ২২০ মাইল
উপরে একটি অক্ষপথ ধরে পৃথিবীকে
প্রদক্ষিণ করে বেড়াচেছ। এই
মহাকাশযানে মহাকাশবিজ্ঞানীরা একটি
নির্দিষ্ট সময় ধরে সেখানে বসবাস করেন
এবং মহাকাশ বিষয়ক গবেষণা করেন। এই
গবেষণাগুলো মূলত NASA- ই পরিচালনা করে
থাকে। এ ধরণের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য
মহাকাশকে আরও ভালোভাবে চেনা
জানা।
মহাকাশ স্টেশনগুলো বেশ কয়েকটি খন্ডের।
১৯৯৮ সালে রাশিয়ান রকেটে করে প্রথম
মহাকাশ স্টেশনের একটি খন্ড মহাকাশে
নিয়ে যাওয়া হয়। এটাকে স্থাপন করার
মাধ্যমেই প্রথম মহাকাশ স্টেশনের
গোড়াপত্তন করা শুরু হয়। প্রায় দুই বছর
নানান খন্ড এর সাথে জুড়ে দেওয়ার পরে
এটি মানুষের বসবাস করার এবং কাজ করার
উপযোগী হয়। কিন্তু এটার কাজ
পুরোপুরিভাবে শেষ হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত
লেগে যায়।
মহাকাশ স্টেশন আসলে একটি বিশাল
বাড়ি। যা বেশ কয়েক খণ্ডে বিভক্ত।

প্রতিটা খণ্ড এতো বড় ও ভারী যে রকেটে
করে এগুলোকে একবারে নেয়া যায় না।
এমনিতেও মহাকাশ স্টেশন বেশ বড়ই হয়।
প্রায় একটি পাঁচ বেডরুমের বাসার সমান!
সেই সঙ্গে দুটা বাথরুম, জিমনেসিয়াম
থাকলে যত বড় হতে পারে তত বড়! তবে শুধু
থাকার জন্যই কিন্তু মহাকাশ স্টেশন করা
হয় নাই। ওখান থেকে গবেষণা চালানো হয়।
তাই, গবেষণাগার, যন্ত্রপাতি ইত্যাদিতে
ঠাসা থাকে পুরা মহাকাশ স্টেশনটা। পুরা
জিনিসটা আসলে একটা ফুটবল মাঠের
সমানই বড় হয়। তাছাড়া একটা স্টেশনে
গবেষণাগার শুধু একটি দেশেরই থাকে না।
কয়েকটি দেশের কয়েকটি গবেষণাগার
থাকে। সব মিলে মহাকাশ স্টেশনের ওজন
হয় প্রায় এক মিলিয়ন পাউন্ড।
এত বড় যার আকার, সেই স্টেশন কিভাবে
চলে বা চালাবার শক্তি কোথা থেকে
আসে? এই স্টেশন চলার শক্তি শুধু সেই
জোগান দিতে পারবে যার নিজের শক্তি
অসীম এবং তা শেষ হবার ভয়ও নাই।
মহাকাশ স্টেশনের শক্তির যোগান দেয়
সূর্য। স্টেশনের দুইপাশে দুইটা পাখার মতো
সোলার প্যানেল লাগানো থাকে
যেগুলোকে দেখতে পাখা মনে হলেও
আসলে এগুলো সৌরকোষের সমষ্টি।
নাসা এই মহাকাশ স্টেশনগুলোকে মূলত তিন
ধরণের কাজে ব্যাবহার করে।
১। মহাকাশ যাত্রীদের বসবাসের জন্য। এক
একটি স্টেশনে ৬ জন করে মহাকাশ যাত্রী
বসবাস করতে পারে।
২। মহাকাশ কেন্দ্রে যারা যান যদিও
তাদের মহাকাশ যাত্রী বলা হয়েছে কিন্তু
তাই বলে তারা কিন্তু কেউই সাধারণ
যাত্রী নন। তারা প্রত্যেকেই মহাকাশ
বিজ্ঞানী! যারা মহাকাশে বসবাস করে
যার যার গবেষণাগারে মহাকাশ নিয়ে
গবেষণা করে থাকেন। যে গবেষণা
পৃথিবীতে বসে করা সম্ভব না।
৩। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, নাসা
মহাকাশের আরও অজানা অংশকে জানার
জন্য মহাকাশের আরও গভীরে মানুষ
পাঠাতে চায়। এই স্টেশনগুলো সেই অর্থে
অপেক্ষার স্থান না হলেও এখানে যারা
বসবাস করে তারা অজানা মহাকাশ এবং
পৃথিবীর মানুষের মধ্যে একটি যোগাযোগ
সেতু তৈরির কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

Leave a Reply