আমরা আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনধারায় সামান্য বৈচিত্র্য আনতে বিশেষ কোনো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনকে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে বা ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করে থাকি। যেমন-ভ্যালেন্টাইন ডে, মা দিবস, বাবা দিবস প্রভৃতি। প্রযুক্তিবিশ্বেওএর ব্যতিক্রম দেখা যায় না। যেমন- ৯ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে পালিত হয় সেফার ইন্টারনেট ডে (Safer Internet Day) হিসেবে। বিগত ১৩ বছর ধরে সারা বিশ্বের সাইবার অ্যাডভোকেট ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে সতর্ক থাকার কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য পালন করা হয়। বর্তমানে এ দিনটি বিশ্বের ১২০টির বেশি দেশে পালন করা হয়। এসব ক্ষেত্রে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুই হলো শিশুদেরকে ক্ষতিকর সাইট থেকে নিরাপদ রাখা।
কিছু অপরিহার্য নিয়ম মেনে ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকুন
০১. নিয়মিতভাবে ঘনঘন আপডেট করা
আপনার অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার অথবা অন্য কোনো সফটওয়্যারে যদি ভলনিয়ারিবিলিটি থাকে,তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনার সিস্টেমটি দুষ্টুচক্রের দখলে চলে যেতে পারে যখন-তখন। তবে এতে উদ্বিগ্ন থাকার কোনো কারণ নেই। কেননা, সফটওয়্যার প্রস্ত্ততকারকেরা সফটওয়্যারের ওইসব হোল খুব শিগগিরই মেরামত করে এবং এর আপডেট উন্মুক্ত করে। তবে এ আপডেট সত্যিকার অর্থে কোনো কাজেই লাগবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তা আপনার সিস্টেমে ইনস্টল করছেন। সুতরাং, কোনো সফটওয়্যারের আপডেট অবমুক্ত হওয়ার সাথে সাথে সিস্টেমের নিরাপত্তার স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব তা ইনস্টল করে নিন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ওএস এবং অ্যাপসকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হওয়ার জন্য সেট করা।তবে এ কথা সত্য, জাভা এবং অ্যাডোবি অ্যাক্রোবেটকে আপডেট করা বেশ ঝামেলাদায়ক।আবার কোনো কোনো আপডেট মাঝেমধ্যে অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
০২. অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যাকে আপডেট করে সবশেষ ভার্সন রাখা
এখনকার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলো আগের ইনস্টল করা সফটওয়্যারগুলোর মতো তেমন নিরাপদ নয়। ফলেঅ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করা মানেই যে আপনি ব্যবহৃত ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকবেন এমন কোনো কথা নেই।‘জিরো ডে’ থ্রেডের ক্রমবৃদ্ধির আগে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলো তাদের সফটওয়্যারকে আপডেট করে আসছে নিয়মিতভাবে।এসব সফটওয়্যার ৯০ শতাংশের বেশি থ্রেডকে মোকাবেলা করতে পারে। যদি আপনি কিছু অর্থ খরচ করে বিটডিফেন্ডার বা ইন্টেলের ম্যাকাফি কিনতে অনাগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে ফ্রি ডাউনলোড করে নিতে পারেন এভিজি বা অ্যাভাস্ট নামের অ্যান্টিভাইরাসটি, যা হবে যথার্থ সমাধান।
০৩. স্ক্যামে আকৃষ্ট না হওয়া
ম্যালওয়্যার অথার এবং সাইবার ক্রোকসের চেয়ে বেশি বড় কিছু হতে পারে কী? আপনার লগইনে হামলাকারীদের পক্ষে অ্যাক্সেস করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আপনাকে বোকা বানানো, যাতে আপনি নিজেকে তাদের কাছে সঁপে দেন। এটি সাধারণত অর্জিত হয়ে থাকে ‘ফিশিং’ ই-মেইলের মাধ্যমে, যা দেখে মনে হবে ই-মেইলটি এসেছে আপনার ব্যাংক, অ্যামপ্লয়ি বা আইআরএসের কাছ থেকে। এই ই-মেইলের মূল লক্ষ্য হলো বাজে সাইটে অ্যাক্সেস করার জন্য আপনাকে প্রলোভিত করা, যেখানে আপনি লগইন নেম এবং পাসওয়ার্ড এন্টার করেথাকেন।হামলাকারীরা যদি একবার আপনার তথ্য পেয়ে যায়, তাহলে তারা আপনার অ্যাকাউন্টে অনায়াসে অ্যাক্সেস করতে পারবে এবং চুরি করে নিতে পারবে।
চিত্র-২ : ফিশিং ই-মেইলের একটি উদাহরণ
০৪. ফাইল স্পর্শ না করা
স্ক্যামারেরা আপনার সিস্টেমে অ্যাক্সেস পেতে পারে ইনভয়েস বা কোনো কিছুর জন্য কন্ট্রাক্ট অর্ডারের বাজে অ্যাটাচমেন্ট পাঠিয়ে। এ ধরনের অ্যাটাচমেন্ট ডকুমেন্ট সাধারণত আপনার কমপিউটারকে সংক্রমিত করে থাকে। যদি আপনি অ্যাটাচমেন্ট প্রেরণকারীকে শনাক্ত করতে না পারেন, তাহলে সেই ই-মেইলকে ডিলিট করে দিতে পারেন। যদি মনে করেন, মেসেজটি এসেছে আপনার বন্ধু বা সহকর্মীদের কাছ থেকে, তাহলে ই-মেইল অ্যাটচমেন্টটি ওপেন করার আগে সুনিশ্চিত হয়ে নিন সেগুলো সত্যি সত্যি আপনার বন্ধু বা সহকর্মীদের কাছ থেকে এসেছেকি না।
০৫. সাইবার জ্ঞানসম্পন্ন অভিভাবক হওয়া
ইন্টারনেট যুগে আপনি যেহেতু শিশুদের কাছে একজন সচেতন অভিভাবক, তাইসেক্সটিং, সাইবারবুলিস এবং ক্যাট-ফিশিং খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় সাইবার বিশ্বে নিজেকে সুশিক্ষেত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। কানেক্ট সেইফলি সাইট শিশুদেরকে সাইবারবুলিস থেকে নিরাপদ রাখতে এক সহায়ক, নন-হিস্টিরিক্যাল গাইড পাবেন, যা সণ্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রাম, মোবাইল ফোনের জটিল প্রশ্ন বা ধাঁধাবিশেষসহ অসংখ্য বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। ‘কমন সেন্স মিডিয়া’ হলো আরেকটি চমৎকার রিসোর্স, যার মাধ্যমে সাইবার অভিভাবক হওয়ার উপায় যেমন জানতে পারবেন, তেমনি পাবেন এইজ-অ্যাপ্রোপ্রিয়েটসাইট, অ্যাপস, গেম এবং এ ধরনের আরও কিছু বিষয়ের ওপর রিকোমেন্ডেশন।
০৬. ইউটিউব সম্পর্কে ভুল না করা
যদি আপনার শিশু সন্তান ঘন ঘন অনলাইনে বিচরণ করে থাকে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তারা অনলাইনে বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে থাকে ইউটিউব এবং অন্যান্য ভিডিও সাইটে। এসব কনটেন্টের বেশিরভাগই নিরীহ এবং নিষ্পাপ ধরনের, আবার কোনোটি হয় না। আপনার সন্তান ইউটিউবে কী দেখছে, সে ব্যাপারে আপনাকে সবসময় থাকতে হবে সচেতন এবং প্রয়োজনে কিছু কন্ট্রোল সেট করতে পারেন।
2 thoughts on "কিছু অপরিহার্য নিয়ম মেনে ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকুন"