আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।
আমার আগের সব পর্ব:-
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬
21.ফাতিমা আল ফিহরি(বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে নারী)
আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামব্রিজ এবং অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ১২০৯ এবং ১০৯৬ সালে। তবে পুরো বিশ্বের তো বটেই, এগুলোর কোনোটিই ইউরোপেরও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১০৮৮ সালে। তারও প্রায় একশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়।
কিন্তু আল-আজহারেরও প্রায় একশ অনেক আগে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে এগারোশ’ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মরক্কোর কারাউইন ইউনিভার্সিটি।১৯৬০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১০০তম বর্ষপূর্তি হয়।
ইউনেস্কো এবং গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড অনুযায়ী এটিই হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিগ্রী প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা এখন পর্যন্ত একটানা চালু আছে। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে বলছে, “The oldest existing, and continually operating educational institution in the world is the University of Karueein, founded in 859 AD in Fez, Morocco.”
মসজিদ থেকেই বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল,
আর এই ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন মুসলিম নারী, ফাতিমা আল-ফিহরি!
ফাতিমা আল-ফিহরির জন্ম আনুমানিক ৮০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে, বর্তমানকালের তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ান শহরে। তার পুরো নাম ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আল-ফিহরিয়া আল-কুরাইশিয়া।তার ডাকনাম উম্মুল বানিন।
তাদের পারিবারিক নামের কুরাইশিয়া অংশ থেকে ধারণা করা হয় তারা ছিলেন কুরাইশ বংশের উত্তরাধিকারী।
তিউনিসিয়ার কাইরাওয়ান শহরটির গোড়াপত্তন হয়েছিল উমাইয়া শাসকদের হাতে, ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে। নবম শতকের শুরুর দিকে শহরটি হয়ে উঠেছিল ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। সামরিক দিক থেকেও শহরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি।
কিন্তু তা সত্ত্বেও এই শহরে বসবাসরত আল-ফিহরি পরিবারসহ অনেকেই ছিল আর্থিকভাবে অসচ্ছল। ফলে ফাতিমার জন্মের কয়েক বছর পর নবম শতকের শুরুর দিকে কাইরাওয়ান শহরের বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রে শহরটি ছেড়ে ভাগ্যের অন্বেষণে পাড়ি জমায় ইসলামিক মাগরেবের প্রসিদ্ধ শহর, মরক্কোর ফেজের উদ্দেশ্যে।
ফেজ ছিল তখন ক্রমবর্ধমান কসমোপলিটন শহর। নানা দেশ থেকে নানা ধর্ম, বর্ণ ও পেশার মানুষ সেখানে এসে বসতি স্থাপন করছিল। সে সময় ফেজের শাসক ছিলেন সুলতান দ্বিতীয় ইদ্রিস। তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং ন্যায়পরায়ণ শাসক। বিদেশ থেকে আগত অভিবাসীদেরকে তিনি ফেজ নদীর তীরের ঢালু জমিতে বসবাস করার ব্যবস্থা করে দেন। কাইরাওয়ান থেকে আসার কারণে ফেজে বসতি গড়া এই অভিবাসীদের পরিচয় হয় কারাউইন, তথা কাইরাওয়ানের অধিবাসী নামে।
ফেজে এসে মোহাম্মদ আল-ফিহরির ভাগ্য খুলে যায়। প্রচণ্ড পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার সন্তানদের জন্য তিনি সুশিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ফাতিমা আল-ফিহরি এবং তার বোন মারিয়াম আল-ফিহরি ক্লাসিকাল আরবি ভাষা, ইসলামিক ফিক্হ এবং হাদিস শাস্ত্রের উপর পড়াশোনা করেন।তার দুই কন্যাই বেশ সুশিক্ষিত, চিন্তাভাবনায় প্রগতিশীল এবং যথেষ্ট ধর্মপ্রাণও বটে।
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই ফেজ শহরেই ফাতিমার বাবা তাকে বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছরের মাথায়ই ফাতিমাদের পরিবারে দুর্যোগ নেমে আসে। অল্প সময়ের মধ্যেই তার বাবা, ভাই এবং স্বামী মৃত্যুবরণ করেন। রয়ে যান কেবল এতিম দুই বোন ফাতিমা এবং মারিয়াম। বাবার রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন তারা।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পিতার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি ব্যয় করার ক্ষেত্রে কন্যারা কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য না। ফাতিমা এবং মারিয়ামও চাইলে এই সম্পত্তি যেকোনোভাবে ব্যয় করতে পারতেন। কিন্তু কোনো বিলাসিতার পেছনে ব্যয় না করে তারা সিদ্ধান্ত নেন, এই অর্থ তারা ব্যয় করবেন ধর্মের জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য। সাজসজ্জার কিংবা বিলাসিতার পণ্য ক্রয় না করে সিদ্ধান্ত নেন, তারা ক্রয় করবেন জনগণের ভবিষ্যত।তারা তাদের পিতার জন্য ওয়াকফ বা সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে মসজিদ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করবেন।
ফেজের খ্যাতি তখন দিনে দিনে বেড়েই চলছিল। দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লিরা এসে শহরটিতে বসবাস করতে শুরু করছিল। ফাতিমা এবং মারিয়াম লক্ষ্য করেন, ফেজের কেন্দ্রীয় মসজিদটি শহরের ক্রমবর্ধমান মুসল্লিদেরকে আর স্থান দিতে পারছে না। ফলে তারা সিদ্ধান্ত নেন, বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি দিয়ে তারা পৃথক দুটি মসজিদ নির্মাণ করবেন। প্রায় কাছাকাছি সময় দুই বোন কাছাকাছি এলাকায় দুটি পৃথক মসজিদ নির্মাণ করেন। মারিয়াম নির্মাণ করেন আন্দালুস মসজিদ, আর ফাতিমা নির্মাণ করেন কারাউইন মসজিদ।
ফাতিমা সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না, এমনকি তার প্রতিষ্ঠিত কারাউইন লাইব্রেরিতেও না। ধারণা করা হয়, তার উপর লিখিত পাণ্ডুলিপিগুলো কারাউইন লাইব্রেরির ১৩২৩ সালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে পুরাতন যে উৎসে ফাতিমার বিবরণ পাওয়া যায়, সেটি হলো চতুর্দশ শতকের ইতিহাসবিদ ইবনে আবি-জারার লেখা ফেজ শহরের ইতিহাস, The Garden of Pages। পরবর্তীতে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী ইবনে খালদুনও ফাতিমার কথা লিখেছেন, কিন্তু তাতে ইবনে আবি-জারার বর্ণনাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
ইবনে আবি-জারার বিবরণ থেকে জানা যায়, ফাতিমা প্রথমে তার মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় করতে শুরু করেন এবং এরপর ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সেটা ছিল পবিত্র রমজান মাসের এক শনিবার। ফাতিমা শুধু মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থ দান করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি নিজে সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থেকে এর নির্মাণকাজ তদারকি করেছিলেন। এবং শুরুর দিন থেকে শুরু করে নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি দিন তিনি রোযা রেখেছিলেন।
কিছু বর্ণনা অনুযায়ী, মসজিদটির নির্মাণ সম্পন্ন হতে সময় লেগেছিল ১৮ বছর, যদিও অন্য কিছু বর্ণনা থেকে ১১ বছর এবং ২ বছরের বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেদিন নির্মাণ শেষ হয়, সেদিন তিনি নিজের নির্মিত মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জন্মভূমি কাইরাওয়ানের নামানুসারে তিনি মসজিদটির নাম রাখেন কারাউইন মসজিদ।
মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ফাতিমা মসজিদের বর্ধিতাংশে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই সেখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাকরণ, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস, রসায়ন, ভূগোলসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান শুরু হয়। বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় বিষয়ের উপর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ডিগ্রী প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই এটিই প্রাচীনতম, যা এখনও টিকে আছে এবং গত সাড়ে এগারোশ’ বছর ধরে একটানা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করে আসছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই বিশ্ববিদ্যালয়টির একমাত্র সাফল্য নয় বরং এর বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়নের প্রসারতার কারণে শীঘ্রই এর খ্যাতি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। মুসলমানদের পাশাপাশি অনেক অমুসলিম জ্ঞানসাধকও এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষাগ্রহণ করেন। কুরআন, হাদীস ও ইসলামী আইনশাস্ত্রের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, ব্যাকরণ, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, সংগীতসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পাঠদান করা হত।আল ফিহরীর তৈরী গ্রান্ড মসজিদের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এই আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়টি পরবর্তীতে অসংখ্য বিজ্ঞানীর জন্ম দিয়েছে।
ফাতিমা আল-ফিহরির প্রতিষ্ঠিত কারাউইন মসজিদটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত সমগ্র উত্তর আফ্রিকার বৃহত্তম মসজিদ ছিল। তার মৃত্যুর পর ৯১৮ সালে সরকার মসজিদটিকে অধিগ্রহণ করে এবং একে সরকারি মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করে, যেখানে সুলতান নিয়মিত নামাজ আদায় করতে শুরু করেন। দ্বাদশ শতকের দিকে পুনরায় পরিবর্ধনের পর এটি একসাথে ২২,০০০ মুসল্লিকে ধারণ করার সক্ষমতা অর্জন করে।
কারাউইন লাইব্রেরিতে নবম শতকের কুরআন শরিফ
ফাতিমার প্রতিষ্ঠিত কারাউইন মসজিদ এবং কারাউইন ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করে ফেজ হয়ে উঠতে থাকে আফ্রিকার ইসলামী শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র।অগ্রণায়ন পণ্ডিত ইবনে মাইমুন, আল-ইদ্রিসি, ইবনে আরাবি, ইবনে খালদুন, ইবনে খতিব, আল-বিতরুজি (অ্যালপে ট্রেজিয়াম), ইবনে হিরজিহিম ও আল ওয়্যাজ্জেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বা শিক্ষক ছিলেন।
শুধু মুসলমান না, মধ্যযুগের অনেক খ্যাতিমান ইহুদি এবং খ্রিস্টান মনীষীও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন। এর ছাত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন পোপ দ্বিতীয় সিলভাস্টার, যিনি এখান থেকে আরবি সংখ্যাপদ্ধতি বিষয়ে ধারণা লাভ করে সেই জ্ঞান ইউরোপে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং ইউরোপীয়দেরকে প্রথম শূন্যের (০) ধারণার সাথে পরিচিত করেছিলেন। ইহুদি চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিক মায়মোনাইডস এই বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম বিখ্যাত একজন ছাত্র ছিলেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন বিখ্যাত মালিকি বিচারপতি ইবনে আল-আরাবি, ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুন এবং জ্যোতির্বিদ নূরুদ্দীন আল-বিতরুজি। প্রতিষ্ঠার পরপর ফাতিমা নিজেও কিছুদিন এখানে অধ্যয়ন করেছিলেন।
ফেজকে তখন বলা হতো, ‘পাশ্চাত্যের বাগদাদ’—‘বাগদাদ অব দ্য ওয়েস্ট’। ১৯১২-৫৬ সময়ে মরক্কো ফ্রান্সের অধীনে ছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়ায়। ইউরোপের ষড়যন্ত্রের শিকার হয় ঐতিহ্যবাহী এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ওই সময় সেখানে পরীক্ষা ও ডিগ্রি দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় লাইব্রেরিতে,এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটিও বিশ্বের প্রচীনতম লাইব্রেরি হিসেবে প্রসিদ্ধ। বিপুল সংখ্যক পান্ডুলিপি পুড়ে যাওয়ার পরও এখানে প্রায় ৪০০০ হাজার প্রাচীন ও দুর্লভ পান্ডুলিপি আছে।
এর মধ্যে আছে নবম শতকে লেখা একটি কুরআন শরিফ, হাদিসের সংকলন, ইমাম মালিকের গ্রন্থ মুয়াত্তা, ইবনে ইসহাকের লেখা রাসুল (সা)-এর জীবনী, ইবনে খালদুনের লেখা কিতাব আল-ইবার এবং আল-মুকাদ্দিমার মূল পাণ্ডুলিপিসহ বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ।
৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ফাতেমা ফেজ শহরেই ইন্তেকাল করেন।তিনি হয়ত জানেনও না, তাঁর তৈরি করে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় এখনো টিকে আছে, পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে। অথচ, অনেক প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ই এখন আর নেই, যেমন নেই নালন্দা ইউনিভার্সিটি সহ ইউরোপে শুরু হওয়া বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়।
তার ইন্তেকালের ১১৩৭ বছর পার হলেও তার প্রতিষ্ঠিত আল কারউন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষাকার্যক্রম চলমান। মরক্কোর প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে আল কারউন বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
২০১৭ সালে তিউনিসিয়ায় ফাতিমা আল ফিহরির স্মরণে একটি সম্মাননা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছর নারীদের প্রশিক্ষণ ও নানা পেশায় দক্ষতা অর্জনের উদ্যোগের জন্য এ পুরস্কারটি দেওয়া হয়। এছাড়াও ফাতিমা আল ফাহরির স্মরণে ইউরোপ ও আফ্রিকা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন একাডেমিক প্রোগ্রাম ও বৃত্তি দেওয়া হয়।
মরক্কোর নারীদের কাছে এখনো ফাতেমা একজন অনুসরণীয় উচ্চাকাংক্ষী অনুপ্রেরণাদানকারী নারীর আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন।কালের স্বাক্ষী, ইসলামের সোনালী অতীতের স্বাক্ষী হয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফাতিমা আল ফিহরির প্রচেষ্টা এটাই মনে করিয়ে দেয়- নারীরা সুযোগ পেলে কত অসাধারণ কাজ করে যেতে পারেন!