আসসালামু আলাইকুম

আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।

আমার আগের সব পর্ব:-

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬

[পর্ব ৭] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[নাসির আল দীন আল তুসি:-ত্রিকোণমিতির স্রষ্টা,জিজ-ইলখানি উপাত্তের উদ্ভাবক]

[পর্ব ৮] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবুল ওয়াফা:-ত্রিকোণমিতির মূল স্থপতি]

[পর্ব ৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবু মারওয়ান/ইবনে জহুর:-পরভূক জীবাণু বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা,পরীক্ষামূলক সার্জারির জনক, পরীক্ষামূলক শারীরবৃত্তীয়, মানুষের ব্যবচ্ছেদ, অটোপস এর অগ্রদূত]

[পর্ব ১০]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাওয়ার্দি:-বিশুদ্ধতম গণতন্ত্রের প্রবক্তা]

17.আল জাজারি(মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ)

ইসলামের স্বর্ণযুগ বলে পরিচিত মধ্যযুগ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যায় সে সময়কার অধিকাংশ পণ্ডিতগণ হয় জ্যোতির্বিজ্ঞান, নয় গণিতে সাফল্য লাভ করেছেন। আলকেমি নিয়ে গবেষণা করা মুসলিম বিজ্ঞানীর সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।

রবার্ট ব্রিফল্ট তাঁর ‘দ্য ম্যাকিং অব হিউমানিটি’তে লেখেন, ‘উন্নত বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানে আরব সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশের এমন কোনো স্তর নেই, যাতে আরবদের প্রভাব অনুপস্থিত।’ (দ্য ম্যাকিং অব হিউমানিটি, পৃ. ২০২)।

তবে যা মধ্যযুগে খুব একটা দেখা যেত না, তা হচ্ছে মেকানিক্স বা যন্ত্রবিজ্ঞান। মধ্যযুগের ইতিহাস পড়তে গেলে তাই মনে হতেই পারে যে মুসলিমরা প্রযুক্তিতে বেশ পিছিয়ে ছিল। কিন্তু আসলেই কি তা সঠিক? মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে কি একদমই প্রযুক্তির চর্চা ছিল না? ইসমাইল আল জাজারির জীবনী ও কাজ পড়বার পর প্রশ্নগুলোর উত্তর নিজেই বের করতে পারবেন পাঠক।

রোবটিক্স বিষয় হিসাবে খুব সম্প্রতি জনপ্রিয় হলেও এর মূল ধারণা প্রথম যার মাথায় এসেছিল, তিনি হলেন অাল-জাজারি।

তার পুরো নাম ‘আল-শায়খ রাইস আল-আমল বদিউজ্জমান আবু আল-ইজ্জ ইবন ইসমাঈল ইবন আল-রাজাজ আল-জাজারি’।

তিনি একাধারে একজন পণ্ডিত, আবিষ্কারক, যন্ত্রপ্রকৌশলী, কারিগর, শিল্পী এবং গণিতবিদ ছিলেন। তার জন্ম ১১৩৬ সালে তৎকালীন মেসোপটেমিয়ার জাজিরাত ইবনে উমার নামক এলাকায়। এলাকাটি সংক্ষেপে জাজিরা নামেও পরিচিত ছিল। বিভিন্ন মৌলিক যান্ত্রিক উদ্ভাবনের কারণে আল-জাজারিকে আধুনিক প্রকৌশলের জনকও বলা হয়ে থাকে।

তার নামের শেষ অংশ আল-জাজারি মূলত তার জন্মস্থান জাজিরাকেই নির্দেশ করে। আল-জাজারির শৈশব-কৈশোর সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না। তবে পারিবারিকভাবেই তিনি প্রকৌশলবিদ্যা রপ্ত করেন এবং ১১৮১ সাল থেকে তিনি বর্তমান তুরস্কের আনাতোলিয়ার দিয়ারবাকির রাজ্যের সুলতান নাসিরুদ্দিনের দরবারের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

১১৭৪ সাল থেকে দীর্ঘ ২৫ বছর পর্যন্ত বিজ্ঞান সাধনায় লেগে থাকেন তিনি। বিজ্ঞানে প্রথম রোবটিক যন্ত্রের আবিষ্কার করেন এই মহান বিজ্ঞানী। তাঁর গবেষণাকর্মে সহযোগিতা করেন আদির অঞ্চলের শাসক নাসির উদ্দীন মাহমুদ (তিনি সালাহউদ্দীন আইয়ুবির বংশধর ছিলেন)।

তাঁরই অনুরোধে ইসমাঈল আল-জাজারি তাঁর গবেষণাগুলো পুস্তিকা আকারে সংরক্ষণ করেন। যার নাম দেওয়া হয়, ‘কিতাবুল হিয়াল’।যেহেতু তিনি একজন সুদক্ষ চিত্রশিল্পীও ছিলেন, তাই তাঁর উদ্ভাবনের থিওরিগুলো আরব্য চিত্রশিল্পের ধাঁচে এমনভাবে চিত্রাকারে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, যা পাঠককে তাঁর থিওরিগুলো সহজে বুঝতে ও পুনর্গঠন করতে সাহায্য করেছিল। (ওয়ান থাউজেন্ড অ্যান্ড ওয়ান ইনভ্যানসন্স মুসলিম হ্যারিটেজ ইন আওয়ার ওয়ার্ল্ড, পৃ. ১৫)

গ্রন্থটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এটির কয়েকটি মূল কপি বিশ্বের বিখ্যাত কিছু জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। যার মধ্যে ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘ল্যুভ মিউজিয়াম’ ও যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ‘আর্টস মিউজিয়াম’ অন্যতম। মিউজিয়ামগুলোতে আসা দর্শনার্থীরা খুব যত্নের সঙ্গেই গ্রন্থটি দেখেন। তাঁর মৃত্যুর ১০০ বছর পর ইউরোপের বিজ্ঞানীরা সেসব ধারণা নিয়ে বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করেন।

ইংরেজ ইতিহাসবিদ ডোনাল্ড আর হিল তাঁর রচিত ‘স্টাডিজ ইন মেডিয়েভল ইসলামিক টেকনোলজি’ পুস্তকে উল্লেখ করেন : ‘প্রকৌশলের ইতিহাসে আল-জাজারির গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আধুনিককাল পর্যন্ত আর কোনো সভ্যতা থেকে এর তুলনীয় যন্ত্রের নকশা, উৎপাদন ও বিভিন্ন নির্দেশসংবলিত তেমন কোনো রচনা পাওয়া যায়নি। এর প্রভাব পরবর্তীকালের স্টিম-ইঞ্জিন এবং অন্তর্দাহ যন্ত্রের (internal combustion) নকশায় দেখা যায়।

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় ইংরেজ প্রাচ্যবিদ এবং বিজ্ঞানী ডোনাল্ড হিল (১৯২২-১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ) গ্রন্থটি অনুবাদ করে জাদুঘরের আড়াল থেকে জ্ঞানপিপাসুদের দৃষ্টির সামনে নিয়ে আসেন। যার নাম দেওয়া হয়, ‘দ্য বুক অব নলেজ অব ইঞ্জিনিয়ার্স মেকানিক্যাল ডিভাইসেজ’। (উইকিপিডিয়া)

মার্কিন ইতিহাসবিদ ও ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর লেইন হোয়াইট জুনিয়র (১৯০৭-১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ) ‘দ্য বুক অব নলেজ অব ইঞ্জিনিয়ার্স মেকানিক্যাল ডিভাইসেজ’-এর ভূমিকায় লেখেন, অধুনা ইউরোপে আবিষ্কৃত অনেক স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মূল ধারণা ও নকশা আল-জাজারির গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

আল-জাজারি ছিলেন সে যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বহুবিদ্যাবিশারদ। তিনি ছিলেন একাধারে একজন যন্ত্র প্রকৌশলী, উদ্ভাবক, গণিতবিদ, শিল্পী ও দক্ষ কারিগর। তার আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ঘড়ি, দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা, হাত ধোয়ার যন্ত্র, পানি উত্তোলন যন্ত্র, সুরযন্ত্র, স্বয়ংক্রিয় ফটক ইত্যাদি। আবিষ্কৃত যন্ত্রগুলোর মধ্যে কয়েকটি এতই উন্নত ছিল যে, সেগুলো যে আটশো বছর পূর্বে তৈরি, সেটি বিশ্বাস করতেই কষ্ট হয়।

আল-জাজারি সর্বপ্রথম সেগমেন্টাল-গিয়ার প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে ১৩৬৪ খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় চিকিৎসক ও ঘড়ি নির্মাতা জিওভান্নি দ্য ডন্ডির (১৩৩০-১৩৮৮) জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক ঘড়িতে তা দেখা যায়।

তার নির্মিত দুর্গঘড়িকে অনেকে বিশ্বের প্রথম অ্যানালগ কম্পিউটার হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়াও তার আবিষ্কৃত রোবট জাতীয় স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মধ্যে একটি ছিল অটোম্যাটেড ওয়েট্রেস। এটি ছিল নারীর অবয়ব বিশিষ্ট একটি যন্ত্র, যা নির্দেশ পাওয়ামাত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রথমে বালতিতে, এরপর সেখান থেকে গ্লাসে পানীয় ঢেলে এরপর নির্দিষ্ট পথ ধরে হেঁটে এসে তা পরিবেশন করতে পারত।

আল-জাজারি শুধু স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ধারণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। বরং তাঁর বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে কিছু মূল্যবান যন্ত্রও আবিষ্কার করেছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, স্বয়ংক্রিয় ফ্লাশ মেকানিজমসমৃদ্ধ একটি ওয়াশিং মেশিন। যার মাধ্যমে বাদশাহ নাসির উদ্দীন মাহমুদ অজু করতেন। আজকের বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম রোবটিক যন্ত্র! এখান থেকেই অন্যান্য রোবটিক যন্ত্রের ধারণা তৈরি হয়।

তৎকালীন আরবের অনেকেই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরির চেষ্টা করছিলেন। অনেকের মাঝে সফলতা ধরা দেয় কেবল আল জাজারির কাছে। চাকার শ্যাফটে একধরনের ঘূর্ণায়মান যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, যাকে ক্যামশ্যাফট বলা হয়।


স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরির জন্য আল জাজারি তৈরি করেন পৃথিবীর প্রথম ক্যামশ্যাফট। এই ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশটি তিনি ব্যবহার করেছিলেন নিজের তৈরি জলঘড়ি, অটোম্যাটা আর পানি উত্তোলন যন্ত্রেও। বেশ সহজ গঠনের এই যন্ত্রাংশটি তৈরির সাথে সাথেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং ১৪ শতকে ইউরোপে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।

খাদ্যশস্য গুঁড়ো করার জন্য সে সময় পাথরের যাঁতাকলের প্রচলন ছিল।যাঁতাকলে রডের ব্যবহার এর কাজকে কিছুটা হলেও সুবিধাজনক করেছিল। তবে এর ব্যবহার আরো সুবিধাজনক করার জন্য কাজ শুরু করলেন আল জাজারি। তিনি পাথুরে যাঁতাকলের ধারণা থেকে বেরিয়ে একটি পুরোদস্তর ক্র্যাংক বসিয়ে দিলেন ঘূর্ণায়মান শ্যাফটের মধ্যে। ব্যস, হয়ে গেল চমৎকার এক যন্ত্রাংশ ক্র্যাংকশ্যাফট। এই যন্ত্রাংশটি একইসাথে দু’ধরনের জটিল গতি উৎপন্ন করতে পারতো- ঘূর্ণায়মান ও সম্পূরক গতি। শিল্পবিপ্লবের সূত্রপাত করা বাষ্প ইঞ্জিন থেকে আধুনিককালের দহন ইঞ্জিন এবং স্বয়ংক্রিয় গাড়িতেও ব্যবহার করা হচ্ছে এই যন্ত্রাংশ। এর কলাকৌশল একটি সরল অ্যানিমেশনের মধ্যমে নিচের ছবিটিতে দেখানো হলো।

পেন্ডুলাম ঘড়িতে পেন্ডুলামের দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য চমৎকার এক যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করা হয়, যার নাম ‘এস্কেপম্যান্ট অ্যাংকর’। আল জাজারি এই এস্কেপম্যান্টের কৌশল কাজে লাগিয়ে চাকার গতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণের যান্ত্রিক কৌশল আবিষ্কার করে ফেলেন! আধুনিককালের গাড়ির ব্রেকের ধারণার একটি প্রাথমিক রূপ ছিল জাজারির আবিষ্কার!

‘চেইন পাম্প’ হচ্ছে পানি উত্তোলনের একধরনের সরল যন্ত্র, যার মধ্যে একটি বড় পাইপের ভেতরে একটি চেইনের সাথে সংযুক্ত একাধিক ডিস্ক বসানো থাকে। চেইন ঘুরতে শুরু করলে পানির ডিস্ক দ্বারা আটকা পড়ে এবং ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসে। পৃথিবীর প্রাচীনতম চেইন পাম্প আবিষ্কার করেছিলেন আর্কিমিডিস। বহু শতাব্দী পর আল জাজারি একটি নয়, দুটি নয়, পাঁচটি ভিন্ন কৌশলের চেইন পাম্প তৈরি করলেন! তার তৈরি এই পাম্পগুলো একটি সাধারণ নাম, ‘সাকিয়া চেইন পাম্প’ নামে পরিচিত। চেইন পাম্পে ক্র্যাংকশ্যাফটের ব্যবহারও সর্বপ্রথম জাজারির যন্ত্রেই দেখা যায়। আর আধুনিক যুগের অত্যাধুনিক যন্ত্রগুলোতে প্রয়োগ করা ‘ইন্টারমিটেন্সি সিস্টেম’ এর ধারণাও প্রথম আসে জাজারির এই সাকিয়া পাম্প থেকেই।

অন্যদিকে, ‘হাইড্রোপাওয়ার’ দ্বারা পরিচালিত একটি সাকিয়া পাম্পও তৈরি করেছিলেন জাজারি, যা দ্বারা পানি উত্তোলনে মানুষের কায়িক পরিশ্রমের কোনো প্রয়োজন ছিল না। পুরো মধ্যযুগ জুড়ে আরবে জাজারির যন্ত্রগুলো পানি উত্তোলনে ব্যবহৃত হয়েছে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের অনেক স্থানে এখনো এই যন্ত্র ব্যবহৃত হয়।

১২০৬ সালে আল জাজারি আধুনিক প্রকৌশলবিদ্যার জন্য অমূল্য এক যন্ত্র তৈরি করেন। তিনি একটি বিশেষ পানি শোষক যন্ত্র তৈরি করেন, যার মধ্যে প্রথমবারের মতো ‘ডাবল অ্যাকশন’ কৌশল ব্যবহার করা হয়। এই পাম্পেও তিনি ক্র্যাংক শ্যাফট ব্যবহার করেছেন।

শ্যাফটের দু’পাশে দুটি সিলিন্ডার বসিয়ে তিনি তার চিন্তার অগ্রসরতার ছাপ রেখেছেন এই যন্ত্রে। আরো একাধিক কারণে জাজারির ডাবল অ্যাকশন পাম্পটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যেমন- ভালভের ব্যবহার, পিস্টনের ব্যবহার, প্রথম কোনো পানি শোষক যন্ত্রে সরবরাহ পাইপের ব্যবহার, কিংবা ঘূর্ণায়মান গতিকে সম্পূরক গতিতে রূপান্তরের জন্য ক্র্যাংক শ্যাফটের ব্যবহার। আধুনিক যন্ত্রনির্মাণ কৌশলের অনেক দিকই জাজারির ডাবল অ্যাকশন যন্ত্রে ছিল। ১৫ শতকে ইউরোপে একধরনের নতুন পানি শোষক যন্ত্রের প্রচলনে বেশ সাড়া পড়ে যায়।

মজার ব্যাপার হলো, তখনো ইউরোপে জাজারির ডাবল অ্যাকশন যন্ত্র পৌঁছোয়নি। যখন ইউরোপীয়রা জাজারির ডাবল অ্যাকশন যন্ত্র হাতে পেল, তারা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলো যে,আল জাজারির প্রায় ৩০০ বছর আগে প্রস্তুতকৃত শোষক যন্ত্রটি তাদের যন্ত্রের চেয়ে অনেক উন্নত!

আল জাজারির কিছু স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বা অটোম্যাটার নমুনা দেখলে বিস্ময়ে আপনার চোখ কপালে ওঠার যোগাড় হবে। সংক্ষেপে সেগুলোর পরিচয় দিচ্ছি-

1.হাইড্রোপাওয়ার চালিত পৃথিবীর প্রথম দিকের একটি স্বয়ংক্রিয় দরজা তৈরি করেন জাজারি।

2.আধুনিককালের ঘড়িতে যেরকম নির্দিষ্ট সময়ে ঘন্টা দেয়ার জন্য একধরনের স্বয়ংক্রিয় দরজা খুলে যায়, যা থেকে কোনো পাখি বা বিশেষ বস্তু বেরিয়ে আসে, জাজারি নিজের তৈরি একটি জলঘড়িতে এমন স্বয়ংক্রিয় দরজা ব্যবহার করেছিলেন।

3.বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে মানুষের বদলে রোবট ওয়েটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে। যদি বলি, বিশ্বের প্রথম রোবট ওয়েটারটি আল জাজারি তৈরি করেছিলেন! গঠনে, যান্ত্রিক কৌশলে অনেক পিছিয়ে থাকলেও জাজারির চিন্তাভাবনা ছিল বিস্ময়করভাবে অগ্রসর। অবশ্য জাজারি ওয়েটার নয়, ওয়েট্রেস বা পরিচারিকা তৈরি করেছিলেন।

তার পরিচারিকাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চা, পানি কিংবা মদ পরিবেশন করতে পারতো। একটি মাঝারি আকৃতির ট্যাংকের মধ্যে থাকতে পানীয় যা ফোঁটায় ফোঁটায় প্রতি সাত মিনিটে নির্দিষ্ট পাত্র বা পেয়ালায় জমা হতো। এরপর সেটি একটি স্বয়ংক্রিয় দরজার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশন করতো সে পানীয়!


4.পৃথিবীর প্রথম ফ্লাশ টয়লেটের ধারণাও আসে তারই একটি আবিষ্কার থেকে।
হাত ধোয়ার জন্য একটি অত্যন্ত শৌখিন যন্ত্র তৈরি করেন আল জাজারি, যা আজকের পৃথিবীতে বসেও ভীষণ রকমের শৌখিনই মনে হবে। ‘পিকক ফাউন্টেইন’ নামক যন্ত্রটি এরূপ- দেয়ালের মধ্যে একটি যান্ত্রিক ময়ূর স্থাপিত, যার লেজে রয়েছে একটি প্লাগ। এই প্লাগ টানলেই ময়ূরের ঠোঁট দিয়ে বেরিয়ে আসতে শুরু করবে পানি!

পানিতে আপনি হাত ভিজিয়ে নিতে নিতে আরেকটি প্লাগ টানুন, ময়ূরের নিচ থেকে এবার একটি স্বয়ংক্রিয় দরজা খুলে গিয়ে আপনার জন্য সাবান উপস্থিত হবে। সাবান মাখিয়ে হাত ভালোমতো ধুয়ে পুনর্বার আরেকটি প্লাগ টানুন, বেরিয়ে আসবে তোয়ালে!

5.অটোম্যাটেড ময়ূর থেকেও আরো বিস্ময়কর যন্ত্র তৈরি করেছেন আল জাজারি। আর তা হচ্ছে ‘মিউজিক্যাল অটোম্যাট’ বা একটি রোবটের ব্যান্ডদল! মোটেও ভুল কিছু পড়ছেন না পাঠক, রাজকীয় কোনো অনুষ্ঠানে অতিথিদের বিনোদিত করার জন্য জাজারি তৈরি করেন একটি রোবট ব্যান্ড। একটি ছোট নৌকার উপর বসানো থাকে চারজন কৃত্রিম সঙ্গীতজ্ঞ। নৌকাটি লেকে ছেড়ে দেয়া হলে তা লেকের ঢেউয়ের সাথে দুলতে থাকে এবং ছন্দময় সুরের সৃষ্টি করে সেই চার বাদক!

ঘড়ির প্রতি আল জাজারির ছিল বিশেষ আকর্ষণ। তিনি বিভিন্ন রকমের জলঘড়ি এবং মোমঘড়ি তৈরি করেছেন।

তিনি একটি এক মিটার উচ্চতার শৌখিন মোমঘড়ি তৈরি করেছিলেন,

তৈরি করেছিলেন একাধিক অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়িও।

আল-জাজারি উদ্ভাবিত পানি-ঘড়িটি ১৯৭৬ সালে লন্ডনের বিজ্ঞান জাদুঘরে সফলভাবে পুনর্নির্মিত হয়। একজন উদ্ভাবক এবং প্রকৌশলী ছাড়াও আল-জাজারি একজন সুদক্ষ চিত্রশিল্পীও ছিলেন। তার রচিত কিতাব ফি মারিফাতে তার উদ্ভাবিত বিভিন্ন যন্ত্রের নির্দেশনাবলি অতি ক্ষুদ্রকায় চিত্র দিয়ে তুলে ধরেন। এটি ছিল মধ্যযুগের ইসলামিক চিত্রকলা।

সে সময়ের প্রচলিত সৌরমডেলের একটি চলন্ত মডেলও তৈরি করেন জাজারি। অন্যদিকে বছর জুড়ে দিনের দৈর্ঘ্যের তারতম্য নির্ণয়ের জন্য তৈরি করেন একটি ‘এলিফ্যান্ট ক্লক’। তবে আল জাজারির সবচেয়ে চমৎকার নির্মাণ হচ্ছে তার ‘ক্যাসেল ক্লক’।


৩.৪ মিটার উচ্চতার এই বিশাল ঘড়ির কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে উল্লেখ করছি।

1.ঘড়িটি রাশিচক্রের বিশাল এক নকশা উপস্থাপন করে।
2.চাঁদ, সূর্যের আবর্তন কক্ষপথ নির্দেশক রয়েছে।
3.দিন-রাতের দৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘড়িতে সময় পরিবর্তন করা যায়।
ডিজিটাল ঘড়ির মতো এই ঘড়িতেও ছিল অ্যালার্ম ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট সময় পর বাদ্য বাজাতে শুরু করতো ঘড়ির নিচে অবস্থিত একদল কৃত্রিম বাদক।

.

প্রচলিত অন্যান্য জলঘড়ি থেকে তার এলিফ্যান্ট ক্লকটি অনেক দিক থেকেই ব্যতিক্রমধর্মী। ২২ ফুট (প্রায় সাড়ে ছয় মিটার) উচ্চতা বিশিষ্ট এই ঘড়িটি একটি বিশালাকৃতির কাঠের হাতির উপর অবস্থিত। হাতির পিঠের উপর একটি পাটাতন রাখা থাকে, যেখানে পেন্সিল হাতে একজন কেরাণী বসে থাকে। পাটাতনের চার কোনায় অবস্থিত চারটি স্তম্ভের উপর থাকে একটি দুর্গ সদৃশ কাঠামো। দুর্গের উপর থাকে একটি গম্বুজ, যার উপরে বসে থাকে একটি ফিনিক্স পাখি। দুর্গের সামনের বারান্দায় বসে থাকে আরেকজন ব্যক্তি, যার দুই পাশের জানালা দিয়ে মুখ বের করে রাখে দুটি বাজপাখি। দুর্গের নিচে এবং হাতির পিঠের উপরে মাঝামাঝি স্থানে থাকে দুটি ড্রাগনের মুখ বিশিষ্ট সর্প, যারা একটি অক্ষকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে। আর হাতির কাঁধের উপর বসে থাকে একজন মাহুত, যার এক হাতে থাকে একটি কুঠার, অন্য হাতে আছে একটি দণ্ড।

ঘড়িটির মূল কার্যপ্রণালী সম্পাদিত হয় হাতিটির পেটের অভ্যন্তরে। সেখানে একটি পানিপূর্ণ জলাধারের উপর একটি পাত্র রাখা থাকে। পাত্রটির নিচে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে, যার মধ্য দিয়ে পাত্রটিতে পানি প্রবেশ করতে থাকে, ফলে এটি ধীরে ধীরে পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। ছিদ্রটির মাপ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন একবার সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হতে পাত্রটির সময় লাগে আধঘণ্টা। পাত্রটির সাথে হাতির পিঠে পাটাতনের উপর বসে থাকা কেরাণীর হাতের পেন্সিলটি একটি সুতা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। ফলে পাত্রটি নিমজ্জিত হবার সময় তার টানে পেন্সিলসহ কেরাণীটি ঘুরতে থাকে এবং পেন্সিলটি পাটাতনের উপর অবস্থিত গোলাকার চাকতির উপর অঙ্কিত সংখ্যাগুলোর দিকে নির্দেশের মাধ্যমে আধঘন্টা সময়ের মধ্যে অতিক্রান্ত মিনিটগুলো নির্দেশ করতে থাকে।

ঘড়িটির মূল কার্যপ্রণালী সম্পাদিত হয় হাতিটির পেটের অভ্যন্তরে। সেখানে একটি পানিপূর্ণ জলাধারের উপর একটি পাত্র রাখা থাকে। পাত্রটির নিচে একটি ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে, যার মধ্য দিয়ে পাত্রটিতে পানি প্রবেশ করতে থাকে, ফলে এটি ধীরে ধীরে পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে। ছিদ্রটির মাপ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন একবার সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হতে পাত্রটির সময় লাগে আধঘণ্টা।

পাত্রটির সাথে হাতির পিঠে পাটাতনের উপর বসে থাকা কেরাণীর হাতের পেন্সিলটি একটি সুতা দ্বারা সংযুক্ত থাকে। ফলে পাত্রটি নিমজ্জিত হবার সময় তার টানে পেন্সিলসহ কেরাণীটি ঘুরতে থাকে এবং পেন্সিলটি পাটাতনের উপর অবস্থিত গোলাকার চাকতির উপর অঙ্কিত সংখ্যাগুলোর দিকে নির্দেশের মাধ্যমে আধঘন্টা সময়ের মধ্যে অতিক্রান্ত মিনিটগুলো নির্দেশ করতে থাকে।

পাত্রটি যখন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়, তখন ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো ঘটনা ঘটে। একাধিক সুতায় টান পড়ার কারণে ঘড়িটির একেবারে উপরে অবস্থিত একটি ধারক হেলে পড়ে এবং তাতে সংরক্ষিত অনেকগুলো বলের মধ্য থেকে একটি বল নিচের একটি পাখার উপর গড়িয়ে পড়ে। এরফলে পাখাটি এবং তার সাথে সংযুক্ত ফিনিক্স পাখিটি ঘুরতে শুরু করে এবং সুমধুর শব্দে জানান দিতে থাকে যে, আধঘণ্টা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে।

এরপর বলটি একটি বাজপাখির ঠোঁটের মধ্য দিয়ে নিচে অবস্থিত একটি সাপের মুখের উপর গড়িয়ে পড়ে। বলের ভারে সাপটি যখন একটি অক্ষকে কেন্দ্র করে উল্টে পড়তে থাকে, তখন তার টানে নিমজ্জিত পাত্রটি পুনরায় খালি অবস্থায় পানির উপরে উঠে আসে। বলটি সাপের মুখ থেকে একটি দানিতে এসে পড়ে, ফলে মাহুতের হাতের কুঠার এবং দণ্ডটি উঠানামা করার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটির একটি ধাপের সমাপ্তি নির্দেশ করে। বলের ভারমুক্ত হওয়া সাপটি পুনরায় নিজের অবস্থানে ফেরত যায় এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি আবার নতুন করে শুরু হয়।

ঘড়িটিতে সময় নির্দেশ করার জন্য দুর্গের উপরের গম্বুজটির সম্মুখভাগে একটি অর্ধচন্দ্রাকার চাকতি রাখা থাকে। চাকতিটির উপর ঘণ্টার নির্দেশক সংখ্যাগুলো লিপিবদ্ধ করা থাকে। প্রতিটি সংখ্যার উপর থাকে একটি করে গোলাকার গর্ত। প্রথম আধঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম বলটি সরে যাওয়ার কারণে সংখ্যাটির উপর অবস্থিত গর্তটির রং অর্ধেক পরিবর্তিত হয়ে যায়। এক ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর দুটি বল সরে যাওয়ায় সম্পূর্ণ গর্তের রং পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর ফলে বোঝা যায় যে, একঘন্টা সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এভাবে দিনের যেকোনো সময় ঘড়িটির দিকে তাকিয়েই বোঝা যায় সূর্যাস্তের পর কতটুকু সময় অতিক্রান্ত হয়েছে।

আল-জাজারির এই এলিফ্যান্ট ক্লকটি শুধু তার জটিল এবং নিখুঁত কার্যপ্রণালীর কারণেই বিখ্যাত না। এটি যে একইসাথে বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে নানাবিধ সংস্কৃতিকে ধারণ করে, তার জন্যও সমানভাবে প্রশংসিত। ঘড়িটিতে ব্যবহৃত হাতিটি হচ্ছে ভারতীয়, এর উপর রাখা কার্পেটটি পারস্যের, ড্রাগন সদৃশ সাপ দুইটি চীনের, ফিনিক্স পাখিটি মিশরের এবং পাগড়ি পরা মাহুত ও কেরাণী আরবের। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যে সর্বজনীন এবং বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে আহরিত জ্ঞানকে আপন করে নেওয়ার মাধ্যমেই যে উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, আল-জাজারি হয়তো তার এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই ইঙ্গিতই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

সময় পরিমাপের উদ্দেশ্যে তৈরি আল-জাজারির এ আবিষ্কারটি সময়ের পরিক্রমায় টিকে থাকতে পারেনি। তবে রয়ে গেছে তার লেখা বইটি, যেখানে ঘড়িটির বিস্তারিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করা আছে। বইটির বর্ণনা অনুযায়ী বিভিন্ন সময় ঘড়িটি পুনর্নির্মাণের চেষ্টাও করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো দুবাইয়ের ইবনে বতুতা মলের ভারতীয় অংশে অবস্থিত এলিফ্যান্ট ক্লক, যেটি হু্বহু আসল এলিফ্যান্ট ক্লকের মাপ এবং নকশা অনুযায়ী নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ১০০১ ইনভেনশন্স কর্তৃক নির্মিত কয়েকটি অনুলিপিও আছে ঘড়িটির, যার একটি স্থান পেয়েছে লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামে।

তিনি ইতিহাসে স্থান পেয়েছেন তার অসাধারণ বই ‘বুক অব নলেজ অব ইনজেনিয়াস মেকানিক্যাল ডিভাইসেস’ এর জন্য। এই বইয়ে তিনি অসংখ্য যন্ত্রের যান্ত্রিক কৌশল এবং প্রস্তুত করার কার্যপ্রণালী উল্লেখ করেছেন। মূলত, উপরে তার যেসব যন্ত্রের কথা আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশরই কোনো নমুনা পাওয়া যায় না। তবে যন্ত্রগুলো যে আল জাজারি নির্মাণ করেছিলেন, তাতে ইতিহাসবিদগণ একমত।

কারণ প্রতিটি যন্ত্রের নির্মাণকৌশল ছিল অত্যন্ত বাস্তবসম্মত এবং তখনকার সময়ে নির্মাণযোগ্য। গণিতেও আল জাজারির গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। তবে তিনি ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন পেয়েছেন একজন দূরদর্শী প্রকৌশলী, উদ্ভাবক এবং নির্মাতা হিসেবে।

ইংরেজ প্রযুক্তি ঐতিহাসিক ডোনাল্ড রুটলেজ হিল (১৯২২-১৯৯৪ খ্রি.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা প্রথম আল-জাজারির কর্মেই নকশা প্রণয়ন এবং নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দেখতে পাই, যেমন, কাঠ বেঁকে যাওয়া রোধ করার জন্য স্তরে স্তরে বিন্যস্ত করা (lamination), অনড় অবস্থায় চাকার ভারসাম্য রক্ষা করা, নকশার জন্য কাগজের মডেল ব্যবহার, কোনো ফাটলের ব্যাসের মাপ নির্ণয়, ভালবের আসন ও প্লাগ শিরিষ-গুঁড়া দিয়ে পানি নিরোধ করা, বন্ধ ছাঁচের বাক্সে বালু দিয়ে ধাতু ঢালাই করা।’

সম্ভবত ১২০৬ সালে তার জন্মস্থানেই মৃত্যুবরণ করেন আল জাজারি।

2 thoughts on "[পর্ব ১১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল জাজারি:-মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ]"

Leave a Reply