আসসালামু আলাইকুম

আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।

আমার আগের সব পর্ব:-

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬

[পর্ব ৭] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[নাসির আল দীন আল তুসি:-ত্রিকোণমিতির স্রষ্টা,জিজ-ইলখানি উপাত্তের উদ্ভাবক]

[পর্ব ৮] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবুল ওয়াফা:-ত্রিকোণমিতির মূল স্থপতি]

[পর্ব ৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবু মারওয়ান/ইবনে জহুর:-পরভূক জীবাণু বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা,পরীক্ষামূলক সার্জারির জনক, পরীক্ষামূলক শারীরবৃত্তীয়, মানুষের ব্যবচ্ছেদ, অটোপস এর অগ্রদূত]

16.আল মাওয়ার্দি (বিশুদ্ধতম গণতন্ত্রের প্রবক্তা)

মধ্যযুগীয় সময়ে সভ্যতা উপহার দিয়েছেন বেশ কিছু মহাপুরুষ। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে তখন আবির্ভাব ঘটেছিল এক উজ্জ্বল নাম : আবু আল- হাসান আলী ইবনে-মােহাম্মদ ইবনে হাবিব -মাওয়ার্দি।

তিনি এমন একজন রাজনৈতিক দার্শনিক, যিনি খিলাফত ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন সর্বোচ্চ মাত্রার বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক উপায়ে বিশুদ্ধতম চরিত্রের মানুষ আসীন হােন খলীফা পদে।

তিনি ভােটারদের যােগ্যতার মাপকাঠিও ঘােষণা করেছিলেন। তখনকার সময়ে এ কাজটি খুব সহজ ছিল না। কারণ, তখন সময় ছিলাে সার্বভৌম উৎপীড়ক শাসকের। তার পরেও আল মাওয়ার্দি ছিলেন অকুতােভয় নি্ভীকজন। অবজ্ঞাভরে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্বে নেমে পড়তেন। একজন বিচারক হিসেবে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নাম।

আবু আল-হাসানের জন্ম বসরায়। বসরা হচ্ছে দক্ষিণ ইরাকের এক বন্দর নগর। বসরার গােলাপ পৃথিবী বিখ্যাত। বসরাকে বলা হয় ‘ল্যান্ড অব রােজেস বা গােলাপ ফুলের ভুমি’। তাঁর জন্ম ৯৭২ খৃষ্টাব্দে। শৈশবে লেখাপড়া করেন বসরাতেই।

তখন বসরায় আবু আল-ওয়াহিদ আল-সিমা নামে বিখ্যাত এক পণ্ডিতবর ছিলেন। সর্বজন গ্রাহ্য এই পণ্ডিতবর ফিকাহ বা ইসলামী আইনবিদ্যায় অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। হাসান ছিলেন তাঁরই ছাত্র। এরপর তিনি চলে যান বাগদাদে। সেখানে তখন ছিলেন দুই অসাধারণ জ্ঞানী আর প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব। এদের যশ আর খ্যাতি ছিল অনুপম। তাদের নাম : শেখ আব্দুল হামিদ এবং আব্দুল্লাহ আল-বাকি। হাসান তাদের কাছে নানা বিষয়ে জ্ঞানার্জন করেন। তাদের কাছে শেখেন আইনবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, রাজনৈতিক বিজ্ঞান ও সাহিত্য। হাসানের শিক্ষা জীবন ছিল সত্যিই পুষ্পময়। লেখাপড়া শেষে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন প্রশংসনীয় জনে।

তিনি কর্মজীবন শুরু করেন বাগদাদে। একজন কাজী বা বিচারক হিসেবে। এক সময় তিনি উন্নীত হন প্রধান কাজী পদে। তখন তার অবস্থান দাঁড়ায় একজন অসমান্তরাল বিচারক হিসেবে। যুক্তিবিজ্ঞানী হিসেবেও তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্ধী। আব্বাসীয় খলিফা আল-কায়েম-বেন আমর-আল্লাহ তাঁর গুণে ও সক্ষমতায় অবিভূত হয়ে পড়েন। তিনি তাঁকে ভ্রাম্যমান রাষ্ট্রদূত বা রােভিং অ্যাম্বেসেডর নিযুক্ত করেন। সে সময়টা ছিল আব্বাসীয় খলিফাদের পতনের সময়।

সেটা ছিল বুত্তয়াহিদ ও সেলজুকদের উত্থান সময়। অতএব, তখন রাজনৈতিক সত্তার এক জটিল ত্রিভুজ অস্তিত্ব ছিল। রােভিং অ্যাম্বেসেডর হিসেবে প্রাথমিকভাবে আবু আল-হাসান সফলতা পান। তিনি বিপরীত পরিস্থিতির বিরােধ সংযত করতে পারতেন সহজে। ফিরিয়ে আনতে পারতেন এক ভারসাম্যমূলক পরিস্থিতি। কিন্তু সময় তখন চলে গেছে আব্বাসীয়দের বিরুদ্ধে। হাসান চারদিক থেকে পেলেন অসংখ্য রাজকীয় উপহার। পেলেন সব জায়গায় অভূতপূর্ব প্রশংসা। যেসব সুলতানের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন, সবাই তাঁর শুভাকাক্সক্ষীতে পরিণত হন। কিন্তু ইতিহাসের নিষ্ঠুরতা তার খ্যাতিকে টিকে থাকতে দেয়নি। সেখানে তাঁর থাকা অবস্থায়ই বুত্তয়াহিদ বাগদাদ দখল করেন।

রাজনৈতিক স্রোত স্বপক্ষে না থাকলেও তিনি বিবেচিত ছিলেন একজন সুখ্যাত রাজনৈতিক-দার্শনিক হিসেবে। ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দী এক সমাজ বিজ্ঞানী।

তার বই আল-হাবি’ ছিল একটি অসাধারণ সৃষ্টি। বইটির বিষয়বস্তু আইনবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যা। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযােগ্য বই হচ্ছে : কিতাব আল-আহকাম আল- সুলতানিয়া, কানুন ওয়াজিরা এবং কিতাব নসিহত আল-মুলক।

এই বইগুলােতে এই মহান পণ্ডিতবর খলিফা, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের দায়িত্ব ও আচরণ সম্পর্কে আলােকপাত করেছেন। আন্তঃমন্ত্রনালয় সম্পর্ক এবং সেনাবাহিনীর কাজ ইত্যাদির আলোচনাও এসেছে বিস্তারিতভাবে।

আল-আহকাম আল-সুলতানিয়া এবং কানুন আল-ওয়াজিরা’র অনুবাদ প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। এশিয়া ও ইউরােপ এখনও এসব অনুবাদ-গ্রন্থ থেকে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে।



এসব বই পাঠে লেখকের আকার ও পরিধি সম্পর্কে একটা তৈরি ধারণা সহজেই পেতে পারেন। রাজনীতি বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য আলােচক হিসেবে তিনি আজ কালােত্তীর্ণ এক জন । তিনি মারা যান ১০৫৪ খৃষ্টাব্দে।

2 thoughts on "[পর্ব ১০]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাওয়ার্দি:-বিশুদ্ধতম গণতন্ত্রের প্রবক্তা]"

  1. Shakil Contributor says:
    Onek sundor hoyeche

Leave a Reply