১ম পর্বে দোয়া যে কবুল হয় আর আল্লাহ তায়ালা দোয়া করার জন্য বলেছেন তা বিভিন্ন আয়্যাত ও হাদিস থেকে জানতে পেরেছি, এ পর্বে দোয়া কবুল এর বিশেষ সময় ও মাধ্যম সম্পর্কে জানবো ইন শা আল্লাহ । ১ম পর্ব আপনার সুবিধার্থে ১ম কমেন্ট এ দিয়ে দেওয়া হলো ।
আল্লাহ তা’য়ালা দোয়া করার জন্য এমন অসংখ্য সময় ও সুযোগ আমাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো বিষয় । আসুন হাদীস থেকে
আমরা দেখে নেই দোয়া কবুল হবার সময়গুলো সম্পর্কে ।
১/ রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ
এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালো দলিল পাওয়া যায় । প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযোজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা
কদরের রাতে নয় ।
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “প্রত্যেকদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দেবো । কে আমার কাছে চাইছো, আমি তাকে তা দেবো । কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো?” (সহীহ বুখারী)
২/ আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ঃ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তি সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)
৩/ জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি সময় আছে
যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।
কোন কোন মুহাদ্দিস এর মতে , তা হলো-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলো আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টা ।
৪/ জমজমের পানি পান করার সময়ঃ
অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে ।
৫/ সিজদাহর সময়েঃ
আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলো সিজদাহর
সময় । সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)
৬/ ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ
আবু উমামাহ (রাঃ) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কোন সময়ের ডাক শোনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং
ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)।
৭/ কদরের রাতেঃ
নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলো একটি বছরে শ্রেষ্ঠ রাত । আল্লাহ বলেছেন,
“আমি এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি।
তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি?
কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”।
বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে ।
৮/ ১০। বৃষ্টি হবার ও আজানের সময়ঃ
সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানো হয়না । আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”।
(আবু দাউদ ২৫৪০)
৯/ মজলুম ও নির্যাতিত, পিতামাতা ও রোজাদারের ও মুসাফিরের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না । সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”।
কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)
১০/ আরাফাতের দিনের দোয়াঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলো আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)
এছাড়া ও হাদিসে আরো পাওয়া যায় , >অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়া, >জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলে সে সময়ের দোয়া, >জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের দোয়া, >রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়া, >অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দোয়া, >সফর অবস্থায়, আরো অনেক সময় বা মাধ্যম রয়েছে ।
আল্লাহ তায়ালা তো বান্দা কে দিবার জন্য ও ক্ষমা করার জন্য বাহানা তালাস করেন, দোয়া ই তো প্তরভুর কাছ থেকে চেয়ে নেবার মাধ্যম তবুও যদি আমরা দোয়া করার থেকে মাহরুম থাকি তবে কার ক্ষতি হইবে? আমাদের নিজেরই ক্ষতি হইবে, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের ইহকালিন জীবন ও পরবর্তি জীবনের জন্য কবুল করুন, আমাদের নেক চাহিদাগুলো মিটিয়ে দিন এবং যাদের নাম আল্লাহ নাজাত প্রাপ্তদের খাতায় লিখে রেখেছেন, তাদের ভেতর আমাদের অন্তর্ভুক্ত করুন । আমিন ।
চলবে…
One thought on "**** দোয়া ***** পর্ব-২"