টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম দারুণ একটি খবর দিয়েছেন। এত খুশি লাগার কারণ মাসে ২৫ টাকা কিস্তিতে গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্মার্টফোন দিতে চান তিনি। এমন চিন্তায় কম আয়ের মানুষদের গুরুত্ব দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এটা সত্যিকার অর্থেই প্রান্তিক মানুষের জন্য কল্যাণকর ভাবনার নমুনা।
ভাবনাটা কি বাস্তবসম্মত? সেই বিচার করতে গিয়েই আসলে ‘তবে’র উৎপত্তি। প্রতিমন্ত্রীর প্রিয়ভাজনরা হয়ত বলবেন, একটি ভালো কাজের মধ্যেও খুঁত খোঁজার স্বভাব অনেকের চিরায়ত অভ্যাস।
এতটুকু সমালোচনা মেনে নিয়েই বলতে চাই, ২৫ টাকা কিস্তিতে স্মার্টফোন দেওয়ার বিষয়টি শুনতে যতটা ভালো লাগে, অংকের হিসাব করতে গেলে মুখটা ততোই তিতা হয়ে আসে। গণিতের হিসাব যে আসলে মুখ চিনে করা যায় না। অস্বস্তিতা সেখানেই। যে কারণে দারুণ এ খবর পড়ে ঠোটের কোনায় চিকন একটা হাসিও খেলে গেল।
মাসে ২৫ টাকা মানে হল বছরে ৩০০ টাকা।
বর্তমানে দেশে যত ধরনের স্মার্টফোন পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমদামি সেটের দামও দুই হাজার ১৫০ টাকা। এ ফোনই যদি কিস্তিতে দেওয়া হয়, তাহলে পুরো টাকা তুলতেই তো লেগে যাবে সাড়ে সাত বছর।
অন্যদিকে সাত বছর ধরে এ টাকা তুলতে যে চ্যানেল বা পদ্ধতি তৈরি করতে হবে সেটির খরচ যোগ করলে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায়। এত দীর্ঘ সময় ধরে টাকা তুলতে এর সঙ্গে যদি ব্যাংক সুদ যোগ হয়, তখন কি হবে? এতে ঠোটের কোনে আবছা করে লেগে থাকা হাসিটা একটু বিস্তৃত হলো, একটি ভাল খবর থেকে যোগ হলো অস্বস্তিও।
অন্যদিকে ২ হাজার ১৫০ টাকা দামের হ্যান্ডসেটটির ব্যবহারের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে এটির বয়স হবে বড় জোর এক থেকে দেড় বছর। তাই যদি হয়, তাহলে তো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গেল।
মন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, প্রয়োজনে কিছু ফিচার কমিয়ে খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। সেটাও ঠিক কথা। কিন্তু খরচ কতোটা কমানো সম্ভব? অংকটা এখানেও করতে হবে।
এমন ঘোষণার পেছনের কারণই বা কি? ব্যবসায়িক দিক থেকেও এর বিচার বিশ্লেষণের চেষ্টা করছেন তারা। কেউ বলছেন, মন্ত্রী মহোদয় যখন বলেছেন তখন তিনি নিশ্চয়ই ভেবে চিন্তেই ঘোষণা দিয়েছেন। সেটাই বোঝার চেষ্টা করছেন তারা। তাদের মতে, কিছুটা সময় গেলে হয়তো হ্যান্ডসেটের দাম আরেকটু কমে আসতে পারে। সেটা কমে কতোটা নামতে পারে-সেই উত্তরও অজানা তাদের।
মনে পড়ে গেল বছর কয়েক আগে দেশে ১০ হাজার টাকায় ‘দোয়েল’ ল্যাপটপ বানাতে গিয়ে কী কান্ড-কারখানাই না ঘটেছিল। অতি সস্তা ওই ডিভাইস বাচ্চাদের খেলনার কাজেও ঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় নাই। হ্যান্ডসেটের ক্ষেত্রেও কি তেমনটা হবে?
একই সঙ্গে যাদের জন্য ২৫ টাকা কিস্তিতে স্মার্টফোন দেওয়ার আয়োজন তারাই বা কতটুকু প্রস্তুত? এমন হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে তথ্যসেবা নিতে তাদের আর্থ সামাজিক ও শিক্ষাগত অবস্থানের সঙ্গে আগ্রহের মাত্রাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
একটি দারুণ আনন্দদায়ক ঘোষণা উৎসাহের সঙ্গে পড়তে গিয়েই মনে জন্ম নেয় এসব প্রশ্ন। আর এগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়েই ‘হাসি’ ও ‘খুশি’ পরিস্থিতির উদ্ভব।
সৌজন্যেঃ www PostBangla.GA
আমি বিয়ে করলে যে বাচ্চা হবে,
তাকে ওটা দিবো