সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি কম্পিউটারের জীবনকাল শেষ হওয়ার কালে প্রকাশিত লক্ষণ সম্বলিত আমার আজকের টিউন।
প্রত্যেক রমজানের ঈদে আমাদের এলাকায় ঈদ মেলা হয়। আর ছোটবেলায় সারা বছরে কোন খেলনা না কিনলেও ঈদে অন্তত দু’একটা ইলেক্ট্রনিক্স খেলনা কিনা হতো। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমার বন্ধুদের খেলনাগুলো কিছুদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা গেলেও আমারটা কখনো দু’দিনের বেশি ব্যবহার করতে পারতাম না। যদিও নষ্ট না হলে কখনো আমি খেলনা খুলতাম না, তারপরেও আমারটা কেন আগে নষ্ট হতো সেটা কখনো বুঝতে পারতাম না। সত্যিকার অর্থেই এটা জানা সম্ভবও নয় যে ঠিক কখন একটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাসের জীবনকাল শেষ হয়ে যাবে। কারন বিক্রেতারা পণ্য বিক্রয়ের সময়েই কখনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনা যে ডিভাইসটি এতোদিনের মধ্যে নষ্ট হবে না। কিছু ডিভাইস অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় আবার কিছু ডিভাইস কেনার পরেই নষ্ট হয়ে যায়। মানুষের জীবন এবং ইলেক্ট্রনিক্স পন্যের কোন গ্যারান্টি হয় না। তবে আমরা যেমন কোন ব্যক্তির ব্রেইন টিউমার কিংবা এইডস হলে তার মৃত্যুর সম্ভবনা বলে দিতে পারি ঠিক তেমনি কম্পিউটারের কিছু লক্ষণ দেখেও আমরা বলে দিতে পারবো যে কম্পিউটারটি টিকবে নাকি তার রিপ্লেসমেন্ট লাগবে। আজকের টিউনে আমরা কম্পিউটারের এমন কিছু লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো প্রকাশ পেলে আপনাকে ধরেই নিতে হবে যে ওই পিসি আর ব্যবহারযোগ্য নয়, বরং সেটাকে রিপ্লেস করাই বেশি প্রয়োজন। তবে আর দেরি কেন, চলুন লক্ষণগুলো জেনে নিই।
কম্পিউটারে লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা না গেলে
আজ থেকে কয়েক বছর আগেও কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের প্রতি এতোটা আগ্রহী ছিলো না। কারন প্রায় ৩ থেকে ৪ বছর পরপর একটা করে অপারেটিং সিস্টেম রিলিজ হতো। এরফলে বহুদিন থেকে একটি অপারেটিং সিস্টেমে অভ্যস্ত থাকা মানুষগুলো নতুনকে এতো সহজে স্বাগত জানাতে চাইতো না। তাছাড়া উন্নত দেশগুলোতে এবং আমাদের দেশের সৎ মানুষগুলো যারা পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেনা তাদের জন্য সব সময় নতুন অপারেটিং সিস্টেম কেনা সম্ভবও হতো না। এরফলে পুরাতন অপারেটিং সিস্টেমেই অনেকে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। কিন্তু বর্তমানে বছরে বছরে অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড হচ্ছে। সেই সাথে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম তাদের মেজর একটি আপগ্রেড উইন্ডোজ ৮ থেকে ৮.১ এবং পরবর্তিতে উইন্ডোজ ১০ এ আপগ্রেডেশন ফ্রি করে দেওয়াতে অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড থাকাটা এখন জরুরী মনে হয়। এছাড়াও অন্যন্য অপারেটিং সিস্টেমগুলো ইদানিং তাদের সিস্টেমগুলো আপগ্রেড করছে। তবে কোম্পানিগুলো অপারেটিং সিস্টেম আপগ্রেড করলে সমস্যা না, কিন্তু সমস্যা হলো যদি আপগ্রেডেট অপারেটিং সিস্টেম আমাদের পিসিতে না চলে।
প্রত্যেকটা অপারেটিং সিস্টেম আপডেট, আপগ্রেড কিংবা বাগ ফিক্স করে ফাংশনালিটি বৃদ্ধি করলে হার্ডওয়্যারগুলোর রিকোয়ারমেন্টেও সামান্য পরিবর্তন আসে। যদিও খুব বেশি পরিবর্তন বা পরিবর্ধন লাগেনা তবুও সামান্য যা পরিবর্তন হয় সেটা মোটামুটি বর্তমানে সবার নাগালের মধ্যেই থাকে। এখন আপনার পিসি যদি হার্ডওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী ফিট থাকার পরেও নতুন অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট না করে তাহলে বুঝতে হবে পিসির জীবনকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবং খুব দ্রুতই এটার রিপ্লেসমেন্ট দরকার।
লেটেস্ট গেইম কিংবা অ্যাপ্লিকেশন না চললে
অনেক পরিচিত মানুষকে দেখেছি যারা মান্ধাতা আমলের ফটোশপ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় যে লেটেস্ট সফটওয়্যার নয় কেন? তখন তারা বলে লেটেস্ট সফটওয়্যার নাকি পিসিতে রান হয় না। ঠিক এরকম করে কোন গেইমও যদি পিসিতে না চলে তাহলে বুঝে নিবেন যে আপনার পিসির হার্ডওয়্যার দুর্বল হয়ে গেছে। তবে একটি বিষয় সব সময় মাথায় রাখবেন যে মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী ডিভাইসটি ঠিক থাকার পরেও যখন সফটওয়্যার রান করবে না তখনই সেটাকে সমস্যা হিসাবে ধরা হবে।
কম্পিউটার অত্যাধিক স্লো হয়ে গেলে
কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। কারও মনের ভুলে কম্পিউটার স্লো মনে হয় আবার কারও সত্যিকার অর্থেই কম্পিউটার স্লো মনে হয়। আমার এক বন্ধু আছে সে যতোবার আমার কম্পিউটার ব্যবহার করবে ততোবার বলবে যে আমার কম্পিউটার নাকি অনেক ফাস্ট আর তারটা নাকি স্লো। কিন্তু আমি দুটো কম্পিউটারের স্পিডের মাঝে কোন পার্থক্য খুঁজে পাইনি। যাহোক, কম্পিউটার স্লো বিবেচিত হওয়ার জন্য কিছু স্ট্যান্ডার্ড প্যারামিটার আছে। সেগুলোর ভেতরে যে কোন একটা আপনার কম্পিউটারে দেখা দিলে সেটাকে স্লো কম্পিউটার হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
স্লো কম্পিউটারের লক্ষণঃ

কম্পিউটার চালু হতে যে সময় লাগে সেই সময়ের ভেতরে যদি আপনি এক কাপ চা বানিয়ে ফেলতে পারেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার কম্পিউটার স্লো।
ব্রাউজারে ডজন খানেক ট্যাব ওপেন করার পরে যদি পিসি কাজ করা বন্ধ করে দেয় তাহলে বুঝবেন আপনার পিসি স্লো হয়ে গেছে।
টাইপ করার সময় দেখা গেলো আপনি প্রায় একটি পুরো বাক্য লিখে ফেলেছেন কিন্তু এই সময়ের মাঝে কম্পিউটার স্ক্রিনে কেবল একটি বা দুটে শব্দ দেখা যাচ্ছে।
মাঝে মাঝে সফটওয়্যার দিয়ে কিছু সমস্যা সমাধান হয় বলে মনে হলেও পিসি ক্রমাগত স্লো হয়ে যাচ্ছে।
পিসির সাথে কোন কিছু কানেক্ট করা না গেলে
পিসির বয়স হয়ে গেলেই সাধারনত এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ইউএসবি ডিভাইস কানেক্ট হয় না, মাউস কিবোর্ড কিংবা মাইক সংযোগে সমস্যা হয়। সেই সাথে মনিটরের সাথে সিপিইউ সংযোগে সমস্যা। পাওয়ার সাপ্লাই ঠিক মতো না হওয়া। এই সমস্যাগুলো যদি উপর্যুপরি হতে থাকে এবং নিরাময়ের যাবতীয় চেষ্টা যদি ব্যর্থ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার পিসি রিপ্লেসমেন্টের সময় ঘনিয়ে আসছে।
কম্পিউটারে ড্রাইভ এবং ফিজিক্যাল মেমোরিতে স্প্যাস সংকট দেখা দিলে
যদি দেখেন আপনার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভগুলো স্প্যাস সংকটের কারনে প্রচন্ড চাপের মধ্যে আছে। তারপর সিস্টেম মনিটর চালু করে দেখলেন যে কম্পিউটারের র্যাম ফুল হয়ে যাচ্ছে যদিও মাত্র কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন চালু করা আছে। সিপিইউ ইউজ ৮০% এর উপরে উঠে গেছে এবং কম্পিউটার খুব দ্রুত গরম হয়ে যাচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলো তাদের কাজের সর্বোচ্চ সীমায় পৌছে গেছে। এই ক্ষেত্রে আপনি কিছু হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। তবে একটি কথা মনে রাখবেন, যখনি আপনার কিছু পার্টস পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে তখনি বুঝবেন পিসি দ্রুত পারমানেন্ট আপগ্রেডের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
কম্পিউটারের ভেতর বিচিত্র রকম শব্দ হতে থাকলে
আপনি যদি দেখেন পিসি চালু করার সময় অনেক তীব্র কোন শব্দ হচ্ছে। চালু হওয়ার পরে হার্ডডিস্কের ঘুর্ণনের বিকট শব্দ শুনা যাচ্ছে। তাছাড়া অকারন পিসি থেকে শব্দ শোনা, মাইকে অনাকাঙ্খিত শব্দ হওয়া ইত্যাদি হলে বুঝবেন হার্ডওয়্যারগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এসব কারনে যদি পিসির ওভার হিটিং হয় তাহলে বুঝবেন হার্ডওয়্যারের মেয়াদ শেষের দিকে। আপনার দ্রুত এই পিসি পরিবর্তন করে নতুন একটা কিনতে হবে।
কম্পিউটার ব্যবহারের চাইতে মেরামতে বেশি সময় ব্যয় হলে
কিছু কম্পিউটারের অবস্থা এমন হয় যে, সার্ভিস সেন্টারের সাথে মনে হয় তাদের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। সার্ভিস সেন্টারে না নিয়ে গেলে কম্পিউটার চলতেই চায় না। ধীরে কাজ করা, মাঝে মাঝেই ব্লু স্ক্রিন আসা অথবা স্ক্রিন কালো হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যাগুলো একের পর এক দেখা দেয়। আপনি ৫ মিনিট কম্পিউটার চালানে এটাকে ১০ মিনিট ঠান্ডা করতে হয়। এরকম সমস্যা হলে ধরেই নিতে হবে যে কম্পিউটারটি আর বেশিদিন ব্যবহার যোগ্য থাকবে না। খুব শীঘ্রই সেটার রিপ্লেসমেন্ট প্রয়োজন হবে।
আজকের টিউনে যে লক্ষণগুলো বর্ণনা করা হয়েছে তার কোন একটি বা সামগ্রিকভাবে সবগুলো সমস্যা যদি কোন কম্পিউটারে থাকে তাহলে বুঝে নিবেন সেই কম্পিউটার আর বেশিদিন ব্যবহারযোগ্য থাকবে না। তবে যারা এই সমস্যায় ভুগতে থাকলেও নতুন কম্পিউটার কিনার সামর্থ্য রাখেন না তাদের কী উপায় হবে? সমস্যা এবং সমাধান দুটো এক সাথেই পৃথিবীতে আসে। তবে সমস্যা দেখার পরেই আমরা কেবল সমাধান খুঁজতে বের হই। আমার আগামী কয়েকটা টিউনে স্লো পিসিকে কিংবা পরিত্যক্ত পিসিকে সচল করার এক্সক্লুসিভ কিছু টিপস পাবেন। সেই টিউনগুলো যেন মিস না হয়। আর আমার প্রত্যেকটি টিউন পাবলিশড হওয়ামাত্রই ইমেইলে নোটিফিকেশন পেতে চাইলে
এখানে ক্লিক করে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন। আপনার প্রযুক্তিময় জীবনকে সুখী করতেই আমার প্রতিদিনের পথচলা।
শেষ কথা
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।

Leave a Reply