আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।
আমার আগের সব পর্ব:-
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬
[পর্ব ২০] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আলী ইবনুল-আব্বাস আল-মাজুসী:-ধাত্রীবিদ্যা এবং পেরিনেটোলজি এর অগ্রদূত]
[পর্ব ২১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে তোফায়েল:-প্রথম দার্শনিক উপন্যাস রচয়িতা]
[পর্ব ২৬]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।
[পর্ব ২৮]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাহানী]
35.ইবনে বাজা
প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ, যুক্তিবিদ, দার্শনিক, পদার্থবিদ, মনোবিজ্ঞানী, কবি এবং বিজ্ঞানী আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে আস সাইগ আত তুজিবি ইবনে বাজা আল তুজিবি। তবে তিনি ইবনে বাজ্জাহ নামে বেশি পরিচিত।পশ্চিমা বিশ্বে তিনি আভেমপেস বলেও পরিচিত।
ইবনে বাজ্জা বর্তমান স্পেনের আরাগণের জারাগোজায় ১০৮৫ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে জ্যোতির্বিদ, সঙ্গীতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী, চিকিৎসক, উদ্ভিদ বিজ্ঞনী, কবি এবং দার্শনিক।তার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন সেভিলের চিকিৎসক আবু জাফর ইবনে হারুন আল তুরজালি।অ্যাভেম্পেস পশ্চিমা বিশ্বের অ্যারিস্টটল সম্পর্কিত প্রথম ভাষ্য লিখেছিলেন
জারাগোসাতেই তিনি পড়াশোনা করেন এবং নিজের জ্ঞান গরিমার স্বীকৃতি স্বরূপ এক পর্যায়ে জারাগোসার তৎকালিন গভর্নর আবু বকর এর উজীর পদ লাভ করেন এবং সেখানে ২০ বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই তিনি পাণ্ডিত্য এবং রাজনৈতিক উচ্চ পদ এই দুইই লাভ করতে সক্ষম হন।
মুসলিম স্পেনে তখন চলছিল আল মোরাভিদ শাসনামল। ইবনে বাজা তার জীবনের একটা বড় সময়ই কাটিয়েছেন রাজনীতি আর বৈষয়িক বিষয় নিয়ে, এদিক থেকে তিনি ছিলেন তার পূর্বজদের চেয়ে একেবারেই আলাদা। সঙ্গীত, কবিতা, মদ আর রাজ অনুগ্রহ মিলিয়ে ত্যাগের বদলে ভোগের জীবন-যাপনেই তিনি অভ্যস্ত ছিলেন বেশি, বিশেষ করে আবু বকর উযির থাকাকালিন অবস্থায়।
অথচ বৈষয়িক উচ্চাভিলাস সত্ত্বেও নিষ্ঠার সাথে তিনি দর্শন ও বিজ্ঞানে যে অবদান রেখে গিয়েছিলেন তা গড়ে দিয়ে গিয়েছিল ইবনে তুফায়েল আর ইবনে রুশদ এর ভবিষ্যতের কর্মকান্ডের ভিত্তি। তার সবচেয়ে কট্টর সমালোচকও তাকে অভিহিত করেছেন সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাধর ব্যক্তি হিসাবে। তবে তাঁর অকালমৃত্যুতে তাঁর প্রতিভার সর্বোচ্চ বিকাশ এবং পরিণতি ব্যাহত করেছে। মৃত্যুকালিন সময়ে তাঁর বহু গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকই ছিল অসম্পূর্ণ।
অকালমৃত্যুর শিকার হলেও এই স্বল্প সময়েও তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, আল-কেমি ও দর্শন বিষয়ক বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেন।
তবে ইতিহাসে দার্শনিক হিসেবে তিনি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ছিলেন।
ইবনে বাজা’র দার্শনিক অবদান পাশ্চাত্যের মুসলিম দর্শন চর্চায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পেনিয় খলিফা আল হাকাম আরব ভূখন্ড থেকে যেসব দর্শন বিষয়ক রচনা স্পেনে নিয়ে যান তার বেশিরভাগই ছিল স্পেনের পন্ডিতদের জন্য জটিল এবং দুর্বোধ্য। পরবর্তিযুগে যেই অল্প কয়েকজন মনিষীর প্রচেষ্টা এসব গ্রন্থের সহজ ভাষ্য তৈরি হয় ইবনে বাজা ছিলেন তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ইবনে বাজা তাঁর দার্শনিক মতামতের ক্ষেত্রে আল-ফারাবির দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
তবে, অধুনা এমন ধারণাও করা হয় যে, তিনি আসলে ফারাবির দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন না, ফারাবির চিন্তার সাথে তাঁর চিন্তার মিল আছে মাত্র। ফারাবির দ্বারা প্রভাবিত হন বা না হন বেশ কিছু দিক থেকে তিনি ফারাবিকেও অতিক্রম করেন। দর্শন চর্চায় এরিস্টটলকে বোঝার ক্ষেত্রেই তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁর এরিস্টটলের ভাষ্যগুলো পড়লেই বোঝা যায় যে এরিস্টটলই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান এবং এরিস্টটলকে তিনি আয়ত্ব করেছিলেন নিষ্ঠা এবং অনুরাগের সাথে।
বাস্তব সত্ত্বা বিষয়ক আলোচনায় অবশ্য তিনি তাঁর পূর্বজদের চেয়ে ব্যাতিক্রম ছিলেন। ফারাবি-সিনা যেমন বাস্তব সত্ত্বাকে একক হিসাবে গণ্য করেছেন সেইখানে ইবনে বাজা বাস্তবসত্ত্বার ক্ষেত্রে ছিলেন বহুত্ববাদী।
তার মতে জড়, আত্মা এবং বুদ্ধি এই তিনটিই বাস্তবসত্ত্বা, সেই অর্থে এই তিনটিই অনন্তকাল ধরে বিরাজমান আছে, যা ছিল পুরোপুরি মৌল ইসলাম পরিপন্থী মতবাদ। তবে এর মধ্যে জড় নিজেকে চালিত করতে পারে না, আত্মা এবং বুদ্ধি জড়কে চালিত করে। আত্মার অবস্থান বুদ্ধি আর জড়ের মাঝখানে। আত্মা স্বয়ংচালিত কিন্তু বুদ্ধি অচালিত। বুদ্ধি বিকারহীন এবং পরিবর্তনহীন, এর আকার ও শক্তি অনন্ত শ্বাশ্বত।
তার দর্শনের সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে নির্গুন, পরিবর্তনহীন এবং বিকারহীন “সক্রিয় বুদ্ধি”। মানব বুদ্ধি আর সক্রিয় বুদ্ধির মধ্যে গুনগত কোন পার্থক্য নাই। জড়জগতে বিরাজমান “মানব বুদ্ধির” সাথে “সক্রিয় বুদ্ধির” মিলনকেই মুক্তি এবং সর্বোচ্চ দার্শনিক লক্ষ্য হিসাবে উল্লেখ করে ইবনে বাজা। তার মতে এই যোগাযোগ শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু ব্যাক্তির পক্ষেই অর্জন করা সম্ভব, আপামর মানুষের জন্য নয়।
পাশ্চাত্য ধর্মতাত্ত্বিকদের নিকট ইবনে বাজা পৃথক সত্ত্বা মতবাদের প্রথম উদ্যোক্তা। তাদের মতে ইবনে বাজা বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ বাস্তব সত্তার উর্দ্ধে উঠে গুনবাচক সত্তার সম্যক জ্ঞানের অধিকারী হয়। একথা আজ সর্ববাদীসম্মত যে, ইউরোপিয় ধর্মতাত্ত্বিকরা ইবনে বাজার নিকট থেকেই পৃথক স্বর্গীয় সত্ত্বার মতবাদ গ্রহণ করেছিলেন।
তার দার্শনিক মতামত ইবনে রুশদ ও আলবার্টাস মেগনাসের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। অল্প সময়ে মৃত্যুর কারণে তার অধিকাংশ লেখা ও বই অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। ওষুধ, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে তার অগাধ পান্ডিত্য ছিল।
তাঁর দার্শনিক চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটে রিসালা ইত্তিসাল আল-আকল বি-আল-ইনসান (Treatise on the Unison of the Intellect with Man)
এবং ইবনে বাজ্জাহ এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক রচনাটি কিতাব তদবীরুল মুতাওয়াহিদ ( Rule of the Solitary) -এ।
অনেক মুসলিম জীবনীবিদ অ্যাভেম্পেসকে নাস্তিক বলে মনে করেন।
তাঁর ল্যাটিনাইজড নাম ‘অ্যাভেম্পেস’ সেই দিনগুলিতে হিব্রু ও লাতিন পণ্ডিতদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল। তাঁর গ্রন্থগুলি , তদবীর আল-মুতাওয়াহিদ , রিসালাতল আল-ইত্তিশাল এবং রিসালাত আল-ওয়াদা হিব্রু অনুবাদ করেছিলেন এবং ইউরোপে বহুলভাবে পড়া হয়। ইবনে রুশদ তার তালখিস কিতাব আল-নাফসে স্বীকার করেছেন যে তিনি মাইন্ড সম্পর্কে যা বলেছেন তা ইবনে বাজাহর দৃষ্টিভঙ্গি।
তাঁর রচনাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত কিতাব হ’ল কিতাব আল-নাফস (The Book on the Soul) মনোবিজ্ঞানের উপর একটি দার্শনিক গ্রন্থ যা ইবনে রুশদ সহ পরবর্তীকালে পণ্ডিতদের প্রভাবিত করেছিল।
মনস্তত্ত্বের দার্শনিক গ্রন্থ হিসাবে ইবনে বাজাহের কিতাব আল-নাফস , এ পর্যন্ত জানা প্রাচীনতম পাঠ যা এরিস্টটলের ডি আনিমার তিনটি গ্রন্থের সংক্ষিপ্তসার দেয়।
কিতাব আল-নফস এ ইবনে বাজাহ প্রথমবারের মতো পেরিপেটিক মনোবিজ্ঞানের একটি সম্পূর্ণ এবং বিস্তৃত সমীক্ষার পাশাপাশি আত্মার ব্যাপারে ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা করেছেন।
এ ছাড়া ইবনে বাজাহ প্লেটো, অ্যাফ্রোডিসিয়াসের আলেকজান্ডার, গ্যালেন এবং থিমিসটিয়াসকে উল্লেখ করেছেন। মুসলিম দার্শনিকদের মধ্যে তিনি ফারাবীকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন এবং গাজ্জালির কথাও শ্রদ্ধা ও শ্রদ্ধার সাথে উল্লেখ করেছেন।যদিও তার মৃত্যুতে ইসলামি দর্শনের আত্মা বিষয়ে তার অবদান অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।
তিনি জ্যোতির্বিদ্যাকে গণিতের অংশ হিসাবে দেখতেন।জ্যোতির্বিদ্যায় তিনি টলেমির বেশ কিছু ধারণার সমালোচনা করে ইবনে তুফায়েল এবং আল বিতরুজির ভবিষ্যত গবেষনার পথ সুগম করেন এই সমালােচনার ফলেই বিতরুজির Theory of Spiral Motion আবিষ্কারের সহায়ক হয়।
আল বিতরুজি টলেমির সৌরজগতের ভূকেন্দ্রিক মডেলের সমালোচনা করেন যার মুল উপাদান তিনি পেয়েছিলেন ইবনে বাজা’র কাছে। আল বিতরুজির সমালোচনা কোপার্নিকাসের সৌরকেন্দ্রিক মতামতকে অনুপ্রাণিত করে।
পদার্থবিদ্যায় বাজা অনেক দিক থেকেই ছিলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি এবং আইজ্যাক নিউটনের পূর্বজ। গ্যালিলিওর গতিবিদ্যায় বাজার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
বিশেষ করে বাজা এবং গ্যালিলিও দুজনের গতির সংজ্ঞাই হুবোহু এক। নিউটনের গতিবিদ্যার তৃতীয় সূত্রের সবচেয়ে পুরাতন বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় বাজা’র “Text 71” রচনায়। এছাড়াও তাকে ল অব মোশনের পথপ্রদর্শক বলা হয়।
নিউটন অবশ্য প্রভাবিত হয়েছিলেন লাইবেনিজের মতবাদের মাধ্যমে আর সেইক্ষেত্রে লাইবেনিজের উপর ইবনে বাজার প্রভাব থাকতে পারে। তবে গতিবিদ্যার এই ক্রমন্নোতির ইতিহাস খুঁজতে গেলে আমাদের একেবারে গোড়ায় এরিস্টটল পর্যন্ত পৌছতে হবে।
এছাড়াও তার projectile motion সম্পর্কিত তত্ত্ব পাওয়া যায় Text 71 নামক একটি পাঠ্যে,তার projectile motion সম্পর্কিত কাজ আরবি থেকে ল্যাটিনে কখনও অনুবাদ হয় নি।
তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। উদ্ভিদবিদ হিসেবেও তার সুনাম ছিল।
ইবনে বাজার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থের নাম কিতাবুল নাবাত(The Book of Plants). এটি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ক একটি গ্রন্থ। এতে উদ্ভিদের লিঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এই গ্রন্থ মধ্যযুগীয় ইউরোপে উদ্ভিদ বিদ্যার উপরে সবচেয়ে প্রামাণ্য এবং জনপ্রিয় পুস্তক হিসাবে স্বীকৃত ছিল।
তার সময়ে দর্শন ছাড়াও সঙ্গীত ও কবিতার একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। ১৯৫১ সালে তার দিওয়ান আবিষ্কৃত হয়।তিনি যশস্বী কবিও ছিলেন।তার সঙ্গীত বিষয়ক রচনা মধ্যযুগে ইউরোপে বিখ্যাত ছিল।
তার অধিকাংশ কর্ম টিকে না থাকলেও জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে তার তত্ত্ব মাইমোনিডস ও ইবনে রুশদের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। এসকল তত্ত্ব পরবর্তী ইসলামি সভ্যতা ও গ্যালিলিও গ্যালিলিসহ ইউরোপের রেনেসাকে প্রভাবিত করেছে।
তিনি যে কেবল চিকিৎসা ব্যবসায়ী ছিলেন, তা নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞান তাঁর মৌলিক অবদানে বিশেষ সমৃদ্ধি লাভ করে। অঙ্কশাস্ত্র, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সর্বোপরি সঙ্গীত বিজ্ঞানে তার অবাদন বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁকে অমর করে রেখেছে।
১১১৮ সালে খ্রিষ্টানদের কাছে জারাগোসার মুসলিম সরকারের পতন ঘটলে শুরু হয় ইবনে বাজার খারাপ সময়।
১১১৮ থেকে ১১৩৬ পর্যন্ত সময়কালে ইবনে বাজার জীবন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায় না। তবে এই সময়কালের শুরুর দিকটায় তিনি একাধিক আলমোরাভিদ শাসকের দরবারে অবস্থান লাভের চেষ্টা করেন।
কিন্তু তাঁর সমসাময়িক বেশ কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রু তাঁর রচনার মৌল ইসলামের সাথে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ অংশগুলোকে টার্গেট করে তাকে ধর্মবিরোধী, ইসলাম বিরোধী এহেন নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।এরিষ্টটলের নিষ্ঠাবান অনুসারী হওয়া, বহুত্ববাদী বাস্তবসত্ত্বার ধারণা প্রচার ইত্যাদি কারণে অল্প বয়সেই ইবনে বাজাকে ধর্ম বিরোধীতার অভিযোগে পরতে হয়।
জারাগোসার পতনের পর এবং পৃষ্ঠপোষকতাহীন হওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে বারবার ধর্মবিরোধীতার অভিযোগ ওঠে।
এসময় তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেন।
১১৩৬ সালে তিনি সেভিলে বসবাস করছিলেন বলে জানা যায়। এই সেভিলেই ১১৩৮ সালে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়, অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথমেই যার নাম আসে, তিনি তৎকালিন বিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে জুহুর।
নিজের গুরুত্বপূর্ণ বহুকাজ অসম্পূর্ণ রেখেই অকালে মৃত্যুবরণ করেন মুসলিম পাশ্চাত্যের এক নক্ষত্র।
তবে নিজের ক্ষুদ্র জীবনেও ইবনে বাজা লাভ করেছিলেন জারাগোজার গভর্নর আবু বকরএর ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব। সমসাময়িক শিষ্যদের মধ্যেও তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে আল ইমাম এবং ইবনে তুফায়েল পরবর্তি প্রজন্মে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় নেতৃত্ব দেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে ইবনে রুশদ, মায়মোনিডস, আল বিতরুজি, থমাস একুইনাস, গ্যালিলিও গ্যালিলি এবং আরো অনেকেই বিভিন্ন ভাবে ঋণী ছিলেন ইবনে বাজার কাছে।
২০০৯ সালে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ১৯৯ কিলোমিটার দূরে (৬২ মাইল) একটি গর্তকে তার সম্মানে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিয়ন (আইএইউ) দ্বারা “The Ibn Bajja” ক্রেটার নামকরণ করা হয় ।