<b>আসসালামু আলাইকুম</b>
আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।
আমার আগের সব পর্ব:-
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬
[পর্ব ৭] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[নাসির আল দীন আল তুসি:-ত্রিকোণমিতির স্রষ্টা,জিজ-ইলখানি উপাত্তের উদ্ভাবক]
[পর্ব ৮] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবুল ওয়াফা:-ত্রিকোণমিতির মূল স্থপতি]
[পর্ব ৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবু মারওয়ান/ইবনে জহুর:-পরভূক জীবাণু বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা,পরীক্ষামূলক সার্জারির জনক, পরীক্ষামূলক শারীরবৃত্তীয়, মানুষের ব্যবচ্ছেদ, অটোপস এর অগ্রদূত]
[পর্ব ১০]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাওয়ার্দি:-বিশুদ্ধতম গণতন্ত্রের প্রবক্তা]
[পর্ব ১১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল জাজারি:-মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ]
[পর্ব১২]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবুল কাসিম আল জাহারাবী:-অপারেটিভ/আধুনিক সার্জারীর জনক]
[পর্ব১৩]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আব্বাস ইবনে ফিরনাস:-বিমানের জনক,প্রথম যিনি উড়েছিলেন আকাশে]
[পর্ব ১৪]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল-কিন্দি:-ফার্মাকোলজির অগ্রদূত, পেরিপ্যাটেটিক দর্শনের জনক,সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী,সাইকোথেরাপি ও সংগীত থেরাপির অগ্রদূত]
[পর্ব ১৫]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ফাতিমা আল ফিহরি:-বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে নারী]
[পর্ব ১৬]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল-খৈয়াম:-বাইনমিয়েল থিওরেমের প্রথম আবিষ্কারক,এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক]
পর্ব ১৭]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[জাকারিয়া আল রাযি:-আরবীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রাণপুরুষ]
[পর্ব ১৮]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল ফারাবি:-অ্যারিস্টটলের পর দর্শনের সেকেন্ড মাস্টার,পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী]
[পর্ব ১৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল জারকালি:-সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী]
[পর্ব ২০] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আলী ইবনুল-আব্বাস আল-মাজুসী:-ধাত্রীবিদ্যা এবং পেরিনেটোলজি এর অগ্রদূত]
[পর্ব ২১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে তোফায়েল:-প্রথম দার্শনিক উপন্যাস রচয়িতা]
[পর্ব ২২]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল বালখি:-যিনি সর্বপ্রথম দেহ ও আত্মা সম্পর্কিত রোগসমূহকে সফলভাবে আলোচনা করেছিলেন]
[পর্ব ২৩]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ছাবেত ইবনে কোরা:-স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা]
[পর্ব ২৪]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবু কামিল:-এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী]
[পর্ব ২৫]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আলী ইবনে সাহল রাব্বান আত তাবারী:-চিকিৎসা বিশ্বকোষ এর অগ্রদূত]
[পর্ব ২৬]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।
[পর্ব ২৭]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে ইউনুস:-ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক]
[পর্ব ২৮]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাহানী]
[পর্ব ২৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে বাজা]
36.ফজলুর রহমান খান(স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন,Father of tubular designs)
স্থাপত্যের আইনস্টাইন বলেই সারা বিশ্ব চেনে তাকে।স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে স্কাইস্ক্র্যাপার্স নির্মাণ কৌশলে এক বিপ্লব সাধন করেন।
পরিচয়
তার নাম স্থাপত্যবিদ ফজলুর রহমান খান সংক্ষেপে এফ আর খান। বিশ্বসেরা স্থাপত্যবিদদের কাতারে এই বাংলাদেশির অনন্য সৃষ্টিশীলতা রয়েছে আপন বৈশিষ্ট্যে ভাস্বর হয়ে।১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভান্ডারীকান্দি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তার বাবা ছিলেন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ খান বাহাদুর রহমান খান আর মাতার নাম ছিল বেগম খাদিজা খানম।
শিক্ষা
১৯৪৪ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ-এ ভর্তি হন।
এরপর ১৯৫০ সালে তিনি কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ ভর্তি হোন।১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
তিনি ঢাকায় ফিরে এলে তৎকালীন আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাকি পরীক্ষা সমাপ্ত করেন৷ কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার এবং আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরীক্ষার উভয় ফলের ভিত্তিতে তাকে বিশেষ বিবেচনায় Bechelor of Engineering Degree অর্থাৎ প্রকৌশলে স্নাতক উপাধি প্রদান করা হয়৷ এ মূল্যায়নে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।
তারপর তিনি আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৫২ সালে ফুলব্রাইট ফেলোশিপ ও ফোর্ড ফাইন্ডেশন স্কলারশিপ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য আমেরিকায় যান ২৩ বছরের এই তরুণ।যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তত্ত্বীয় ও ফলিত মেকানিক্স এ মাস্টার্স করার পর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
১৯৫৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর বিখ্যাত স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিডমোর, ওউইং ও মেরিল (সংক্ষেপে SO ) এ যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়।
১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পূর্ব পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে আমেরিকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিড মোর এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে এ কোম্পানীর শিকাগো অফিসের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন৷
পাশাপাশি তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এর স্থাপত্য বিভাগে অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখানে পরে তিনি প্রফেসর এমিরিটাস হয়েছিলেন।
আবিষ্কার
এসময় এফ আর খান আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের একদম নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
তার যুগান্তকারী এই তত্ত্বের নাম টিউব স্ট্রাকচার সিস্টেম।এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আকাশচুম্বী অট্টালিকা বানানো খুব সাশ্রয়ী।১৯৬০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় সবগুলো আকাশচুম্বী ভবন তার টিউব স্ট্রাকচার সিস্টেমকে অনুসরণ করে বানানো হয়েছে।
এফ আর খানের উদ্ভাবনের আগে যে আকাশচুম্বী ইমারত নির্মাণ করা যেত না তা কিন্তু নয়। কিন্তু সেসব ইমারত নির্মাণে নিচের দিকের ফ্লোরগুলোর দেয়াল আর কলামে যে পুরুত্ব প্রয়োজন হতো আর যে পরিমাণ স্টিল প্রয়োজন হতো তা বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে মোটেও লাভজনক ছিল না।
২০-৩০ তলার বেশি উচ্চতার ভবন এ পদ্ধতিতে নির্মাণ কার্যত অসম্ভব ছিল। এ বাধাটি অতিক্রম করতে টিউব স্ট্রাকচার পদ্ধতি নিয়ে আসেন বাংলাদেশি-আমেরিকান স্থপতি এফ আর খান। বলা যায় ভবন নির্মাণে বিপ্লব নিয়ে আসেন তিনি।
এই নতুন পদ্ধতি স্থাপত্যিক স্থান সংকুলানে অত্যন্ত কার্যকর। এখন উঁচু টাওয়ার বাক্সের আকারের মতো করে তৈরি হয় না, কেন না টিউব স্ট্রাকচারে ভবন যে কোনো আকৃতি নিতে পারে। এফ. আর খান কর্তৃক উদ্ভাবিত ফ্রেমড্ টিউব স্ট্রাকচার, ওয়াল ফ্রেম ইন্টারএ্যাকশন, ট্রাস্ড টিউব, বান্ডলড্ টিউব এবং কম্পোজিট সিস্টেম আজকের প্রচলিত স্কাইস্ক্র্যাপার্সে ব্যবহূত হচ্ছে।
ভবনের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এফ. আর খান প্রতিটি স্থাপত্য ক্রমের জন্য প্রযোজ্য স্ট্রাকচারাল সিস্টেম উদ্ভাবন করেন। শিকাগোর SOM-এর প্রধান স্থপতি ব্রুস জে গ্রাহামের সহযোগিতায় এফ. আর খান শিকাগোর একশ তলা জন হ্যানকক ভবনের জন্য ট্রাসড্ টিউব স্ট্রাকচারাল সিস্টেম (trussed tube structural system) পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
পরে তিনি বান্ডলড্ টিউব (bundled tube) নামক আর একটি স্ট্রাকচারাল সিস্টেম প্রয়োগ করেন। এই পদ্ধতি শিকাগোর ১১০ তলা উঁচু সিয়ার্স টাওয়ারের জন্য ছিল অত্যন্ত কার্যকর।
১৯৬৯ সালে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সিয়ার্স এন্ড কোং ১১০ তলা নির্মাণের পরিকল্পনা করল।কিন্তু ১০১ একরের মাঝারি সাইজের জায়গায় এরকম স্থাপনা বানানােটা খুব সহজ ছিলনা।
সিয়ার্স এন্ড কোং-এর স্বপ্নপূরণ করতে এগিয়ে এলেন বাঙালী প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান।তিন বছরের প্রচেষ্টায় আকাশে মাথা তুলে দাড়ায় ১১০ তলা উঁচু সিয়ার্স টাওয়ার(বর্তমানে উইলস টাওয়ার)।১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এটিই ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন।
এর আগে আমেরিকার প্রথম একশো তলা ভবন জন হ্যানকক সেন্টারের নকশাও করেছিলেন তিনি।
আর এভাবেই একশাে তলা বিল্ডিং বানানোর ফর্মূলা তিনিই আবিষ্কার করেছিলেন।
এই ফর্মূলাকে ভিত্তি ধরেই নির্মিত হয়েছে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা আর মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টাওয়ার।
এছাড়াও সৌদি আরবের জেদ্দা বিমান বন্দরে আরবের ঐতিহ্যবাহী বেদুইনদের তাঁবু আর আধুনিক কারিগরি দক্ষতার মিশ্রণে নির্মিত হজ টার্মিনালটি ৮০,০০০ হজ যাত্রী যেখানে একত্রে একনাগাড়ে ৩৬ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে সক্ষম।যা ফজলুর রহমান খানের আরেক বিশাল স্থাপত্যিক কীর্তি।১৯৮১ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁবুর মতো ছাদ, যা প্রয়োজনে ভাঁজ করে রাখা যায়।
ফজলুর রহমান খান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে বিদেশে জনমত গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রবাসের বাঙালিদের নিয়ে তিনি বাংলাদেশ ইমারজেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল নামে একটি ফান্ড গঠন করেছিলেন। এফ আর খানই প্রথম বাঙালি, যিনি মার্কিন সিনেটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমনে সচেতনতা তৈরির জন্য। ১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ ৫৩তম জন্মদিনের এক সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের জেদ্দায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বাংলার আইনস্টাইনের। ফজলুর রহমান খান চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন শিকাগো শহরেই। শিকাগোর গ্র্যাসল্যান্ড গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সম্মান
১৯৭২ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ডস তাকে কনস্ট্রাকশনস ম্যান অব দি ইয়ার মনোনীত করে। ১৯৭২ সালে আরাবানার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলামনাই এওয়ার্ড পান।
১৯৭৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এ একজন ইঞ্জিনিয়ারের জন্য প্রদেয় সর্বোচ্চ সন্মানে ভূষিত হন। ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ডস-এর ‘ম্যান হু সার্ভড দি বেষ্ট ইন্টারেস্ট অব দি কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি’-তে ফজলুর রহমানের নাম পাঁচ বার এসেছে (১৯৬৫, ১৯৬৮, ১৯৭০, ১৯৭১ এবং ১৯৭৯ সালে)।১৯৮৩ সালে আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব আর্কিটেক্টস ফজলুর রহমান খানকে তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য এআইএ ইন্সটিটিউট সম্মাননা প্রদান করে।
১৯৭৩ সালে নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি পান। ১৯৮০ সালে লেহাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি পান।
সৌদি আরবে হজ টার্মিনালের নক্সা এবং মুসলিম স্থাপত্যে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তিনি আগা খান পুরস্কার পান। ১৯৮৩ সালে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস থেকে এআইএ ইনস্টিটিউট সম্মান লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।
১৯৯৯ সালে এফ আর খান স্মরণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ তাঁর ছবি সংবলিত একটি নতুন ডাকটিকেট চালু করে। সিয়ার্স টাওয়ারের নিচের একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে কৃতী এই স্থপতির নামে। সেখানে তাঁর একটি ভাস্কর্যও রয়েছে যাতে ধাতুর অক্ষরে লেখা আছে তাঁর বাণী, ‘একজন প্রযুক্তিবিদের তাঁর আপন প্রযুক্তিতে হারিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তাঁকে অবশ্যই জীবনকে উপভোগ করতে পারতে হবে। আর জীবন হলো আর্ট, সঙ্গীত, নাটক এবং সর্বোপরি মানুষ।’
পরিশেষে
অসাধারণ মেধাবী এফ. আর. খান কাঠামাে প্রকৌশল বিষয়ে এক বৈপ্লবিক দিগন্তের সূচনা করেন। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অন্যন্য আর সবার উপলব্ধির সীমাকেও ছাড়িয়ে যায় । তিনি প্রকৌশল ক্ষেত্রে গােটা বিশ্বে সবচেয়ে বড় মাপের অবদান রেখে গেছেন।
এফ. আর. খান যেনাে সৃষ্টিকর্তার এক দৈব-দান। এর বাইরেও তিনি তার নিজস্ব মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে আরও অনেক বড় বড় ভবনের নকশা প্রণয়ন করে গেছেন। ইস্পাত ও পাথরের নবতর কাঠামাে ব্যবস্থার সাহায্যে তিনি এসব ভবনের নকশা ও নির্মাণ কাজ সম্পাদন করেন। তিনি তাঁর সৃজনশীল প্রকৌশল কর্মের মধ্য দিয়ে তৈরি করে দিয়ে গেছেন প্রকৌশলের এক নয়া জগত।
ফজলুর রহমান খান একদিকে ছিলেন শিক্ষক, অপরদিকে ছিলেন বার্তাবাহক। তিনি তাঁর ছাত্রদের মাঝে পৌছে দিয়ে গেছেন প্রকৌশলের যতােসব নয়া বার্তা। তাঁর কাছে তার ছাত্ররা ছিলাে ভবিষ্যতের আলাে : ‘দি লাইট অব দ্যা ফিউচার’। তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ অর্জনকে শিক্ষকতায় ব্যবহার করতে পেরে আনন্দিত হতেন। আকাশচুমী ভবন সম্পর্কিত তার জ্ঞান আর প্রজ্ঞা কালজয়ী বলে বিবেচিত। স্থাপত্য সম্পর্কে তার ধ্যান-ধারণায় রয়েছে দার্শনিক মাত্রা। এই দর্শন মানব সমাজের জন্যে এক গর্ব-গাঁথা। এই গর্ব-গাঁথা তাঁর তৈরি সুউচ্চ ভবনের মতােই অনেক অনেক উচু।
ফজলুর রহমান খান তাঁর পেশার মান আর অবস্থান উন্নয়নে রীতিমতাে ছিলেন ঈর্ষাপরায়ণ। তিনি স্থাপত্য ও প্রকৌশল বিষয়ে কমপক্ষে ৭৫টি লেখা প্রকাশ করে গেছেন। লেখা গুলাে সত্যিই অমূল্য। এগুলাে আধুনিক সভ্যতার জ্ঞান ভাণ্ডার। তিনি ছিলেন চিকাগাের ইলিনয়ে ইনস্টিটিউট অব টেকনােলজি’র এডজাঙ্কট প্রফেসর ।
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সাথে আমৃত্যু তিনি ছিলেন কাউন্সিল অব টল বিল্ডিং-এর চেয়ারমান। আমরা বাংলাদেশীরা সবাই তার জন্য গর্বিত।