Site icon Trickbd.com

[পর্ব ৩১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবু সাহাল আল কুহি:-অঙ্কনে ব্যবহৃত কম্পাসের উদ্ভাবক]

Unnamed


আসসালামু আলাইকুম

আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।

আমার আগের সব পর্ব:-
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫

ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬

[পর্ব ৭] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[নাসির আল দীন আল তুসি:-ত্রিকোণমিতির স্রষ্টা,জিজ-ইলখানি উপাত্তের উদ্ভাবক]

[পর্ব ৮] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবুল ওয়াফা:-ত্রিকোণমিতির মূল স্থপতি]

[পর্ব ৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবু মারওয়ান/ইবনে জহুর:-পরভূক জীবাণু বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা,পরীক্ষামূলক সার্জারির জনক, পরীক্ষামূলক শারীরবৃত্তীয়, মানুষের ব্যবচ্ছেদ, অটোপস এর অগ্রদূত]

[পর্ব ১০]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাওয়ার্দি:-বিশুদ্ধতম গণতন্ত্রের প্রবক্তা]

[পর্ব ১১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল জাজারি:-মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ]

[পর্ব১২]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবুল কাসিম আল জাহারাবী:-অপারেটিভ/আধুনিক সার্জারীর জনক]

[পর্ব১৩]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আব্বাস ইবনে ফিরনাস:-বিমানের জনক,প্রথম যিনি উড়েছিলেন আকাশে]

[পর্ব ১৪]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল-কিন্দি:-ফার্মাকোলজির অগ্রদূত, পেরিপ্যাটেটিক দর্শনের জনক,সাংকেতিক বার্তার পাঠোদ্ধারকারী,সাইকোথেরাপি ও সংগীত থেরাপির অগ্রদূত]

[পর্ব ১৫]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ফাতিমা আল ফিহরি:-বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে নারী]

[পর্ব ১৬]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল-খৈয়াম:-বাইনমিয়েল থিওরেমের প্রথম আবিষ্কারক,এনালিটিক্যাল জ্যামিতির জনক]

পর্ব ১৭]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[জাকারিয়া আল রাযি:-আরবীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রাণপুরুষ]

[পর্ব ১৮]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল ফারাবি:-অ্যারিস্টটলের পর দর্শনের সেকেন্ড মাস্টার,পদার্থ বিজ্ঞানে শূন্যের অবস্থান নির্ণয়কারী]

[পর্ব ১৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল জারকালি:-সূর্যের সর্বোচ্চ উচ্চতার গতি প্রমাণকারী]

[পর্ব ২০] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আলী ইবনুল-আব্বাস আল-মাজুসী:-ধাত্রীবিদ্যা এবং পেরিনেটোলজি এর অগ্রদূত]
[পর্ব ২১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে তোফায়েল:-প্রথম দার্শনিক উপন্যাস রচয়িতা]

[পর্ব ২২]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল বালখি:-যিনি সর্বপ্রথম দেহ ও আত্মা সম্পর্কিত রোগসমূহকে সফলভাবে আলোচনা করেছিলেন]

[পর্ব ২৩]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ছাবেত ইবনে কোরা:-স্টাটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা]

[পর্ব ২৪]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আবু কামিল:-এলজাব্রায় প্রথম উচ্চতর পাওয়ার ব্যবহারকারী]

[পর্ব ২৫]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আলী ইবনে সাহল রাব্বান আত তাবারী:-চিকিৎসা বিশ্বকোষ এর অগ্রদূত]

[পর্ব ২৬]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।

[পর্ব ২৭]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে ইউনুস:-ঘড়ির পেন্ডুলাম আবিষ্কারক]

[পর্ব ২৮]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাহানী]

[পর্ব ২৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে বাজা]

[পর্ব 30]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ফজলুর রহমান খান:-স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আইনস্টাইন,Father of tubular designs]

37.আবু সাহাল আল কুহি(অঙ্কনে ব্যবহৃত কম্পাসের উদ্ভাবক)

আল কুহি ছিলেন পার্সিয়ান একজন গণিতজ্ঞ , পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ।তার গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত অনেকগুলি লেখার জন্য তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ মুসলিম জ্যামিতিবিদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

আল কুহি ৯৪০ সালে ইরানের তাবারিস্তানের কুহি নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ গ্রামের নামানুসারে তিনি ইতিহাসে আল-কুহি নামে পরিচিত।তার পুরো নাম আবু সহল ওয়াইজান ইবনে রুস্তম আল-কুহি।

তার নামের সঙ্গে ‘রুস্তম’ শব্দটি ইঙ্গিত করছে যে, তিনি পারস্যের বিখ্যাত বীর রুস্তমের বংশধর। তিনি ছিলেন গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তার গবেষণার মূল ক্ষেত্র ছিল জ্যামিতি।

সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তাকে সর্বোত্তম জ্যামিতজ্ঞ এবং ওমর খৈয়াম তাকে শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ হিসাবে বিবেচনা করতেন। কুহি তার রচনাবলীতে জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। পরবর্তীকালে তার জ্যামিতিক সমাধান দিকনির্দেশনা হিসাবে কাজ করে।

ইরানে বুয়েদীয় বংশের শাসন কায়েম হওয়ার সময় তিনি বড় হয়ে উঠছিলেন। বুয়েদীয় বংশ ৯৪৫ থেকে ১০৫৫ সাল পর্যন্ত পশ্চিম ইরান ও ইরাক শাসন করে। ৯৪৫ সালে আহমদ বুয়ে আব্বাসীয় বংশের রাজধানী বাগদাদ দখল করেন। ৯৪৯ থেকে ৯৪৩ সাল পর্যন্ত আদুদ আদ-দৌলার রাজত্বকালে বুয়েদীয় বংশের শাসন উন্নতির শীর্ষ শিখরে আরােহন করে। বাগদাদ থেকে তিনি ইরানের গােটা দক্ষিণাঞ্চল এবং বর্তমান ইরাকের অধিকাংশ শাসন করতেন। বিজ্ঞান ও শিল্পকলার বিরাট পৃষ্ঠপােষক আদুদ অদ-দৌলা বাগদাদে তার রাজদরবারে আল কুহি, আবুল ওয়াফা ও আল-সিজ্জিসহ বেশ কিছু গণিতজ্ঞকে ঠাই দিয়েছিলেন।

৯৬৯ সালে আদুদ আদ-দৌলা সিরাজে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন। ৯৬৯/৯৭০ সালে আল-কুহি, আল সিজ্জি এবং অন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সিরাজে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি পর্যবেক্ষণ করেন।

আদুদ অদ-দৌলার পুত্র শরাফ উদ-দৌলা ৯৮৩ সালে খলিফা হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখায় আল-কুহি বাগদাদের নতুন খলিফার জন্য কাজ করার সুযােগ পান। খলিফা শরাফ উদ-দৌলা জ্যোতির্বিজ্ঞানী আল-কুহিকে ৭টি গ্রহ পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন। এজন্য বাগদাদের রাজদরবারে আল-কুহির জন্য একটি মানমন্দির নির্মাণ করা হয়।

কুহির ডিজাইন অনুযায়ী মানমন্দিরের জন্য প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয় এবং ভবন নির্মাণ শেষ হলে সেখানে সেগুলাে স্থাপন করা হয়। আল-কুহিকে মানমন্দিরের পরিচালক হিসাবে নিয়ােগ দেয়া হয় এবং ৯৮৮ সালের জুনে আনুষ্ঠানিকভাবে মানমন্দির উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেশ ক’জন জ্যোতির্বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মধ্যে আবুল ওয়াফা ছিলেন অন্যতম। শরাফ উদ-দৌলার রাজদরবারে তাকেও নিয়ােগ দেয়া হয়েছিল। মানমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরেকজন যিনি উপস্থিত ছিলেন তিনি হলেন আবু ইসহাক আল-সাবি। আল-সাবি ছিলেন বাগদাদের দরবারের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন গণিতে আগ্রহী।

৯৮৮ সালে কুহি বাগদাদে শরাফ উদ-দৌলার প্রাসাদের বাগানে গ্রহ নক্ষত্র পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণকালে আরাে কয়েকজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী উপস্থিত ছিলেন। ৯৮৯ সালে শরাফ উদ-দৌলার মৃত্যু হলে বাগদাদের মানমন্দিরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বোয়িদ সাম্রাজ্য পতনের দিকে এগিয়ে যায়। অর্থনীতিতে মন্দা ভাব দেখা দেয় সেনাবাহিনীর বিদ্রোহ শাসকের জীবনকে দুবির্ষহ করে তােলে। গ্রহ নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে ভাটার টান লাগে।

আল-কুহি হলেন জ্যামিতির অঙ্কন প্রণালীতে ব্যবহৃত কম্পাসের উদ্ভাবক। ‘রিসালা ফিল বারকার আল-তাম’ (On the perfect Compass)-এ তিনি প্রথম কণিক কম্পাসের বর্ণনা দেন।

কুহি প্রথম এক পা বিশিষ্ট এ কম্পাসের সাহায্যে সরল রেখা, বৃত্ত,উপবৃত্ত ও কোণ অঙ্কন করেন। গ্রন্থটিতে তিনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরির কলাকৌশল ব্যক্ত করেন। তিনি অভিমত প্রকাশ করেন, যে কেউ সহজে এস্ট্রোল্যাব, সূর্যঘড়ি ও অনুরূপ যন্ত্রপাতি তৈরি করতে পারে।

আল-কুহি তার রিসালা ফিল বারকার আল-তাম’-এর একটি অংশে এস্ট্রোল্যাব নির্মাণের সমস্যাবলী নিয়েও আলােচনা করেছেন। তার উল্লেখিত বইটি দু’টি অংশে বিভক্ত। প্রথমাংশে রয়েছে চারটি অধ্যায় এবং দ্বিতীয়াংশে সাতটি। আল-কুহি তার গ্রন্থে মানচিত্র অঙ্কনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়েছেন।

আল কুহি গ্রীকদের উচ্চতর জ্যামিতিকে ইসলামী বিশ্বে পুনরুজ্জীবিত এবং চালু করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি জ্যামিতিতে দ্বিঘাত ও ঘন সমীকরণের সমাধান দিয়েছেন।

কুহি তার গ্রন্থে জ্যামিতিক সমস্যাগুলাের যে সমাধান দিয়েছেন সেগুলাের একটি সম্পর্কে নাসিরুদ্দিন আল-তুসি লিখেছেন, ‘To construct a sphere segment equal in volume to a given sphere segment and equal in area to a second sphere segment- a problem similar to but more diffficult than related problems solved by Archimedes- Al-Quhi constructed the two unknown lengths by intersecting an equilateral hyperbola with a parabola and rigorously discussed the conditions under which the problems is soluble.

অর্থাৎ কোনাে একটি নির্দিষ্ট বৃত্তাংশের সম পরিমাণ এবং দ্বিতীয় আরেকটি বৃত্তাংশের আয়তনের সমান একটি বৃত্তাংশ অঙ্কনের সমস্যা অভিন্ন। তবে আর্কিমিডিস সংশ্লিষ্ট সমস্যার যে সমাধান দিয়েছেন এ সমাধান ছিল তার চেয়ে আরাে কঠিন। আল- কুহি একটি অধিবৃত্তের সহায়তায় একটি সমকোণী পরাবৃত্ত দ্বিখণ্ডিত করার মাধ্যমে দু’টি অজ্ঞাত দৈর্ঘ্য অঙ্কন করেন এবং যেসব শর্তে এ সমস্যার সমাধান করেছেন সেগুলাে নিয়ে ব্যাপকভাবে আলােচনা করেছেন।

ইউক্লিডের এলিমেন্টস’, এপােলনিয়াসের ‘কনিক্স’ এবং আর্কিমিডিসের ‘অন দ্য স্ফিয়ার এন্ড সিলিন্ডার’-এর ফলাফল ব্যবহার করে উল্লেখিত এ জ্যামিতিক সমস্যার সমাধান বের করা ছিল একটি ক্লাসিক রীতি । আল-কুহি প্রমাণ করেছেন যে, কোনাে সমাধানের অস্তিত্ব থেকে থাকলে তার স্থানাঙ্ক থাকতে হবে। স্থানাঙ্কগুলাের অবস্থান হবে কোনাে নির্দিষ্ট অঙ্কিত আয়তাকার পরাবৃত্তের মধ্যে।

নিশ্চয়ই আল-কুহি আধুনিক শাব্দিক অর্থে তার গাণিতিক ধারণা প্রকাশ করেননি। বরং তিনি প্রাচীন গ্রীক গণিতের প্রচলিত ক্লাসিক্যাল জ্যামিতিতে তার ধারণা প্রকাশ করেছেন। কুহি তলের কোণ প্রবর্তন করেন। তাতে দেখানাে হয় যে, অধিবৃত্তের স্থানাঙ্কের মধ্যে তার সমাধান নিহিত। পরবর্তীতে দু’টি বক্র রেখা দ্বিখণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে চমৎকারভাবে এ সমস্যার সমাধান দেয়া হয়।

বর্ণনাত্মক জ্যামিতিক পদ্ধতির সদৃশ পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি গােলকে বৃত্ত অঙ্কন করেন। কুহি তার ‘রিসালা ফি কিসমত আল-জাবিয়ায় (On the Trisection of the Angle) একটি অধিবৃত্তের সহায়তায় একটি কোণকে ত্রিখণ্ডিত করার ইসলামী সমাধান দেন। গণিতজ্ঞ আল-সিজ্জি তার এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন।

কুহির ‘রিসালা ফি ইসতিখারাজ দিল আল-মুসাব্বা আল-মুতাসাবিল-আদলা’য় (On the construction of the Regular Heptagon) কোণ ত্রিখণ্ডিত করার অঙ্কন পদ্ধতি ছিল আর্কিমিডিসের চেয়ে বেশি গ্রহণযােগ্য। ১:২:৩ অনুপাতের একটি কোণের সহায়তায় তিনি একটি ত্রিভুজ অঙ্কন করেন। কুহি একটি অধিবৃত্ত ও পরাবৃত্ত দ্বিখণ্ডিত করে সমান প্যারামিটারে উল্লেখিত অনুপাতের বাহুগুলাে অঙ্কন করেন।

আল-সিজ্জি তার এ পদ্ধতি হুবহু অনুসরণ করেন। “রিসালা ফি আমল মুখামাস মুসাবিল আল-আদলা ফি মুরাব্বা মালুম’ (On the construction of an equilateral pentagon in a known square)-4 019-PR দু’টি কোণ দ্বিখণ্ডিত করার মধ্য দিয়ে কোনাে নির্দিষ্ট বর্গক্ষেত্রে একটি সমকোণী পঞ্চভুজ অঙ্কনের সমস্যা সমাধান করেন। এবার তিনি সহায়তা নেন দুটি অধিবৃত্তের। কুহি ইউক্লিডের এলিমেন্টসের প্রথম থেকে পঞ্চম অধ্যায়, ইউক্লিডের ডাটা এবং এপােলনিয়াসের কনিক্সের প্রথম থেকে তৃতীয় অধ্যায়ের অংশবিশেষের সহায়তায় পঞ্চভুজ অন্কনের সমাধান বের করেন। অধিবৃত্তের মূল ডাইরে্টরিজের ধর্ম প্রমাণ করায় কুহির এ অঙ্কন তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি স্বাধীনভাবে অধিবৃত্তের ডাইরেক্ট্রিজের ধর্ম উদ্ভাবন ও প্রমাণ করেন এবং এপােলনিয়াসের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে যান। “রিসালা ফি ইসতিখরাজ মিসাহাত আল-মুজাসসাম আল-মুকাফি’তে (On measuring the Parabolic Body) কুহি আর্কিমিডিসের চেয়ে সহজ ও স্পষ্ট সমাধান দিয়েছেন।

একটি বর্গক্ষেত্রে একটি পঞ্চভুজ অঙ্কন করা অসম্ভব হলেও দু’টি উপায়ে সমকোণী পঞ্চভুজ অঙ্কন করা যেতে পারে। প্রথম উপায়টি হলাে “দ্বিঘাত সমীকরণ’। নবম শতাব্দীতে আবু কামিল এ উপায়ে সমাধান করতেন। দ্বিতীয় উপায়টি হলাে ‘ঘন সমীকরণ। আল-কুহি দ্বিতীয় পন্থাটি অবলম্বন করেছিলেন। কুহির ‘রিসালা ফি ইসতিখরাজ মিসাহাত আল- মুজাসসাম আল-মুকাফি’ ১৯৪৮ সালে ভারতের হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া ওরিয়েন্টাল পাবলিশিং থেকে প্রকাশ করা হয়।

আল-কুহি এবং গণিতে আগ্রহী উচ্চ সরকারী কর্মচারী আবু ইসহাক আল সাবির মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। আল-কুহি ও আল-সাবির মধ্যে পত্র যােগাযােগ হতাে। তাদের মধ্যে ৬টি পত্র বিনিময় হলেও চারটির বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। গাণিতিক সমস্যা নিয়ে তাদের মধ্যে পত্র বিনিময় হয়। একটি পত্রে কুহি লিখেছিলেন, ‘মনে করাে একটি বৃত্ত এবং I ও m দু’টি পরস্পরছেদী সরল রেখা দেয়া হলাে। মনে করাে বৃত্তের কোনাে একটি বিন্দুতে । বিন্দুতে L-এর সঙ্গে টানজেন্ট মিলিত হলাে এবং m মিলিত হলাে M-এর সঙ্গে। তাহলে কিভাবে T বেছে নিলে TL: TM একটি নির্দিষ্ট অনুপাত হবে? পত্রগুলার মধ্যে একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এ পত্রে কুহি বিভিন্ন ফিগারের কেন্দ্রবিন্দু সংক্রান্ত ৬টি স্বতঃসিদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন। ৬টির মধ্যে পাঁচটির ফল সঠিক। তবে ষষ্ঠটির ভুল। এতে বলা হয়েছিল, একটি অর্ধবৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু 3:7 অনুপাতে একটি ব্যাসার্ধকে বিভক্ত করেছে। এ ভুল ফল থেকে আল-কুহি একই ভুল সিদ্ধান্তে পৌছান যে, i = 28, । তাতে একথা প্রমাণিত হচ্ছে শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞরাও ভুল করতে পারেন।

আল-কুহী গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধে বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। জ্যামিতির উপর তাঁর অনুরাগ বেশি ছিল। জ্যামিতির উপর তিনি প্রায় ৩০ টি গ্রন্থ রচনা করেন।
আর্কিমিডিস ও এপােলেনিয়াসের জ্যামিতিক সমস্যাবলীকে কেন্দ্র করেই তিনি তাঁর জ্যামিতিক গবেষণায় নিমগ্ন হন। এই গবেষণা থেকেই তৃতীয় ও চতুর্থ মাত্রা সমীকরণের সমাধানের সমস্যা দেখা দেয়। এর অনেকগুলােরই সমাধানে তিনি সাফল্য লাভ করেন এবং সমাধানের পদ্ধতি বের করেন। এর একটি হলাে কোন নির্দিষ্ট গােলকের কোন অংশের সমান- Volume অন্য একটি অংশ অঙ্কন করার পদ্ধতি। মারটনের মতে, আল-কুহীর জ্যামিতিই আরব জ্যামিতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।

১০০০ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।