আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।
আমার আগের সব পর্ব:-
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬
[পর্ব ২০] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আলী ইবনুল-আব্বাস আল-মাজুসী:-ধাত্রীবিদ্যা এবং পেরিনেটোলজি এর অগ্রদূত]
[পর্ব ২১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে তোফায়েল:-প্রথম দার্শনিক উপন্যাস রচয়িতা]
[পর্ব ২৬]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।
[পর্ব ২৮]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাহানী]
[পর্ব ২৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে বাজা]
আবদুর রহমান আল-সুফী ছিলেন একজন পার্সিয়ান জ্যোতির্বিদ। পশ্চিমাবিশ্বে তিনি Azophi বা Azophi Arabus হিসাবে পরিচিত। আল-সুফি ছিলেন নয়জন বিখ্যাত মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানের একজন।
আবদুর রহমান আল-সুফী ইরানের রায়(Rayy) শহরে ৯০৩ খ্রিস্টাব্দে।তার পুরো নাম আবুল হুসাইন আব্দুর রহমান ইবনে ওমর আল সুফি আল রাজি।তাঁর নাম থেকেই বোঝা যায় যে তিনি একজন সুফি মুসলিম ছিলেন।
তিনি পারস্যের ইসফাহানের বোয়িদ সাম্রাজ্যে থাকতেন।তখন বোয়িদ সাম্রাজ্যের আমির ছিলেন আজ- উদ-দৌলা।আল সুফি তার দরবারে রাজ-জ্যোতির্বিদ হিসেবে কাজ করতেন।
তিনি বুয়াইদের বাদশাহ ও অঙ্কশাস্ত্রবিদ বিজ্ঞানী আজদ্দৌলার বন্ধু ও শিক্ষক ছিলেন।
তার মূল কাজ ছিল গ্রীক জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত রচনা অনুবাদ ও প্রসারণে কাজ করা, বিশেষত টলেমির আলমাজেস্ট বইটি।
তিনি টলেমির তারকাদের তালিকায় বেশ কয়েকটি সংশোধন করেছেন এবং তার নিজস্ব উজ্জ্বলতা এবং magnitudes এর অনুমান করেছিলেন যা টলেমির ক্ষেত্রে প্রায়শই বিচ্যুত হয়েছিল, আল-সুফির magnitudes এর মাত্র ৫৫% টলেমির মতো ছিল।
তারা আরেকটি বড় অবদান ছিল Hellenistic জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বইগুলো আরবিতে অনুবাদ করার।যা তৈরি হয়েছিল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া।
আল-সুফি ইসফাহানে 32.7° অক্ষাংশে তার জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।তিনি লার্জ ম্যাগেলানিক মেঘকে(Large Magellanic Cloud) চিহ্নিত করেছিলেন, যা ইয়েমেন থেকে দৃশ্যমান, যদিও এটি ইস্পাহান থেকে নয়।
16 ম শতাব্দীতে ম্যাগেলানের(Magellan) সমুদ্রযাত্রা অবধি ইউরোপীয়রা এটি আগে দেখেনি।
এছাড়াও তিনিই প্রথম বলেছিলেন যে, সিরিয়াস(Sirius) নক্ষত্রের মাত্র একটিই রং।আকাশে কিন্তু বহু তারকা আছে যেগুলো কখনো সাদা মনে হয়,কখনো হলুদ মনে হয়,কখনো নীল মনে হয়।কিন্তু তাদের রঙে একিই।বায়ুমন্ডলের কারণে এদের রং এর পার্থক্য দেখা যায়।
টলেমি আলেকজান্দ্রিয়া থেকে sirius তারা দেখে বলেছিল যে এটি লালচে রং এর,সিনিকা রোম থেকে sirius তারা দেখে বলেছিল যে এটির রং একদম লাল,সিমিডিট এথেন্স থেকে sirius তারা দেখে বলেছিল যে এটি হলুদ রং এর।
আল সুফি দশম শতাব্দীতে বলে গেছেন যে,উজ্জ্বল তারকা Sirius(ALPHA CANIS MAJORIS) এর একটিই রং এবং এটি তার রং পরিবর্তন করে না।
তিনিই প্রথম 964 খ্রিস্টাব্দে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিটি(Andromeda Galaxy) পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।এটিকে তিনি একটি ছোট মেঘ(small cloud) হিসাবে বর্ণনা করেন।
এটিই মিল্কিওয়ে ব্যতীত প্রথম গ্যালাক্সি যা পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সির বাইরে যে আরও একটি গ্যালাক্সি আছে তার প্রথম বিজ্ঞানসম্মত রেকর্ড রয়েছে বল সুফির কিতাব আল-কাওাকিব বইতে।
আল-সুফির রচিত বিখ্যাত বই কিতাব আল-কাওয়াতিব আল-থাবিত আল-মুসাওয়ার(Book of Fixed Stars)যা তিনি ৯৬৪ সালে রচনা করেন এবং বইটি আজদৌলাকে উৎসর্গ করেন।যিনি তৎকালীন বুয়াইদ সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন।
বইটিতে পাঠ্য বর্ণনার পাশাপাশি অংকন দ্বারা বিস্তারিত ভাবে সবকিছু বর্ণনা করা হয়েছে।
এই বইটিতে আটচল্লিশটি নক্ষত্র চিত্র(Constellation:-কয়েকটি তারার মধ্যে সরলরেখার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাণী,প্রাগৌতিহাসিক চরিত্র অংকন) এবং তারা নিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে।Book of Fixed Stars বইয়ের মধ্যে আল-সুফি গ্রীক এবং আরবি নক্ষত্র এবং তারাগুলি তুলনা করেছেন একে অপরের সাথে সমান করার জন্য।
তিনি প্রতিটি নক্ষত্রের(Constellation) দুটি চিত্র অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।একটি তারাদের অভিমুখ দেখায় মহাজাগতিক গ্লোব(celestial globe) এর বাইরে থেকে এবং অন্যটি পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকানোর দৃষ্টিকোণ থেকে।
তিনি নক্ষত্রকে তাদের উজ্জ্বলতার ওপর তিনটি দলে বিভক্ত করেছেন:একুশটি উত্তরের নক্ষত্রমণ্ডল,বারো রাশিচক্র নক্ষত্রমন্ডল এবং পনেরটি দক্ষিণের নক্ষত্রমণ্ডল।
এই আটচল্লিশটি নক্ষত্রের প্রত্যেকটির জন্য আল-সুফি একটি তারার চার্ট তৈরি করেছিল।
পি.কে হিট্টি বলেছেন,
প্রাচীনতম সচিত্রিত পান্ডুলিপি (তারার মানচিত্র) হল আল-সুফির। (যেটি বর্তমানে রয়েছে লেনিনগ্রাদে)।
(History of the Arabs, London, 1970 edition, p. 420)
এছাড়াও পি.কে হিট্টি এই বইটিকে অবজারভেশনাল অ্যাস্ট্রোনমির এক মাস্টারপিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জর্জ সার্টন তার Introduction to the history of science(Vol. 1. Baltimore, 1927, p.666) বইতে বলেছেন:-
তাঁর (আল সুফি) মূল কাজ “Book of the Fixed Stars” (কিতাব আল-কাওয়াকিব আল-থাবিতা আল-মুসাওয়ার) চিত্র সহ চিত্রিত।মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে জোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ সম্বন্ধে যে তিনটি সর্বোৎকৃষ্ট পুস্তক আছে, তন্মধ্যে এটি একটি। অন্য দুইটির লেখক হলেন ইবনে ইউনুস ও পঞ্চদশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক উলুঘ বেগ।
বইটি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল এবং বর্তমানে অসংখ্য পাণ্ডুলিপি ও অনুবাদগুলিতে বইটি টিকে আছে।বইটির সবচেয়ে প্রাচীনতম পান্ডুলিপিটি 1009 খ্রিস্টাব্দের যা বোডলিয়ান লাইব্রেরিতে(Bodleian Library) রাখা আছেএবং এটি লেখকের ছেলের লেখা।ব্রিটিশ গ্রন্থাগারে বইটির ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটি অনুলিপি রয়েছে।বইটি আরো জানতে চাইলে দেখে আসুন উইকিপিডিয়াতে
আল সুফির Book of fixed star বইয়ে বর্ণিত কিছু Constellation:-
Constellation Andromeda
Constellation Taurus
constellation Sagittarius
Constellation Ophiuchus
Constellation Lepus
Constellation Gemini
আল-সুফি আরও লিখেছেন astrolabe নিয়ে। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, রাশিফল, নেভিগেশন, সার্ভিং, timekeeping, কিবলা,নামাজের সময় ইত্যাদির মতো বিভিন্ন অঞ্চলে 1000 টিরও বেশি বিষয়ের বর্ণনা দিয়েছেন।
৮৩ বছর বয়সে ৯৮৬ খৃস্টাব্দে এই মহান বিজ্ঞানী ইরানের ইস্পাহানে ইন্তেকাল করেন।
২০০৬ সাল থেকে ইরানের অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি (ASIAC) আল-সুফির স্মরণে একটি আন্তর্জাতিক Sufi Observing Competition অনুষ্ঠিত করে। প্রথম প্রতিযোগিতা ২০০৬ সালে উত্তর সিমানান প্রদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং দ্বিতীয়টি ২০০৮ সালের গ্রীষ্মে জাহেদানের নিকটে লাডিজে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ইরান ও ইরাক থেকে শতাধিক অংশগ্রহণকারী এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর গুগল ডুডল তাঁর ১১১৩ তম জন্মদিন স্মরণ করে।
চন্দ্র ক্রেটার Azophi এবং minor প্লেনেট 12621 Alsufi তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।