আশা করছি আপনারা সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।
আমার আগের সব পর্ব:-
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ১
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ২
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৩
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৪
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৫
ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।পর্ব ৬
[পর্ব ২০] ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আলী ইবনুল-আব্বাস আল-মাজুসী:-ধাত্রীবিদ্যা এবং পেরিনেটোলজি এর অগ্রদূত]
[পর্ব ২১]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে তোফায়েল:-প্রথম দার্শনিক উপন্যাস রচয়িতা]
[পর্ব ২৬]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।
[পর্ব ২৮]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল মাহানী]
[পর্ব ২৯]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[ইবনে বাজা]
[পর্ব ৩৩]ইতিহাসের সেরা কিছু মুসলিম বিজ্ঞানী আর তারা যে কারনে বিখ্যাত।[আল কারাজী]
40.হাবাশ আল-হাসিব আল-মারওয়াজী
আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ হাবাশ হাসিব মারওয়াজী ছিলেন উত্তর-পূর্ব ইরানী জ্যোতির্বিজ্ঞানী ,ভূগোলবিদ ও গণিতজ্ঞ।তার জন্মস্থান খোরাসানের মার্ভ এলাকায়।তিনি ছিলেন সর্বাধিক প্রভাবশালী মুসলিম জ্যোতির্বিদ।
যিনি প্রথমবারের মতো ত্রিকোণমিতিক অনুপাত যেমন:-sin, cosine, tangent এবং cotangent সম্পর্কে বর্ণনা করেন।
তিনি বাগদাদে সমৃদ্ধ হন এবং 869 পরে মারা যান।তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল-মা’মুন ও আল-মুত্তাসিমের অধীনে কাজ করেছিলেন ।
পরবর্তীতে ,তিনি সমরায় বসবাস এবং কাজ করতেন, যা ৮৩৮ সালে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের নতুন প্রশাসনিক রাজধানীতে পরিণত হয়েছিল।
হাবশার জীবনী সুনির্দিষ্টভাবে পাওয়া যায় না। ইবনে আল নাদিম (মৃত্যু: 995) উল্লেখ করেছেন,মামুনের সময়ে হাবশা সক্রিয় বিজ্ঞানী ছিলেন।ইবনে আল কিফতি আরও বলেছেন যে তিনি আল মুত্তাসিমের শাসনামলেও বেঁচে ছিলেন।
তিনি 825 থেকে 835 অবধি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তিনটি জ্যোতির্বিদ্যার সারণী(জিজ) সংকলন করেছেন।
প্রথমটি এখনও হিন্দু পদ্ধতিতে পাওয়া যায়।
দ্বিতীয়টি এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দ্বিতীয় সারণীটিকে “tested” টেবিল বলে।এটিই কেবলমাত্র বিদ্যমান যা চারটি ভিন্ন নামে পরিচিত al‐Zīj al‐Mumtaḥan, al‐Zīj al‐Maʾmūnī (কারণ এটি মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় Mumtaḥan গ্রুপের পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল),
al‐Zīj al‐Dimashqī al‐Zīj, al‐ʿArabī(কারণ এটি আরবি হিজরি ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে)
এই জিজটি প্রথম স্বতন্ত্রভাবে সংকলিত আরবি ভাষায় টলেমাইক জ্যোতির্বিদ্যার হ্যান্ডবুক যা সম্পূর্ণরূপে সংরক্ষিত রয়েছে।নিঃসন্দেহে, এটি তার প্রজন্মের অন্যতম প্রভাবশালী জাজ ছিল।
এই জিজের দুটি কপি বর্তমানেও পাওয়া যায়।একটি ইস্তাম্বুলে সংরক্ষিত, যার মূল পাঠ্যটি বেশ ভালভাবে সংরক্ষিত রয়েছে এবং দ্বিতীয়টি বার্লিনে।
তৃতীয়টি, যাকে শাহ টেবিল বলা হয়, এটি ছোট।
829 সালে সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত গবেষণা করে,,হাবাশ আমাদের প্রথম উদাহরণ দেয় উচ্চতা দ্বারা সময় নির্ধারণের(determination of time by an altitude) (এই ক্ষেত্রে, সূর্যের)।এটি একটি পদ্ধতি যা সাধারণত মুসলিম জ্যোতির্বিদরা গ্রহণ করেছিল।
আরবাশ জ্যোতির্বিদ্যার উপর বেশ কয়েকটি কাজ উৎসর্গ করেছিলেন।তিনি melon astrolabe নির্মাণ করেছিলেন।
830 সালে তিনি tangent এর একটি টেবিল সংকলন করেছেন যা মনে হয় এটির প্রথম দিকের।তিনি cotangentও প্রবর্তন করেছিলেন এবং এর জন্য প্রথম সারণী তৈরি করেছিলেন।
মক্কার(কিবলা) দিক নির্ধারণের জন্য আল মারওয়াজী একটি গ্রাফিকাল পদ্ধতি (একটি তথাকথিত analemma construction),যা মূল আকারে আর বিদ্যমান নেই,তবে তাঁর জিজে এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে।
আল-হাসিব বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করেছেন বাগদাদের Al-Shammisiyyah observatory তে এবং ভৌগলিক এবং জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত বহু মান বের করেছেন।
তিনি তার ফলাফলগুলি তার The Book of Bodies and Distances বইটিতে লিপিবদ্ধ করেন।যার মধ্যে কয়েকটি ফলাফলের মান নিচে বলা হলো:-
পৃথিবী
পৃথিবীর পরিধি : 32,444 কিমি(বর্তমানে 40,075 কিমি)
পৃথিবীর ব্যাস : 10323.201 কিমি(বর্তমানে 12,742 কিমি)
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ : 5161.609 কিমি(বর্তমানে 6371 কিমি)
চাঁদ
চাঁদের ব্যাস:3036.5 কিমি(বর্তমানে 3474.2 কিমি)
চাঁদের পরিধি: 9538.622 কিমি(বর্তমানে 10,921 কিমি)
চাঁদের নিকটতম দূরত্বের ব্যাসার্ধ:
215.208; 9,9 ( ষষ্ঠিক ) মাইল
চাঁদের নিকটতম দূরত্বের অর্ধ-পরিধি: 676,368; 28,45,25,43 (সেক্সেজিমাল) মাইল
চাঁদের সর্বাধিক দূরত্বের ব্যাসার্ধ : 205,800; 8,45 (সেক্সেজিমেল) মাইল
ব্যাস চাঁদের দূরতম দূরত্ব: 411,600.216 মাইল (662,406.338 কিমি)
চাঁদের সর্বাধিক দূরত্বের পরিধি: 1,293,600.916 মাইল (2,081,848.873 কিমি)
সূর্য
সূর্যের ব্যাস:56,777.6966 কিমি (বর্তমানে 1.3927 million কিমি)
সূর্যের পরিধি:178,444.189 কিমি(বর্তমানে 4.379 million কিমি)
সূর্যের কক্ষপথের ব্যাস:12,491,093.2 কিমি
সূর্যের কক্ষপথের পরিধি:39,256,038 কিমি
সূর্যের কক্ষপথ বরাবর এক ডিগ্রি :108,952.67 কিমি
সূর্যের কক্ষপথ বরাবর এক মিনিট:1817.405 কিমি
যদিও তার বের করা মানের সাথে বর্তমান মানের অনেক পার্থক্য রয়েছে।তবুও আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছরেরও আগে এতো নিখুত হিসাব করা সত্যিই অসম্ভব ছিল।
তবুও আল-মারওয়াজী এই অসম্ভব কে সম্ভব করেছিলেন।যদিও বর্তমান প্রজন্মের খুব কম মানুষই এই বিজ্ঞানীর নাম জানেন।
মঙ্গোলদের দ্বারা আব্বাসিয় রাজবংশের ধ্বংসের সাথে তার কাজের অনেকটাই হারিয়ে যায়।
তাঁর বেশ কয়েকটি কাজের মধ্যে যেগুলি আজ বেঁচে যায়নি,
সেগুলির মধ্যে রয়েছে standard planispheric astrolabe এর নির্মাণ,চন্দ্র ক্রিসেন্ট দৃশ্যমানতার পূর্বাভাস, construction of sundials এবং কিছু জ্যামিতিক সমস্যা নিয়ে গ্রন্থ, বাগদাদ ও দামেস্কে mumtaḥan গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে তাঁর দুটি সমালোচনামূলক প্রতিবেদনও হারিয়ে গেছে।